ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের হাতে এমন অনেক অস্ত্র আছে যার সাহায্যে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ইমিউনিটি বাড়িয়ে সুরক্ষিত রাখা যায়। ছবি: শাটারস্টক।
রোগমুক্তিতে এ বার ভারতীয় আয়ুর্বেদে আস্থা রাখার দিন এসেছে। অন্তত আয়ুষ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক দাবি সে কথাই বলছে। কোভিড মোকাবিলায় আয়ুর্বেদের ভূমিকাকে এড়িয়ে সমাধানসূত্রে পৌঁছতে চাইলে তা আরও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠবে বলেও দাবি করেছেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
করোনা রোগীদের উপসর্গ কমাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ওষুধের পাশাপাশি প্লাজমা থেরাপির ব্যবহারও করা হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) মন্ত্রক থেকে কোভিড রোধে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি, কোভিডের ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ ওষুধের সাহায্য নিলে সংক্রমণের দাপট অনেকাংশে আটকানো যায়।
ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রয়োগ করে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে বলে খবরে মিলেছে। ‘পাবমেড’ নামক মেডিক্যাল জার্নালে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণে মারাত্মক নিউমোনিয়া প্রতিরোধক ভেষজ উদ্ভিদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। চিনের চিকিৎসকরা বিশেষ কিছু ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস ও বাষ্পের সাহায্যে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা করে মারাত্মক নিউমোনিয়া আটকাতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: করোনার স্ট্রেস ঠেকাতে মদ্যপান? কী বিপদ ডেকে আনছেন জানেন?
ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ ভাইরাস মূলত শ্বাসনালীকে আক্রমণ করে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নয়। ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের হাতে এমন অনেক অস্ত্র আছে যার সাহায্যে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ইমিউনিটি বাড়িয়ে সুরক্ষিত রাখা যায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি, যে সব রোগীর কোভিড-১৯-এর তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গ নেই তাঁদের উপর আয়ুর্বেদ প্রয়োগ করে ভাইরাস মুক্ত করা অনেক সহজ। কেরাল, গোয়া ইত্যাদি রাজ্যেও ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পাত্রসায়ের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদ) সুমিত সুর আয়ুষ মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। তাঁর মতে, "আয়ুষ মন্ত্রকের প্রকাশিত নিয়মাবলি নতুন কিছু নয়। চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা, অষ্টাঙ্গ হৃদয়ের মতো প্রাচীন গ্রন্থে নিপুন বর্ণনা আছে। হাতের কাছে আমাদের অনেক শাক-সব্জি-ফল রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।''
ভারতীয় মশলাদের মধ্যেও রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
কেমন সে সব? সুমিতবাবু জানালেন তেমনই কিছু বিধান।
• প্রতি দিন গুলঞ্চ সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
• গরম জল খাদ্য হজমে সাহায্য় করে। তাই গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে সেই জল ঘন ঘন খেতে পারেন। ভিটামিন সি রয়েছে এমন ফলও বেশি করে খাওয়া উচিত।
• নিয়মিত অন্তত ১৫ মিনিট যোগ প্রাণায়াম করতে পারেন।
• রান্নাঘরের নিত্যব্যবহৃত ভেষজ যেমন: হলুদ, জিরা, ধনে, রসুন ইত্যাদি রাখুন মশলার তালিকায়।
• ক্রনিক গলার সমস্যা বা শুকনো কাশির ক্ষেত্রে দিনে এক বার পুদিনা পাতা বা আজওয়ান পাতার বাষ্প গ্রহণ।
• লবঙ্গ-চূর্ণকে মধু অথবা চিনির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দু’-তিন বার খাওয়া যেতে পারে।
• প্রতি দিন সকালে ১০ গ্রাম চ্যবনপ্রাশ খাওয়ায় উপকারী।
• তুলসি, দারচিনি, গোলমরিচ-চূর্ণ সমৃদ্ধ চা খেতে পারেন। স্বাদ বৃদ্ধিতে গুড় বা লেবু মেশানো যেতে পারে।
• আধ চামচ হলুদ গুঁড়ো ১৫০ মিলিলিটার উষ্ণ দুধে মিশিয়ে খেলেও ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমে।
আরও পড়ুন: মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার আর কত দিন? লকডাউনের এ সব অভ্যাস কি অসুখ ঠেকাবে?
আয়ুষ মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘দিনাচার্য’ ও ‘ঋতুচার্য’ নিয়ম মেনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকাংশে আটকানো যায়। ‘দিনাচার্য’ মানে, দৈনিক জীবন ধারণে কিছু পরিবর্তন আনা। যেমন, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কয়েকটি যোগব্যায়াম অভ্যাস, জলপান, পর্যাপ্ত ফল-সব্জি খাওয়া, মন ভাল রাখার পাশাপাশি কিছু গাছের নির্যাস খাওয়া।
‘ঋতুচার্য’-র অর্থ, ঋতু অনুযায়ী কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলা। আয়ুষের নির্ধারিত কিছু নিয়মগুলি প্রায় সবই সুমিতবাবুর দেওয়া বিধানের সঙ্গে মেলে। যেমন, সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু আসন ও প্রাণায়াম করা, গরম জল পান করা, জলে লেবু ও আদার রস মিশিয়ে পান করা, রান্নায় হলুদ, জিরে, আদা, রসুন, ধনে, গোলমরিচ, কালোজিরে ও দারচিনি ব্যবহার করা ইত্যাদি। এর সঙ্গে নারকেল তেল মুখে নিয়ে কুলকুচি করে ফেলে ফের গরম জলে কুলকুচি করে নিলেও মুখের মধ্যেকার ভাইরাস মরে বলে জানিয়েছে আষুষ মন্ত্রক।
এই সব নিয়ম মেনে চললে কোভিড-১৯-এর মারাত্মক সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায় বলে দাবি আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের। এ ছাড়াও কোভিডের প্রকোপে অসুস্থ হয়ে পড়লে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কয়েকটি ওষুধের সাহায্য নিয়ে রোগের বাড়বাড়ন্ত থামিয়ে দেওয়া সম্ভব বলেও তাঁদের মত।
তথ্য সহায়তা: সোমনাথ মণ্ডল, সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনীষা মুখোপাধ্যায়
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy