ভেষজ উপাদানে আস্থা রাখুন। ছবি: শাটারস্টক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভেষজ উপাদানের জুড়ি নেই। কোভিড ঠেকাতে আইসিএমআর ও আয়ুষ মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে অশ্বগন্ধা, পিপ্পলি, গুড়ুচি বা গুলঞ্চ ও যষ্টিমধুর উপর ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। অশ্বগন্ধা থেকে ভ্যাকসিন বানানোর চেষ্টা করছেন আইআইটি, দিল্লি ও জাপানের সায়েন্টিফিক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। তাঁরা অশ্বগন্ধায় উইথানোন বা ডবলিউআই-এন নামে এমন এক উপাদানের হদিস পেয়েছেন যা করোনা সংক্রমণের গতি রুদ্ধ করে দিতে পারে বলে প্রাথমিক গবেষণায় জানা গিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সংক্রমিত হওয়ার পর শরীরে একটি নির্দিষ্ট এনজাইম ও স্প্লিট প্রোটিন এমপিআরও-র হাত ধরে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। উইথানোন এই এমপিআরও-র গঠন দুর্বল করে দিতে পারে। অন্য উপাদানগুলি নিয়েও গবেষণার কাজ চলছে।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘এই সমস্ত উপাদান যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দি-কাশি-জ্বর ও ব্যথা কমায় তা প্রাচীনকাল থেকেই জানা ছিল। এদের জীবাণুনাশক গুণও আছে। আছে আরও নানা রকম গুণ, এই খবর উন্মোচিত হচ্ছে দিনে দিনে। তবে যদি কেউ এ সবের সঙ্গে ঘরোয়া কয়েকটি উপাদান, যেমন, কালমেঘ, চিরতা, তুলসি, আমলা ইত্যাদি যোগ করে খেতে পারেন, প্রচুর উপকার পাবেন।’’
আরও পড়ুন: করোনা আবহে ভিটামিন ডি-র অভাব হতে পারে বিপজ্জনক, কেন জানেন?
কালমেঘ পাতায় আছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ছবি: শাটারস্টক
কোনটা কীভাবে
• এক গ্লাস জল ফুটে উঠলে তাতে আধ চা-চামচ করে কালমেঘ, চিরতা, গুলঞ্চ, তুলসির বীজ ও যষ্টিমধু মিশিয়ে আঁচ কমিয়ে খানিকক্ষণ ফুটিয়ে নিন। তুলসির বীজ না পেলে ৬-৭টা তুলসি পাতা দিতে পারেন। ঠান্ডা করে ছেঁকে এক চামচ মধু মিশিয়ে খান। খাঁটি মধুরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে।
• সব উপাদান সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খালি পেটে খেলেও একই কাজ হবে।
আরও পড়ুন:চাই সুস্থ জীবন, কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে? কী বললেন চিকিৎসকেরা?
• করোনার দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম না এলে খেতে পারেন মুন মিল্ক। এক কাপ দুধ, সে গরুর হতে পারে, হতে পারে অ্যামন্ড বা নারকোলের দুধও। এটি কম তাপে গরম করুন, ফোটাবেন না। এবার তাতে আধ চামচ অশ্বগন্ধা মূলের গুঁড়ো ও দারুচিনির গুঁড়ো, সিকি চামচ আদার গুঁড়ো, এক চিমটি জায়ফল গুঁড়ো দিয়ে কম আঁচে ৫ মিনিট গরম করুন। তাতে মেশান এক চামচ ফুড গ্রেড নারকোল তেল ও এক চামচ মধু। ঘুমোতে যাওয়ার আগে খেয়ে নিন। তবে কোনও অসুখ থাকলে বা বয়স বেশি হলে আগে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
• এক আউন্স অশ্বগন্ধার গুঁড়ো হালকা করে ঘিয়ে ভেজে খেজুরের চিনি মিশিয়ে জলখাবারের ২০ মিনিট আগে খেতে পারেন। অশ্বগন্ধার গুঁড়ো ঘি বা মধুতে মিশিয়ে দুধ দিয়েও খাওয়া যায়। অশ্বগন্ধা, কলা ও দুধ মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
• পিপ্পলি হল এক ধরনের গোলমরিচ। ০.৫-১ গ্রাম পিপ্পলি গুঁড়ো জল বা দুধে মিশিয়ে দিনে দু-বার মূল খাবারের পর খেতে পারেন।
• আমলকি নানাভাবে খাওয়া যায়। কাঁচা আমলকি রস করে খেতে পারেন। আমলকির গুড়ো মধু মিশিয়ে খেলে ঋতু পরিবর্তনের সর্দি-কাশি একটু দূরে দূরেই থাকে। তুলসি পাতা ও আদার সঙ্গে জলে ফুটিয়ে ক্কাথ বানিয়েও খেতে পারেন। স্বাদ বাড়াতে একটু মধু মিশিয়ে নিলেই হবে।
তুলসি, যষ্টিমধু, অশ্বগন্ধার গুঁড়ো প্রতিটি উপাদানেরই হরেক গুণ। ছবি:শাটারস্টক
কোনটার কী উপকার
প্রতিটা উপাদানই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তার পাশাপাশি আরও অনেক গুণ আছে। যেমন-
• কালমেঘে আছে নানা রকম অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। আয়ুর্বেদ মতে, নিয়মিত খেলে শরীরে কফ ও পিত্তের মধ্যে সমতা থাকে। ফলে ঠান্ডা লাগা, ফ্লু, গলা-ফুসফুসে সংক্রমণের প্রকোপ কম থাকে। কমে প্রদাহের প্রবণতা।
• জ্বর ও হাঁপানির প্রকোপ কম রাখার প্রাকৃতিক ওষুধ হল গুলঞ্চ। কোভিডের কিছু উপসর্গ কমাতে পারে বলে জানা গেছে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতেও এর ভূমিকা আছে বলে জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু।
• হাঁপানির প্রকোপ কম রাখতে ও বুকের জমা কফ তুলতে চিরতা অদ্বিতীয়। তবে গর্ভাবস্থায় না খাওয়াই ভাল।
• নিয়মিত তুলসির বীজ খেলে বুকে কফ জমতে পারে না। এর ভাইরাসনাশক ক্ষমতা আছে।
• যষ্টিমধু খেলে গলা ব্যথা ও শুকনো কাশি কমে। সর্দি-কাশি ও বুকে কফ জমার প্রবণতা কম থাকে। প্রদাহ কমাতে ও সরাসরি জীবাণু নাশ করতেও এর ভূমিকা আছে।
আরও পড়ুন: বাইরে বেরলেও কমেনি ঝুঁকি, ‘নিউ নর্ম্যাল’-জীবনে কী করবেন, কী করবেন না
• নিয়মিত অশ্বগন্ধার মূল খেলে শক্তি-সামর্থ বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি প্রদাহের প্রবণতা কমে, কমে মানসিক চাপ-অবসাদ ও বয়সজনিত ক্ষয়-ক্ষতির হার। অশ্বগন্ধার জীবাণুনাশক গুণও আছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।
• গোলমরিচের মতো পিপ্পলিরও অনেক গুণ। এটি জীবাণুনাশক, সর্দি-কাশির প্রকোপ কমায়, কম থাকে হাঁপানি-ব্রঙ্কাইটিসের প্রকোপ। এটি খিদে ও হজম শক্তি বাড়ায়। অন্য কোনও ভেষজের সঙ্গে খেলে তার উপকারিতা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা না বলে খাওয়া ঠিক নয়। কারণ বেশি দিন খেলে পেট ব্যথা, বদহজম ও অ্যালার্জি হতে পারে।
তুলসি পাতা, আদার সঙ্গে জলে ফুটিয়ে আমলকির ক্কাথ বানিয়ে পান করতে পারেন। ছবি: শাটারস্টক
• আমলকি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। হজম ভাল হয়। হজমশক্তির সঙ্গেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্পর্ক আছে। বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়ে। প্রদাহের প্রবণতা কমে বলে কমে সংক্রমণজনিত রোগের জটিলতা। মূল খাবারের আগে আমলকির রস খেলে ভিটামিন সি-এর দৌলতে খাবারের পুষ্টি ভালভাবে শোষিত হয়।
আরও পড়ুন: করোনাকালে অটিস্টিকদের নিয়ে চিন্তা, হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করছে এই সব নেটওয়ার্ক
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy