বাড়ির বয়স্কদের প্রতি থাকুক যত্নের নজর। ফাইল চিত্র।
বয়স বেশি হলে করোনার ছোবলের ভয় সবচেয়ে বেশি। প্রথমত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বয়স্ক মানুষদের ডায়াবিটিস, প্রেশারের মতো নানা সমস্যা থাকে। এর সঙ্গে যদি কোভিড আক্রমণের সামনে পড়তে হয় তবে শরীর একেবারেই নাজেহাল হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, এঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক কমে যায়। শরীর অচেনা প্যাথোজেনের সঙ্গে লড়তে পারে না। এই দুই মিলেই ঘটে বিপদ।
ফলে বয়স্ক মানুষদের জন্য বিশেষ কিছু সাবধানতার কথা প্রথম থেকেই বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। লকডাইন ও আইসোলেশনের রীতি এঁদের ক্ষেত্রে খুব কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। তাঁদের জন্য নিয়মের কড়াকড়িও সবচেয়ে বেশি। যাঁদের বাড়িতে বয়স্ক সদস্য আছেন, তাঁদেরও সে সব সাবধানতার দিকে বিশেষ নজর রেখে চলতে হবে।
একটানা বাড়িতে থাকতে থাকতে তাঁদেরও মনের উপর চাপ পড়ে। শুধু শরীরের বিষয়টিই নয়, তাঁদের মনের ক্ষেত্রটিতেও সমান যত্ন প্রয়োজন। মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘বিকেলের আড্ডা বা পাড়ায় ঘুরে আসা বন্ধ। চেনা মানুষজনকে দেখতে না পাওয়াও এই সময় তাঁদের মনে একই সঙ্গে বিরক্তি ও একঘেয়েমি তৈরি করছে। এ সব থেকে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। ট্রমা দানা বাঁধতে পারে। মনের জোর, মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লে কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। কেউ কেউ জীবন সম্পর্কেও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়তে পারেন। এই সময় তাই কিছু কৌশলে যেমন তাঁদের বাড়িতে বাস আনন্দদায়ক করে তুলতে হবে, তেমনই করোনা থেকে বাঁচাতে বিশেষ কিছু সতর্কতাও পালন করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: নিম্নচাপের আবহাওয়া কি করোনাকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলবে?
মাস্ক ব্যবহারে যেন ভুল না হয়।
শরীরের যত্নে খেয়াল রাখুন বেশ ক’টি নিয়ম
• বয়স্করা ওষুধপত্র সময়মতো খাচ্ছেন কি না দেখুন। প্রয়োজনে তাঁদের ওষুধের ডোজ বাড়া-কমা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
• হাড়ের সমস্যা না থাকলে বা চিকিৎসকের বারণ না থাকলে বয়স্কদের ছাদে হাঁটাহাঁটি বা জগিং করতে হবে। শরীর ও অসুখ বুঝে কিছু ব্যায়াম চিকিৎসার অঙ্গ হয়ে থাকে। তাই সে সব ব্যায়াম নিয়মিত করে যেতে হবে।
• ঘন ঘন হাত ধোওয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহার অবশ্যই জরুরি।
• ছাদে হাঁটতে বেরলে বা বাড়ির সামনে কোনও ফাঁকা জায়গায় গিয়ে রোদ পোহালেও মাস্ক পরুন বয়স্করা। গায়ে রোদ লাগানো খুবই জরুরি। তাই জানলা খুলে রোদ আসতে দিন বয়স্কদের ঘরে।
• খুব বেশি তাপমাত্রার ফারাক এঁরা সহ্য করতে পারেন না। তাই অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা, কোনওটাই যেন না লেগে যায় তা দেখতে হবে।
• গরম জলে স্নান করতে হবে বয়স্কদের। তাঁদের খাবার রান্নায় আদা-দারচিনি-হলুদের মতো মশলা— যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে সে সব ব্যবহার করুন। আদা, গোলমরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ, কাঁচা হলুদ ফুটিয়ে পানীয় তৈরি করে লেবু মিশিয়ে চায়ের মতো খাওয়াতে পারেন।
• হাতের কাছে রাখতে হবে তাঁদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপাদান ও চিকিৎসকের ফোন নম্বর। কোনও ক্রনিক অসুখ থাকলে তার চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না।
আরও পড়ুন: পেশী ও গাঁটে গাঁটে তীব্র ব্যথা? হতে পারে করোনার উপসর্গ
বাড়ির খুদে সদস্যটিকে এই ক’দিন বেশির ভাগ সময়টাই ছেড়ে দিন বাড়ির সবচেয়ে বড় মানুষটির কাছে।
মন ভাল রাখার উপায়
• যে সব বন্ধুবান্ধব ও সঙ্গীদের আড্ডা ছেড়ে তাঁরা ভাল নেই, তাঁদের সঙ্গে ফোনে বা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে কথা বলান। প্রয়োজনে অনেকে মিলে অনলাইনে আড্ডাও দিতে পারেন। বয়স্ক সদস্য প্রযুক্তি ব্যবহারে এতটা দক্ষ নাও হতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের সাহায্য করুন।
• ভাল বই পড়া, গান শোনা বা গাছেদের পরিচর্যা করার মধ্যেও বয়স্করা আনন্দ পান। সে সব উপাদানের যাতে অভাব না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে।
• বাড়ির খুদে সদস্যটিকে এই ক’দিন বেশির ভাগ সময়টাই ছেড়ে দিন বাড়ির সবচেয়ে বড় মানুষটির কাছে। এই দুইয়ের সঙ্গ দু’জনেরই মনের চাপ কমাবে। হু হু করে সময়ও কাটবে। বাড়িতে পোষ্য থাকলে তার সঙ্গেও সময় কাটাতে পারেন বয়স্ক মানুষটি। এতেও মন ভাল থাকবে।
• এমন কোনও কাজ করবেন না, যাতে বয়স্ক মানুষটি মনে দুঃখ পান। যেমন, সময় কাটানোর জন্য অনেক বয়স্ক মানুষই টিভি দেখেন। বয়স্ক মানুষটি তাঁর পছন্দের অনুষ্ঠান দেখার সময় টিভির চ্যানেল বদলে দেবেন না। এতে তিনি নিজেকে গুরুত্বহীন বলে ভাবতে পারেন। প্রয়োজনে নিজেদের পছন্দের অনুষ্ঠান মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে দেখুন।
• তাঁর খাওয়া-স্নান-ওষুধ খাওয়া এ সব কাজ যেন ঘড়ি ধরে সময়মতো হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে তিনি যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন না, তেমনই তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দেখে আনন্দ পাবেন।
• নিজেরাও অনেকটা সময় কাটান বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর শরীর ভাল থাকলে তাঁকেও হালকা কিছু কাজের দায়িত্ব দিন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy