Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
lymphocyte

করোনা ঠেকাতে নতুন আশা, সেরে ওঠা রোগীর রক্তের টি-সেলেই আস্থা গবেষকদের

শ্বেতকণিকার আর একটি কম্পোনেন্ট বি-লিম্ফোসাইটস বা বি-সেলও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নেয়।

ভুক্তভোগীর রক্তের টি-সেল থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: এপি।

ভুক্তভোগীর রক্তের টি-সেল থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: এপি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ১৫:০০
Share: Save:

দু’মাসের উপর লকডাউন করেও করোনার গতি থামানো যায়নি। না আবিষ্কার হয়েছে কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ না আছে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধী টিকা। তবে করোনা চিকিৎসায় আবারও কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন কোভিড-১৯ নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা।

মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে শ্বেতকণিকা। এই শ্বেতকণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেলের এক উল্লেখযোগ্য কম্পোনেন্ট টি-লিম্ফোসাইট বা টি-সেল। এই টি-সেল অস্থিমজ্জা বা বোন ম্যারো থেকে তৈরি হয়ে থাইমাস গ্রন্থিতে পরিপূর্ণতা পেয়ে যে কোনও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি থাকে। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা জেনেছেন যে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে টি-সেল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

শ্বেতকণিকার আর একটি কম্পোনেন্ট বি-লিম্ফোসাইটস বা বি-সেলও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নেয়। এই বি-সেল কোভিভ-১৯-এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে আটকে দেয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লা জোলা ইনস্টিটিউট অব ইমিউনোলজি’-র ‘সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ অ্যান্ড ভ্যাকসিন’-এর বিজ্ঞানী শেন ক্রোটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা মানুষের রক্তের টি-সেল করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। এর থেকে হয়তো এই সূত্র কাজে লাগিয়ে হয়তো আগামী দিনে কোভিড-১৯-এর কার্যকরী টিকা তৈরি করা সম্ভব হবে।

টি-লিম্ফোসাইট বাড়ানোর ওষুধ

মোহালির ইসার (আইআইএসইআর)-এর হিউম্যান প্যাথোজেনিক ভাইরাসের সংক্রমণজনিত অসুখের গবেষক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে যেমন টি-লিম্ফোসাইট সেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, তেমনই এর সংক্রমণ হলে শরীরে টি-লিম্ফোসাইটের পরিমাণ অত্যন্ত কমে যায়। এক জন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ১ মাইক্রোলিটার (০.০০১ মিলিলিটার) রক্তে ২-৪ হাজার টি-সেল থাকে। আর কোভিড আক্রান্তদের অনেকের ক্ষেত্রে তা কমে দাঁড়ায় ১২০০ -২০০। টি-সেলের সংখ্যা যে কমছে, এই তথ্যটিই বর্তমানে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বললেন ইন্দ্রনীলবাবু।

আরও একটা বিষয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। টি-সেল বাড়িয়ে গুরুতর অসুস্থ করোনাভাইরাসের রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে। ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন যে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ইন্টারলিউকিন-৬ বা আইএল -৬ ওষুধটি প্রয়োগ করে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে করোনায় আক্রান্ত হলেই এই ওষুধটি দেওয়া হয় না। যাঁদের এআরডিএস হয়েছে অর্থাৎ ফুসফুস গুরুতর ভাবে আক্রান্ত, তাঁদের ৬–৭ জনকে আইএল-৬ দিয়ে বিপদ কাটানো সম্ভব হয়েছে বললেন শ্যামাশিসবাবু।

দেখা গিয়েছে, রক্তে টি-সেলের মাত্রা বাড়াতে একটি বিশেষ মলিকিউল ইন্টারলিউকিন–৭ উল্লেখযোগ্য। করোনা আক্রান্ত রোগীদের উপর এই মলিকিউলযুক্ত ওষুধ ব্যবহার করে গুরুতর সংক্রমণ আটকানো যাচ্ছেও। আশা করা যায়, আগামী দিনে নভেল করোনার জটিলতা আটকে দিয়ে মৃত্যুহার থামিয়ে দিতে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। কিন্তু তত দিন পর্যন্ত আমাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Lymphocyte Blood Cell Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE