Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
COVID 19

Covid Hero: খিদেকে হারিয়ে দেওয়ার লড়াইয়ে রণভেরীর তালে বাজছেন কিঙ্কিণী

‘কত জনকে খাওয়াবেন?’ এই সাদামাঠা প্রশ্নটাই সপরিবার কিঙ্কিণী আর তাঁর বন্ধুদের অনেক দূরে এনে ফেলেছে।

কিঙ্কিণী নন্দী।

কিঙ্কিণী নন্দী। নিজস্ব চিত্র

সুমন রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২১ ১০:১০
Share: Save:

‘‘গত বছর তখন সবে লকডাউন শুরু হয়েছে। আমার বর একদিন বাজারে গিয়েছে। গাছতলায় এক রিকশাচালকের সঙ্গে দেখা। লকডাউনে রোজগার বন্ধ। দেখেই মনে হয়েছিল, খাওয়া হয়নি সকাল থেকে,’’ কোভিড সংক্রমণ, প্রথম বারের লকডাউনের স্মৃতি হাতড়ে বলতে শুরু করলেন কিঙ্কিণী নন্দী। কথা এগোয়, ‘‘আমার বর ওঁকে বলেন, চলুন আমাদের বাড়ি। খেয়ে আসবেন আজ। তখনই পাশ থেকে আর এক জন প্রশ্ন ছুড়ে দেন, কত জনকে খাওয়াবেন দাদা? আমিও তো খাইনি।’’

‘কত জনকে খাওয়াবেন?’ এই সাদামাঠা প্রশ্নটাই সপরিবার কিঙ্কিণী আর তাঁর বন্ধুদের অনেক দূরে এনে ফেলেছে। ‘‘বাড়িতে ওই একটা কথা নিয়েই আমরা গোটা দিনটা আলোচনা করেছি। কত জনকে খাওয়ানোর ক্ষমতা আছে আমাদের? আমরাও তো সাধারণ মধ্যবিত্তই,’’ বলছেন তিনি। কিন্তু মাথার মধ্যে প্রশ্নটুকু জমিয়ে রেখেই থেমে যাননি তাঁরা। বরং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যত জনকে সম্ভব খাওয়াবেন। এবং বিনা পয়সাতেই। নিজেরাও যা খাবেন, অন্যদেরও তাই খাওয়াবেন।

এই সব ভেবে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন বাঁশদ্রোণীর এই বেসরকারি সংস্থার কর্মী। সঙ্গে দিয়ে দেন ফোন নম্বর। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরা যেন খাবার আর ওষুধের জন্য যোগাযোগ করেন। শর্ত একটাই— এ সবের দাম দিতে পারবেন না তাঁরা। খাবারই হোক, কিংবা ওষুধ— যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা বিনা পয়সাতেই পাবেন। ‘‘আমরা নিজেরা বাড়িতে যে দিন সাধারণ আলুসিদ্ধ-ভাত খেতাম, অন্যদেরও সেটাই দিতাম। যে দিন মাছ হত, তাও সকলকে দিতাম। কারও বাড়িতে ছোট শিশু থাকলে মাঝে মধ্যে কৌটোর দুধও দেওয়ার চেষ্টা করতাম,’’ বলছেন তিনি। এই কাজে পাশে থেকেছেন তাঁর বর। পাশে থেকেছেন বেশ কয়েক জন বন্ধুও। সবাই মিলে ২০০-র বেশি মানুষকেও কোনও কোনও খাবার পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা।

এ সব গত বছরের কথা। আর এ বছর? ‘‘এ বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে গেল। আগের বার তো তাও শুধু গরিব খেতে না পাওয়াদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি আমরা। এ বার তো বহু বাড়িতেই সকলে অসুস্থ। রান্না করার মতো কেউ নেই। ওষুধ কিনতে যাওয়ার কেউ নেই। তার মধ্যে একের পর এক পরিচিত মানুষের মৃত্যু সংবাদ!’’ বলছেন তিনি। গত বছর পরিযায়ী শ্রমিকদের দলবেঁধে ঘরে ফেরার ছবি, আর এ বছর একের পর এক মৃত্যু সংবাদ— এ দুটোই কিঙ্কিণীকে বাধ্য করেছে রান্না করা খাবার নিয়ে রাস্তায়-রাস্তায়, বাড়ি-বাড়ি ছুটে যেতে। নিউ আলিপুর থেকে গড়িয়া জলপোল— কখনও রিকশায়, কখনও বন্ধুর বাইকে, কখনও বা হেঁটেই পৌঁছে গিয়েছেন তিনি।

বৈষ্ণবঘাটার সুচিস্মিতা সেনগুপ্ত যেমন। সপরিবারে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিঙ্কিণীর রান্নাঘরের খাবার পরপর বেশ কয়েক দিন পৌঁছেছিল তাঁর অন্দরেও। ‘‘আমাদের তো অতটাও অনটনের সংসার নয়। কিঙ্কিণীকে জিজ্ঞাসা করলাম, এর দাম কত দেব? উনি বললেন, খাবারের দাম কত হয় কোনও দিন তো হিসেব করিনি কাকিমা। আপনি বরং সুস্থ হয়ে একদিন রেঁধে খাইয়ে দেবেন,’’ বলছেন সুচিস্মিতা।

এখন সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। কিঙ্কিণীর হেঁশেলে এখন আর অত জনের রান্না চাপে না। ‘‘সংক্রমণ কমছে। সকলের রোজগারের পথগুলি আবার খুলে গেলে ভাল। তা হলেই এ বারের মতো আমাদের ছুটি,’’ টেলিফোন রাখার আগে বললেন কিঙ্কিণী। ফোনের ও প্রান্ত থেকে স্পষ্ট টের পাওয়া গেল তাঁর স্বস্তির হাসি।

অন্য বিষয়গুলি:

Help coronavirus COVID 19 Volunteers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE