ছবি: ফাইল চিত্র
চিকিৎসকদের বিভিন্ন ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে নভেল করোনাভাইরাস এন কোভিড-১৯ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দেশেও এই সাংঘাতিক আরএনএ ভাইরাসের দাপট অব্যাহত। চিকিৎসকরা এখনও এই রোগের গতি প্রকৃতির সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারছেন না। আক্রান্তের সংখ্যা সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলতে চলেছে। অনেক জায়গায় স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালতে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি এই সংক্রামক অসুখটি এতটাই মারাত্মক? প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক মহলেই।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট অরিন্দম কর জানালেন, অত্যন্ত ছোঁয়াচে বলেই মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন দেশের রোগীর অবস্থা বিশ্লেষণ করে জানা গিয়েছে যে, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হাই ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাঁদের জন্যে এন কোভিড-১৯ মারাত্মক ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে রোগীর বয়স যদি ৬৫ বছরের বেশি হয় এবং তিনি যদি স্মোকার হন, তা হলে সংক্রমণ মারাত্মক হয়ে জীবনহানির ঝুঁকি অনেক বেশি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সম্প্রতি 'ল্যানসেট' নামক এক মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে, ৬৯ উত্তীর্ণ পুরুষ যাঁরা ধুমপায়ী এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও হাইব্লাড প্রেশারের শিকার, নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে তাঁদের মৃত্যুহার সব থেকে বেশি। চিনের উহানের এক হাসপাতালে ভর্তি থাকা ১৯১ জন আক্রান্তের উপর এক সমীক্ষা করা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে ১৩৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং ৫৪ জন মারা গিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ৭০ বছরের বেশি, এবং এঁদের হাই ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস ছিল।
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ে সাবধান হোন, তবে অযথা আতঙ্ক নয়, স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন
এ ছাড়া অনুসন্ধান করে আরও একটা বিষয়ে জানা গেছে যে, যাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাঁদের শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল গড়ে ২০ দিন। অন্যদিকে, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণে মৃতদের শরীরে ভাইরাস থেকে যায় আমৃত্যু। আর এই কারণেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিশেষ সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আসলে নভেল কোভিড -১৯ ভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং এই জীবাণু হাঁচি, কাসি, লালা ও সর্দির সাহায্যে বাতাস বাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তের ৬ ফিটের মধ্যে থাকলে সুস্থ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে আক্রান্ত মানুষটির হাঁচি, কাশি, নাক ঝাড়া থেকে বা তিনি নাকে মুখে হাত দিয়ে সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে এলে অন্যজনের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করে দ্রুত বংশ বিস্তার করে।
আরও পড়ুন: করোনা সতর্কতা: হাঁচি-কাশির সময় তালু নয়, মুখ ঢাকুন বাহু দিয়ে
শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ফুসফুস এবং ক্ষুদ্রান্ত্রকেও অ্যাটাক করে লাইনিং নষ্ট করে দেয়। এর পর একে একে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ করার ক্ষমতাও কমে যায়। সাধারণ ভাইরাল ফিভার ও সর্দি কাশির মতো উপসর্গ দিয়ে রোগের সূত্রপাত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই অসুখটা দ্রুত মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ব্যাপারটা ক্রমশ মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরের দিকে এগিয়ে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকে কোনও কাজ হয় না। কিছু কিছু অ্যান্টিভাইরাল দিয়ে চিকিৎসা হলেও সব সময় তা ফলপ্রসূ হয় না। আর এই কারণেই বিশ্ব জুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা 'প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর'-- এই আপ্তবাক্য মেনে চলার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন।
অরিন্দম কর জানালেন, আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের মতোই সাধারণ পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চললে কোভিড-১৯ ভাইরাসের হাত থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যাবে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আশা। সাবান দিয়ে রগড়ে হাত ধোয়া, মুখে চাপা দিয়ে হাঁচি-কাশি, বাইরে থেকে ফিরে পোশাক বদলে হাত-মুখ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া এ ক্ষেত্রে জরুরি। একই সঙ্গে ধূমপানের মতো অভ্যেস না ছাড়লে করোনা ভাইরাসের মারাত্মক দিক এড়ানো যাবে না। তাই সতর্ক হতে হবে। সাবধানতা ভাল, কিন্তু এখন যে ভাবে পরিস্থিতি গণ হিস্টিরিয়ার দিকে যাচ্ছে, তা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানানলেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট অরিন্দম কর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy