Advertisement
E-Paper

করোনা মোকাবিলায় মেডিক্যাল কলেজে প্লাজমা ব্যাঙ্ক, কতটা কাজ করবে এটি?

আরও কিছুদিন পর প্লাজমা থেরাপির সঠিক কার্যকারিতা বোঝা যাবে, বলে মনে করেন চিকিৎসক

প্লাজমা থেরাপিতে উপকার হচ্ছে, বলছেন চিকিৎকরা। ফাইল ছবি।

প্লাজমা থেরাপিতে উপকার হচ্ছে, বলছেন চিকিৎকরা। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ১১:৫৭
Share
Save

কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের গ্রাফ উপরের দিকে উঠছে ঠিকই তবে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুস্থতার হারও। ভাইরাসটির চরিত্রের কিছু নতুন নতুন দিক সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। তাই বদলে যাচ্ছে চিকিৎসার ধরন।

কোভিড আক্রান্তদের সেরে ওঠা মানুষের প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসা করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। কনভাসেলেন্ট প্লাজমার সাহায্যে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মাঝারি ধরনের উপসর্গ অনেকটাই সারিয়ে তোলা যায়। দিল্লির স্বাস্থ্য মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর তাঁকে কোভিড থেকে সেরে ওঠা সুস্থ মানুষের কনভাসেলেন্ট প্লাজমা দেওয়ার পর তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের কনভাসেলেন্ট প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে কিছু নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে দেয় আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)। এরপরই দিল্লির সরকারি হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি সায়েন্সেস-এ তৈরি করা হয় প্লাজমা ব্যাঙ্ক। দিল্লির পরেই কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তৈরি হয় কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের প্রথম প্লাজমা ব্যাঙ্ক।

ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাওয়া করোনা-মুক্ত মানুষের প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসা করে ১২ জন করোনা-মুক্ত হয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনোহেমাটোলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য জানালেন, জুলাই মাসের শুরুতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্লাজমা ব্যাঙ্ক গড়ে উঠলেও মে মাস থেকেই এই নিয়ে তাঁরা পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ শুরু করেন। আইসিএমআর-এর গাইডলাইন মেনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া গেছে। প্রসূনবাবু জানালেন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়– গুরুতর উপসর্গ, মাঝারি উপসর্গ এবং মাইল্ড অর্থাৎ অল্প উপসর্গ। এর মধ্যে যাঁরা মাঝারি উপসর্গের নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমিত অর্থাৎ যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে এবং শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ৯০%-এর মধ্যে আছে ও অক্সিজেন দিতে হচ্ছে তাঁদেরই প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: লকডাউনে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছেন পুরুষেরাও​

পরীক্ষামূলক ভাবে এই চিকিৎসা শুরু করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাঝারি উপসর্গের রোগীদের প্লাজমা দিয়ে তাঁদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা গেছে। তবে এখনই এই থেরাপি নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি, আরও কিছুদিন পর প্লাজমা থেরাপির সঠিক কার্যকারিতা বোঝা যাবে, বলে মনে করেন প্রসূন ভট্টাচার্য। প্লাজমা ব্যাঙ্কে কোভিডজয়ী রোগীর শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখা থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: খুলে যাচ্ছে জিম ও যোগকেন্দ্র, কী আছে কেন্দ্রের নির্দেশিকায়?​

প্রসূনবাবু জানালেন, যাঁদের রক্তের গ্রুপ এ, তাঁদের এ এবং এবি গ্রুপের দাতার প্লাজমা দেওয়া যায়, বি গ্রুপকে দেওয়া হয় বি এবং এবি, এবি গ্রুপের রোগীকে শুধুমাত্র এবি এবং ও গ্রুপের রোগীকে ও, এ, বি এবং এবি গ্রুপের রক্তের মানুষ প্লাজমা দিতে পারেন।

আরও পড়ুন: নিজে থেকে কোভিড টেস্ট করা কতটা জরুরি? কী বলছেন চিকিৎসকরা?

কারা প্লাজমা দান করতে পারবেন, সে বিষয়ে প্রসূনবাবু জানান,

· কোভিড-১৯ রোগী সেরে ওঠার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই তিনি প্লাজমা দিতে পারবেন।

· করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার ১৪ দিন থেকে ২৮ দিনের মধ্যে প্লাজমা দান করা যায়।

· দাতার বয়স ১৮–৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে গর্ভবতী মহিলা বা সদ্য মা যদি করোনা-মুক্ত হন, তাঁর প্লাজমা দেওয়া মানা।

· নভেল করোনা আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। বাড়িতে থাকা করোনা রোগী প্লাজমা দানের উপযুক্ত বলে বিবেচ্য নন।

· প্লাজমা দাতার ওজন কমপক্ষে ৫৫ কেজি হতে হবে এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হতে হবে ১২.৫ গ্রাম/ ডেসিলিটার।

কীভাবে প্লাজমা নেওয়া হয়

প্লাজমাফেরেসিস নামে এক বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে শরীর থেকে রক্ত টেনে নিয়ে প্লাজমা আলাদা করে রক্তের বাকি উপাদান (রক্তকণিকা ও অন্যান্য) শরীরে ফেরত পাঠানো হয়। সম্পূর্ণ পদ্ধতিটির জন্য সময় লাগে কম বেশি আধঘণ্টা। সংগৃহীত প্লাজমা একটি বিশেষ যন্ত্রে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক বছর সংরক্ষিত রাখা যায়। দরকার অনুযায়ী স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে রোগীকে দেওয়া হয়। প্লাজমা দানের ২৪–৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তা পূরণ হয়ে যায়।

বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। ছবি: শাটারস্টক

যাঁরা কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ থেকে সঠিক চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন, তাঁদের প্লাজমা দান করতে অনুরোধ করা হয়। অনেকেই প্লাজমা দিতে রাজি থাকেন বলে জানালেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত। তিনি জানালেন, কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীর প্লাজমায় সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকে। এই অ্যান্টিবডিই কোভিড আক্রান্তকে ভাইরাস-মুক্ত করতে পারে। তবে কোভিড অতিমারির সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নিয়ে এখনও শেষ কথা বলার সময় আসেনি, ভবিষ্যতেই জানা যাবে প্লাজমা থেরাপি সত্যিই কতটা কার্যকর, বললেন দেবকিশোরবাবু।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে বয়স্কদের মনে ভাঙন বেড়েছে, কী করবেন, কী করবেন না​

ইন্টারন্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তিনি ইতিমধ্যে তাঁর রোগীদের অনেককেই প্লাজমা থেরাপি দিয়েছেন। বিশেষ করে যে সব রোগীকে অন্য চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের জন্য প্লাজমা থেরাপি বেশ কার্যকর। ইতিমধ্যে তিনি তাঁর ১০ জন রোগীকে প্লাজমা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। এই প্রসঙ্গে শ্যামাশিসবাবু বলেন, আইসিএমআর কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত মাঝারি মাপের উপসর্গযুক্ত রোগীদের প্লাজমা চিকিৎসার যে ট্রায়াল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই নিয়ম মেনেই প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যৎই বলবে, কোভিড অতিমারির মোকাবিলায় প্লাজমা চিকিৎসা কতটা কার্যকর।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

কোভিড-১৯ করোনা Corona COVID-19 Plasma Bank Plasma Therapy প্লাজমা Immunity Healthy Living Tips

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।