হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে মান্যতা দিল ‘হু’। ছবি: এএফপি।
এক বার বলা হল ‘না’। সপ্তাহ ঘুরতেই সেই 'না' হয়ে গেল ‘হ্যাঁ’। ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে এ বার অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে এই ওষুধকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে তা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ‘হু’। মানবশরীরে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হু। বুধবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে পুরোদস্তুর করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে বলে জানান হু-প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস।
সাংবাদিক সম্মলনে গেব্রিয়েসাস জানান, ‘‘গত সপ্তাহে কার্যকরী সমিতি মূলত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখেই সাময়িক ভাবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কারণ, এই ওষুধটি ব্যবহারের পর রোগীদের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু হার খতিয়ে দেখা গিয়েছে, আগের চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কোনও কারণ নেই। তাই আমরা আগের মতোই চিকিৎসা পদ্ধতি চালিয়ে যাচ্ছি।”
এর আগে করোনা রুখতে হু এই অ্যান্টি-ম্যালেরিয়ার ড্রাগ নিয়ে আপত্তি জানালেও তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। হু-র পর্যবেক্ষণকে কার্যত গুরুত্ব না-দিয়ে আইসিএমআর বলেছিল, ভারতে দীর্ঘ দিন ধরে ওই ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তেমন নেই। আইসিএমআর-এর ডিজি বলরাম ভার্গব জানিয়েছিলেন, ভারতে যে ভাবে করোনা প্রতিরোধ করতে ওই ওষুধের ব্যবহার চালু ছিল, তা তেমনই চালু থাকবে। এতে ভয়ের কিছু নেই। শুধু খালি পেটে ওষুধটি খাওয়া চলবে না। বুধবার হু-প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাসের সাংবাদিক সম্মেলনেও শোনা গেল বলরাম ভার্গবের সুর। অর্থাৎ ভারত যে পথে এগোচ্ছে, সেই পথই যে করোনা-চিকিৎসার পথ, তাতে সম্মত হল ‘হু’-ও।
আরও পড়ুন: মাস্ক না ফেস শিল্ড, এখন বাইরে বেরলে কী পরলে আপনি বেশি নিরাপদ?
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে বেশ কিছুটা উপকারও পেয়েছে নানা দেশ।
কিন্তু কেন বারণ করেছিল হু? আদতে এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কী?
ক্লোরোকুইন ফসফেট ম্যালেরিয়া সারানোর ওষুধ। সিঙ্কোনা গাছ থেকে এর মূল উপাদান পাওয়া যায়। ক্লোরোকুইনের হাইড্রক্সিলেটেড সল্টকে বলে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। এটি কাজে বা গঠনগত দিক থেকে অনেকটাই আমাদের খুব পরিচিত অন্য আর এক অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ ক্লোরোকুইনেরই মতো। ম্যালেরিয়া ছাড়াও এটি অন্য কানেক্টিভ টিস্যু ডিসঅর্ডার যেমন লুপাস, রিউম্য়াটয়েড আর্থারাইটিস, জোগ্রেন সিন্ড্রোম ইত্যাদি রোগে এর ব্যবহার হয়।
এই ড্রাগের মাধ্যমে করোনা-চিকিৎসায় আমেরিকাতেও সাড়া মেলে। তার পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রনেতা করোনার চিকিত্সায় এই ওষুধের জন্য সওয়াল করলে ভারত আরও বেশি পরিমাণে এই ওষুধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তপ ‘হু’-এর নিষেধাজ্ঞায় সে সব উদ্যমে ভাটা পড়েছিল।
সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মতে, ‘‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের যে দিকটি হু-কে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলেছিল তা হল, এই ওষুধের প্রয়োগ সব শরীরের ক্ষেত্রে সমান ফলদায়ক নয়। হৃদরোগীদের একটা শ্রেণির ক্ষেত্রে এই ওষুধ ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’ নামের হৃদরোগ ডেকে আনে। সোরিয়াসিস, পরফাইরিয়া, লিভারের অসুখ, অ্যালকোহলিজম ইত্যাদি থাকলেও ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বড় ক্ষতি হতে পারে। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধের ব্যবহার হার্ট ব্লক পর্যন্ত করে দিতে পারে। এ সব ভেবেই ‘হু’ এই ওষুধকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দেয়।’’ ‘হু’-এর নির্ধারিত সবচেয়ে নিরাপদ ও প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় ম্যালেরিয়ার কুইনাইন নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার কারণেই ‘নিরাপদ’ হিসেবে ‘হু’ গণ্য করে না।
আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ করা হবে না: আইসিএমআর
কিন্তু এই ওষুধটি নিয়ে নিয়ত নানা গবেষণা চলছে। তাতে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত যে একে যতটা বিপজ্জনক বলে ভাবা হয়, এ ততটা ভয়াবহ নয়। বরং এতে মৃত্যুহার অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে। রোগীর সুস্থ হওয়ার হারও বাড়ছে। তাই নিজেদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরে এল বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy