Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Corona

কম ঘুমচ্ছেন না তো? রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্ব দিতেই হবে ঘুমকে

কোভিডের ভয়ে মানসিক চাপ এত বেড়েছে যে, সামান্য সর্দি-জ্বর হলেই বরবাদ হচ্ছে রাতের ঘুম।

কম ঘুমে প্রভাব পড়ছে রোগ প্রতিরোধে। ছবি: শাটারস্টক

কম ঘুমে প্রভাব পড়ছে রোগ প্রতিরোধে। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ১২:১০
Share: Save:

ঘুম হল শরীরের নিজস্ব ওষুধ। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করে তোলে। শরীর তখন নিজেই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করে, সংক্রমণ ঠেকায়। রোগ ইতিমধ্যে হয়ে গেলে তাকে সারিয়ে তোলে চটপট। কিন্তু সমস্যা হল, সেই ওষুধটিকে এখন ঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কোভিডের ভয়ে মানসিক চাপ এত বেড়েছে যে, সামান্য সর্দি-জ্বর হলেই বরবাদ হচ্ছে রাতের ঘুম। ফলে হাজার ইমিউনিটি বুস্টার খাওয়া সত্ত্বেও রোগ সারতে চাইছে না। দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে।

"এই আবর্ত থেকে বেরোতে গেলে সব ভুলে আগে একটু ঘুমোতে হবে। মানুষ যদি বোঝেন যে এই পথেই আছে মুক্তি, কিছুটা অন্তত কাজ হবে।" জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। "

তাঁর কথায়, ''মানুষকে বুঝতে হবে যে, রোগ প্রতিরোধ শক্তির সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। শরীরে যখন কোনও বড় পরিবর্তন হয়, মানসিক চাপ বাড়ে, ঘুম কমে যায়, দুর্বল হয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রোগ সারতে চায় না। উল্টো দিকে যখন স্ট্রেস-টেনশন তত নেই, তখন অসুস্থ হলে কিন্তু ঘুম বাড়ে। কারণ শরীর জানে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গেলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। ঘুম যার অন্যতম মাধ্যম।"

আরও পড়ুন:করোনা আবহে গড়ে ওঠা নতুন অভ্যাসে অজান্তেই এই সব উপকার হচ্ছে, জানতেন!​

ঘুম ও শরীরের প্রতিরক্ষা

জীবাণু বা অন্য কোনও ক্ষতিকর বস্তু শরীরে ঢুকলে তৎপর হয়ে ওঠে শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শক্তি। কিছু যোদ্ধা পাঠায় তাকে ধবংস করতে। তার মধ্যে প্রধান হল টি সেল। দিনের পর দিন ঘুম না হলে টি সেলের গতি শ্লথ হয়ে যায়। তখন তার অজান্তেই সংক্রমণ ঢুকে পড়ে শরীরে। বিপদ বাড়ে প্রোটিন সাইটোকাইনের উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলেও। এই বস্তুটির কাজ হল কোষে কোষে বিপদের সঙ্কেত পৌঁছে দেওয়া, যাতে তারা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। সে কাজে ব্যাঘাত হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে অবাধে।

শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হল ফুটবল কোচের মতো। ভাল কোচ যেমন প্রথমার্ধের খেলা দেখে হাফ টাইমে বিপক্ষ টিমের শক্তি ও নিজের দলের দুর্বলতা বুঝে নতুন করে গেম প্ল্যান সাজান, সেও তাই। জীবাণুর বিরুদ্ধে সারাদিন যে লড়াই হয়েছে, কীভাবে তাকে আরও উন্নত করা যায়, সেই প্ল্যান সে ছকে নেয় ঘুমের সময়। তাকে সে সময় না দিলে লড়াই অনেক সময়েই জোরদার হয় না। অতএব ঘুম বিনা পথ নেই।

আরও পড়ুন: সারা ক্ষণ মুখে মাস্ক বাড়াচ্ছে ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা, কী করবেন​

কী ভাবে আসবে ঘুম

• ঘুম পাওয়া মাত্র ঘুমোতে হবে। ঘুম পাচ্ছে অথচ হাতের কাজ সেরে নিই বা সিনেমা শেষ হলে ঘুমোতে যাব, সে রকম করলে চলবে না।

• শুতে যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে মোবাইল বা টিভি দেখা বন্ধ করুন। মোবাইল বা টিভি থেকে যে নীল আলো বেরোয়, তার প্রভাবে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমে যেতে পারে।

• শুতে যাওয়ার ৬-৭ ঘণ্টা আগে থেকে চা-কফি-কোলা-ক্যাডবেরি খাবেন না। ক্যাফেইনের প্রভাবে ঘুম আরও কমে যেতে পারে।

ভাল ঘুমের ফলে দুশ্চিন্তা দূর হয়, কমে উদ্বেগ। ছবি: শাটারস্টক।

• মন হালকা করে শুতে যান। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন। জার্নালিং করলেও কাজ হয়। অর্থাৎ মনে যা আসছে লিখে ফেলুন। তারপর যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করুন ভুল ভাবনা। অনেকের এ রকম পরিস্থিতিতে কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হয়। দরকার হলে করতে পারেন।

• বিছানা যেন আরামদায়ক হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন। ঘরের তাপমাত্রাও যেন ঠিকঠাক থাকে। নিয়মিত সার্ভিসিং না হলে এসি না চালানোই ভাল এ সময়।

• শুতে যাওয়া ও সকালে ওঠার সময়ে খুব পরিবর্তন করবেন না।

• দুঃস্বপ্নকে খুব একটা গুরুত্ব দেবেন না। কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকুন।

• পরিশ্রম করুন। ব্যায়াম করুন। তাতে চিন্তা যেমন কমবে, ঘুমও ভাল হবে।

• রাত্রে হালকা খাবার খান, পেট কিছুটা খালি রেখে। তাতেও কিছু উপকার পাবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE