Advertisement
E-Paper

কোভিড ছড়ানোর মূলে বস্তি ও বহুতলে ফারাক নেই! কেন বলছেন ডাক্তারেরা?

বস্তি এলাকা কিংবা উচ্চবিত্ত মধ্য়বিত্তের আবাসন, নিয়ম ভাঙার এক আশ্চর্য প্রবণতা রয়েছে দুই জায়গাতেই, বলছেন চিকিৎসকরা

আবাসনে দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। ফাইল ছবি।

আবাসনে দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। ফাইল ছবি।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৭:৩৮
Share
Save

কোভিডের বাড়বাড়ন্তের মূলে বহুতল আবাসন ও তার বাসিন্দারা একা দায়ী না হলেও তাঁদের যে বড় ভূমিকা আছে, তা আজ প্রমাণিত। কিন্তু কেন? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত মানুষ যেখানে থাকেন, সেখানে তো উল্টোটাই হওয়ার কথা! কিন্তু তা যে হচ্ছে না, তা স্বচক্ষে দেখা যাচ্ছে।

হৃদরোগ বিশেষ়জ্ঞ কুণাল সরকার বলছেন, “হবে কী করে? বস্তি ও বহুতলে ফারাক কোথায়? একটা বস্তিতে যদি আড়াই কিমি ব্যাসার্ধের এলাকায় ১০ লাখ মানুষ থাকেন, বহুতলে ১০ হাজার স্কোয়্যার ফিটে থাকেন তিন হাজার মানুষ। বস্তির অলিগলি যতটা জীবাণু-কলুষিত, ঠিক ততটাই কলুষিত বহুতলের লিফট, কমন এরিয়া।’’

কুণালবাবুর ব্যাখ্যা, বস্তির মানুষেরা যদি পাড়ার দোকানে বা কলতলায় আড্ডা জমান, বহুতলে তা হলে আড্ডা জমে কমিউনিটি হলে। দু’ জায়গাতেই মানুষ বেলাগাম। আড্ডা ও পানাহারে অসুবিধা হয় বলে মাস্ক ঝোলে গলায়। স্থান সঙ্কুলান হয় না বলে মোটামুটি গায়ে গায়েই বসেন সবাই। তা তিনি শিক্ষিত হোন কি অশিক্ষিত, ধনী হোন কি দরিদ্র। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ বিশ্বাস করে যে আপনজনের থেকে, বন্ধুবান্ধবের থেকে রোগ ছড়ায় না। ধারণাটা ভুল। সংক্রমণ বেশি ছড়ায় ঘনিষ্ঠমহল থেকেই। কারণ তাঁদের সঙ্গেই মানুষ দূরত্ব না রেখে মেশেন, বেশি সময় কাটান। বাইরের লোকের সঙ্গে যে দু’-চার মিনিট কথা হয় কি হয় না, তাতে রোগ ছড়ানোর সুযোগ কম। কারণ সে ক্ষেত্রে মানুষ সচরাচর মাস্ক পরে, দূরত্ব রেখেই মেশেন। অনেক বহুতলে আবার কমন এলাকা, কমিউনিটি হল রোজ স্যানিটাইজ করা হয়। সেটা আর এক ধরনের ভুয়ো নিরাপত্তা দেয় বলে মানুষ আরও অসতর্ক হয়ে যান। ফলে বস্তি ও বহুতলে একইভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।”

বস্তি এলাকাতেও জটলা হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব মানার উপায় নেই বেশিরভাগ এলাকাতেই । ছবি: শাটারস্টক

স্যানিটাইজ মানে ভুয়ো নিরাপত্তা!

“অবশ্যই”, বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। “আবাসনে যদি এক বা একাধিক উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগী থাকেন, কাছাকাছি বসে তাঁদের সঙ্গে কথা বললে, বদ্ধ ঘরে বেশ খানিক ক্ষণ সময় কাটালে হাঁচি-কাশির দরকার নেই, তাঁদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে যে জীবাণু বেরোয়, বেরোয় কথা বলা ও হাসার সময়, সংক্রামিত করতে তাই যথেষ্ট। ঘরে বেশ কয়েক জন এ রকম মানুষ থাকলে সরাসরি সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি।’’

আরও পড়ুন: আপনার কেনা স্যানিটাইজারে আদৌ ভাইরাস মরছে তো? কী বলছেন চিকিৎসকরা​

তিনি উদাহরণ দেন, পার্লারে যেমন হয়, যন্ত্রপাতি-ঘর-চেয়ার-টেবিল, সব স্যানিটাইজ করা হল, কিন্তু যিনি চুল-দাড়ি কাটছেন বা ফেসিয়াল করছেন, তাঁরই সংক্রমণ রয়েছে। অর্থাৎ রোগীর সঙ্গে সময় কাটানোর পর ঘর স্যানিটাইজ করে যদি নিজেকে নিরাপদ ভাবেন, সেটা হল ভ্রান্ত নিরাপত্তাবোধ। একই ভাবে আবাসনে রোগী থাকলে, তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে পুরোপুরি আইসোলেশনে রাখতে না পারলে, লিফট-সিঁড়ি বা কমন এরিয়ায় ধোঁয়া উড়িয়ে কোনও লাভ নেই। সুবর্ণবাবুর কথায়, ‘‘স্যানিটাইজ করার পরমুহূর্তে তিনি যদি লিফটের বাটন টেপেন বা আপনার সঙ্গে লিফটের মধ্যে থাকেন বা সিঁড়ির হাতল ধরে আপনার সঙ্গে গল্প করতে করতে ওঠেন বা নামেন, ওই স্যানিটাইজেশনের কি কোনও মূল্য আছে! কার মধ্যে রোগ আছে আর কার নেই, তা তো দেখে সব সময় বোঝা যায় না। কাজেই সবার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা, মেলামেশা বন্ধ করাই হচ্ছে নিরাপদে থাকার একমাত্র পথ।”

আরও পড়ুন: বাজারচলতি ইউভি ডিভাইসে আদৌ করোনা ধ্বংস সম্ভব কি?

বিপদ আছে আরও

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন, “অধিকাংশ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তকে সামলানো খুব কঠিন। দিন-রাত গুগল সার্চ করে তাঁরা ধরে নেন যে সব জেনে বসে আছেন। ফলে কারও কথায় তাঁরা কান দেন না। একঘেয়ে লাগছে বলে হাওয়া খেতে বেরিয়ে পড়েন, বন্ধুবান্ধব ডেকে পার্টি করেন বা রেস্তরাঁয় চলে যান। তার পর যখন রোগ হয়, টেস্ট করালে জানাজানি হবে বলে টেস্ট করান না। এটা-সেটা করে উপসর্গ কমলে, ঘরে থাকার মেয়াদ ফুরোনর আগেই আবার বেরিয়ে পড়েন।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘নিয়ম ভাঙার এক আশ্চর্য প্রবণতা আছে তাঁদের। আছে নার্সিসিস্টিক মনোভাব। তাঁর কিছু হবে না বা তাঁর থেকে কারও কিছু হবে না ধরে বসে থাকেন তাঁরা। সাধারণ গরিব মানুষও নিয়ম ভাঙেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাঙেন পেটের দায়ে। তার পর বোঝালে মেনে চলার চেষ্টা করেন, যদিও সব সময় পেরে ওঠেন না।’’ ফলে শহরাঞ্চলে এই দু’ধরনের মানুষের থেকেই রোগ ছড়াচ্ছে হু হু করে। বোধের জগতে পরিবর্তন না এলে এর হাত থেকে মুক্তি নেই, যতই লকডাউন করা হোক না কেন, এমনটাই মনে করেন সুবর্ণবাবু।

আরও পড়ুন: মশার কামড়ে কি কোভিড হতে পারে?​

মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না অনেক আবাসনেই। ছবি: শাটারস্টক

লকডাউন কি তবে মূল্যহীন?

“এখন যা চলছে, সপ্তাহে দু’দিন লকডাউন, তা হল কানামামার মতো”, বললেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। “হাসপাতালের যা পরিস্থিতি, রোগীর সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়লে সামলানো যাবে না। অন্য দিকে আর্থ-সামাজিক কারণে পুরো লকডাউন করা যাচ্ছে না। কাজেই সপ্তাহে দু’দিন করে যতটুকু লাভ হয়।’’ তিনি জানান, ইজরায়েলে এ নিয়ে কাজ হয়েছে। দেখা গিয়েছে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও কমতে পারে। তবে আমার মতে, ছুটির দিনে মানুষ এমনিই কম বেরোন বলে কাজের দিনে করলে বেশি লাভ হতে পারে।

কমিউনিটি হলে আড্ডা জমছে অনেক আবাসনেই। ছবি: শাটারস্টক।

সুবর্ণ গোস্বামীর মত, “মানুষ সচেতন না হলে এ রকম লকডাউনে লাভ নেই। কারণ সাত দিনে যদি সংক্রমণের হার ৭ হয়, ৫ দিনে তা ৫ হবে, অঙ্কের এই নিয়ম ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে খাটে না।’’ তিনি জানান, বিভিন্ন স্টাডিতেও দেখা গিয়েছে, লকডাউনের আগের ও পরের দিন সংক্রমণের হার বাড়ে। কারণ আগের দিন মানুষ দোকান-বাজারে ভিড় করে রসদ সংগ্রহ করেন, পরের দিন হাওয়া খেতে বেরোন। ফলে দু’দিন বন্ধ থাকায় যতটা লাভ হয়, বাকি পাঁচ দিনের ভিড়ে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কি না তা বলা মুশকিল। সুবর্ণবাবুর কথায়: ‘‘কাজেই আগে যা বলেছি আবার বলছি, মানুষ সচেতন না হলে কিছু করেই কিছু হবে না। এ ব্যাপারে বস্তির মানুষ ও উচ্চবিত্ত মানুষের মধ্যে হরেদরে ফারাক খুব একটা নেই।”

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

coronavirus Corona COVID-19 Healthy Living Tips স্বাস্থ্য Health Infection করোনা কোভিড-১৯

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।