করোনা আবহে বাচ্চাদের জ্বর নিয়ে সতর্ক থাকুন। ছবি: শাটারস্টক
করোনা অতিমারির আবহে আমাদের সকলেরই ভয় উহান থেকে আসা ছোঁয়াচে এই ভাইরাল জ্বর নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-সহ তাবড় তাবড় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কিছু দিন আগেও জানিয়েছিলেন বাচ্চারা কোভিড ১৯ ভাইরাসের থেকে তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ। কিন্তু সার্স কোভ ২ ভাইরাসের সংস্পর্শে বাচ্চাদের মধ্যে কাওয়াসাকি ডিজিজ ও এরই মতো আর এক অসুখ এমআইএস- সি অর্থাৎ মাল্টিপল সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন এর প্রবণতা যথেষ্ট বেড়ে গিয়েছে।
প্রবল জ্বর আর শরীর জুড়ে লাল র্যাশ, এই ধরনের উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকরা মাল্টিপল সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন বা কাওয়াসাকি ডিজিজের কথা মাথায় রাখেন, জানালেন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের শিশু বিশেষজ্ঞ প্রভাস প্রসূন গিরি।
করোনা সংক্রমণের গতিবিধি নিয়ে এখনও বিভ্রান্ত চিকিৎসকরা। তবে করোনা আবহে বাচ্চাদের মধ্যে কাওয়াসাকি ডিজিজ এবং এমআইএস- সির ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোভিড ১৯ এর সংক্রমণ চরমে ওঠে মার্চ-এপ্রিল মাসে।
আরও পড়ুন: ফল বা সব্জি ধোওয়ার ক্ষেত্রে এখন কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
ইটালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন ইত্যাদি দেশে কোভিড ১৯-এর পাশাপাশি বাচ্চাদের মধ্যে কাওয়াসাকি এবং কাওয়াসাকির মতো অসুখ বাচ্চাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে চিকিৎসকরা বাচ্চাদের কোভিড টেস্ট করে দেখেন, বেশ কিছু বাচ্চার কোভিড পজিটিভ। করোনা নেগেটিভ বাচ্চাদের প্রায় সকলেই করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছিল। তার থেকেই এই সংক্রমণ।
প্রভাস প্রসূন গিরি জানালেন যে, “এর পরেই চিকিৎসকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, কোভিড ১৯-এর সঙ্গে সরাসরি কাওয়াসাকি ও কাওয়াসাকির মতো উপসর্গ যুক্ত অসুখের (অর্থাৎ এমআইএস- সি) সম্পর্ক আছে।”
কোভিডের সঙ্গে কাওয়াসাকি ও কাওয়াসাকির মতো উপসর্গ যুক্ত অসুখের সম্পর্ক আছে। ফাইল ছবি।
ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের আর এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রিয়ঙ্কর পাল জানালেন, “মূলত ঋতু পরিবর্তনের সময় কাওয়াসাকি ডিজিজের প্রবণতা বাড়তে দেখা যায়। তবে এ বারে এই সময়টায় কাওয়াসাকি নিয়ে আসা বাচ্চার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।” প্রিয়ঙ্কর বাবু জানালেন, গত ১০ বছরে কলকাতা শহরে কাওয়াসাকি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভেষজ ক্বাথ কী ভাবে খেতে হবে, উপকার বা অপকার কী কী
কোভিড ১৯-এর সঙ্গে কাওয়াসাকি এবং এমআইএস- সির একটা সম্পর্কের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন। করোনার বিরুদ্ধে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তারাই কাওয়াসাকি ও এমআইএস- সি অসুখ ডেকে আনে। টোকিয়োর রেড ক্রশ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ তোমিসাকু কাওয়াসাকি নামে এক চিকিৎসক প্রথম এই অসুখটি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তাঁর নামেই অসুখটির এই নাম দেওয়া হয়। এ বছরের ৫ জুন কাওয়াসাকি ৯৫ বছর বয়সে মারা যান। প্রভাস প্রসূন গিরি জানালেন, “এই অসুখের শুরুতে ১০২ ডিগ্রি বা তারও বেশি জ্বর হয়। তিন দিন বা তাঁরও বেশি সময় ধরে জ্বর চলতে থাকে। ঠোঁট ও চোখ টকটকে লাল হয়ে যায়। তবে চোখ থেকে পিচুটি বেরয় না। শরীরের বিভিন্ন অংশে লাল র্যাশ বেরোয়। যৌনাঙ্গেও র্যাশ বেরোতে পারে। ঠোঁট ও জিভ লাল হয়ে ফেটে যায়, ঘাড়ের গ্রন্থি ফুলে যায়, হাতের তালু ও পায়ের পাতা লাল হয়ে ফুলে গিয়ে ত্বক ফেটে ছাল ওঠে। এ ছাড়া পেটে ব্যথা, বমি ভাব, ডায়ারিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।”
আরও পড়ুন: কোভিডে সহায়ক চিকিৎসাতেই সুস্থতা, জেনে নিন কোনটা প্রয়োজন কোনটা নয়
প্রায় একই কথা জানিয়ে প্রিয়ঙ্কর পাল বলেন, “এই রকম উপসর্গ দেখে কিছু রক্ত পরীক্ষা করে অসুখটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। মূলত পাঁচ বছরের কম বয়সিদের কাওয়াসাকি রোগ হয় এবং তুলনামূলক ভাবে একটু বড় বাচ্চাদের মধ্যে (৮–১৫ বছর) এমআইএস- সি বেশি দেখা যায়।” প্রভাস প্রসূনবাবু জানালেন, “এমআইএস- সি কাওয়াসাকির থেকেও মারাত্মক। কাওয়াসাকি রোগে হার্টের ধমনিতে প্রদাহ হয়ে ফুলে উঠে ব্লকেজ হতে পারে। অন্য দিকে এমআইএস- সি অসুখে হার্ট, কিডনি, ফুসফুস-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়। হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। কাওয়াসাকি রোগে আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে ১০–১৫ জন শিশুকে ইন্টেনসিভ কেয়ারে রেখে (আইসিইউ) চিকিৎসা করতে হয়। অন্য দিকে এমআইএস- সি আক্রান্তদের ৬৫–৭৫ জন শিশুকে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রেখে চিকিৎসা করতে হয়। আসলে এই অসুখে বাচ্চাদের হার্টের পেশীগুলি আক্রান্ত হয়ে মায়োকার্ডাইটিস হয়। হৃদপিণ্ডের পাম্পিং রেট কমে গিয়ে হার্ট ফেলিওর হয়। এই অসুখে দ্রুত চিকিৎসা না করালে হার্ট ফেলিওর হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। কাওয়াসাকিতে হার্টের ধমনি আক্রান্ত হলেও হার্ট ফেলিওর হয় না বললেই চলে। তবে পরবর্তী কালে হার্টের সমস্যা থেকেই যায়। অ্যাসপিরিন ও ইন্টারভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজন হলে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় থাকা রোগীদের স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।”
এমআইএস-সি আক্রান্তদের মায়োকার্ডাইটিস হয়। ফাইল ছবি।
সবথেকে সমস্যার হল, এই অসুখ দু’টির নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও কিছুই জানা যায়নি। এই দু’টিই মূলত অটো ইমিউন ডিজিজ। তবে কোভিড ১৯-এর সঙ্গে যেহেতু অসুখের সরাসরি সম্পর্কের কথা জানা গিয়েছে, তাই এই পরিস্থিতিতে যে সব নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয় তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে দুই চিকিৎসকেরই একই অভিমত।
জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy