বাতাসের বিষে বাড়ছে রোগের আশঙ্কা। ফাইল ছবি।
নভেল করোনার অতিমারির প্রকোপে কয়েকদিনের জন্যে হলেও বায়ুদূষণের সমস্যা কিছুটা কমেছিল। কিন্তু নিউ নর্মাল জীবন শুরু হতে না হতেই শুরু হয়েছে দূষণ।
সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে অ্যালার্জি, এমনকি হৃদরোগেরও অন্যতম কারণ দূষণ। সম্প্রতি ‘কারেন্ট সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, পরিবেশ দূষণের কারণে অন্য অসুখবিসুখের পাশাপাশি বাড়ছে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের গতি। এর অর্থ, রক্তবাহী ধমনীতে চর্বি জমে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া। ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট পুষ্পিতা মণ্ডলের কথায়, ‘‘স্বাভাবিক নিয়মে বয়স বাড়লে, ওজন বেশি হলে এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের ফলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হয় ঠিকই। কিন্তু দূষণ অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগ ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।’’
বিশ্বব্যাপী সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, প্রতি ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ২,৭৫০ জন মারা যান পরিবেশ দূষণজনিত নানা শারীরিক সমস্যায়। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে বাতাস, শব্দ-সহ অন্যান্য দূষণ মানুষ ও পরিবেশের অন্য প্রাণীদের উপর কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। গাড়ি ও কারখানার ধোঁয়ার পাশাপাশি বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত উনুন বা কেরোসিন স্টোভের ধোঁয়াও আমাদের হৃদপিণ্ড, ফুসফুস-সহ সামগ্রিক শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। ‘জার্নাল অব আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিয়োলজি’-তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, নাগাড়ে দূষিত পরিবেশে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই ১০০ জনের মধ্যে ৩ জনের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
আরও পড়ুন: পেটে ব্যথা, ঋতুস্রাবের সমস্যা, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড নয় তো?
মূল শত্রু সূক্ষ্ম ভাসমান কণা
বাতাসে ভাসমান পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম বা সূক্ষ্ম ভাসমান কণা) শারীরিক সমস্যার অন্যতম কারণ। কনসালট্যান্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশচন্দ্র মণ্ডলের কথায়, ‘‘গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়ার পাশাপাশি জ্বালানির ধোঁয়াতেও থাকে সূক্ষ্ম ভাসমান কণা। এগুলির মধ্যে অনেক ভাসমান কণা আছে যেগুলি অত্যন্ত ছোট্ট (২.৫ মাইক্রন)। বিপদ ডেকে আনে এরাই। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় এই ভাসমান কণাগুলি শ্বাসনালী দিয়ে সরাসরি শরীরে প্রবেশ করে। দূষিত বাতাসের মধ্যে দীর্ঘদিন থাকলে ১০০ জনের মধ্যে ১০ জনের হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। এঁদের আচমকা মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি।’’
আরও পড়ুন:সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও
তাঁর আরও বক্তব্য, পিএম ছাড়াও দূষিত বাতাসে থাকে নাইট্রোজেন, সালফার ও কার্বন মনো-অক্সাইড। এই রাসায়নিকগুলি মানুষের শরীরের রক্তবাহী ধমনীতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের গতি বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে ধমনীর ভিতরে ‘লাইনিং’-এর কার্যকারিতাকে নষ্ট করে। এর ফলে হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের ধমনীতে কোলেস্টেরলের প্রলেপ জমে। ফলে প্রাথমিক ভাবে শ্বাসকষ্ট-সহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। পরবর্তীকালে হৃদরোগ এবং ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। বাড়িতে কেরোসিন তোলের স্টোভে রান্না হলে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ।
দূষিত বাতাসে থাকে নাইট্রোজেন, সালফার ও কার্বন মনোঅক্সাইড
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে
অনেক ছবিতেই দেখা যায়, রেগে গিয়ে চিৎকার করতে করতে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঘটনাটা বাস্তবেও ঘটতে পারে। যাঁদের বাড়ির আশেপাশের বাতাস দূষিত, তাঁদের কোনও কারণ ছাড়াই রক্তচাপ বেড়ে যাবার ঝুঁকি থাকে। প্রকাশবাবুর মতে, ওই ঝুঁকি আরও বেশি থাকে সে সব এলাকায়, যেখানে বাতাসে ভাসমান কণার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের পাশাপাশি ব্রেন স্ট্রোক ও ফুসফুসের সমস্যাও বাড়িয়ে দেয়। ফলে দূষিত অঞ্চলে বসবাসকারীদের হৃদরোগ হলে ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর’-এর ঝুঁকিও বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশেষত, যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ এবং ইস্কিমিয়ায় আক্রান্ত।
আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?
বয়স্ক ও শিশুদের সমস্যাই বেশি
কলকাতা-সহ বড় বা মাঝারি শহরের বাতাসে ভাসমাণ কণা বেশি থাকে। তাই ছোটদের শ্বাসনালীর সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষত, যাঁরা বাড়ির একতলায় থাকেন, তাঁরা বেশি দূষণের শিকার হন। বয়স্কদের ঝুঁকি আরও বেশি। বেশি বয়সে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ায় বার বার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। বাড়ে হৃদরোগ এবং ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কাও।
লাউডস্পিকারের শব্দও ক্ষতিকর
পুজো-সহ যে কোনও উৎসবে তো বটেই, ইদানিং অটোর মধ্যেও তারস্বরে গান চালানো হয়। সেই শব্দদূষণ শরীর-মন দুয়ের জন্যই খারাপ। লাগাতার উঁচুমাত্রার শব্দ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রক্তচাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। হার্ট ফেলিওর এবং ইস্কিমিয়ার রোগীদের বিপন্নতা বাড়ে। কানেরও ক্ষতি হয়। অনেকেই বাড়িতে উচ্চগ্রামে টেলিভিশন চালান বা সাউন্ড সিস্টেম বাজান। সেই শব্দও ‘হার্ট ফ্রেন্ডলি’ নয় বলে অভিমত ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট পুষ্পিতার। মেজাজ চড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ, রক্তে শর্করা সবই বাড়িয়ে দেয় উচ্চস্বরের গানবাজনা বা সিরিয়ালের ঝগড়াঝাটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy