Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
corona

মানসিক চাপে কমছে রোগপ্রতিরোধ শক্তি, কী করবেন, কী করবেন না

লাগাতার উদ্বেগ, ঘুম না হওয়া, ভুল খাবার খাওয়া ও অনিয়মিত জীবনযাপনের হাত ধরে ছোটখাটো যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ আগে থেকে ছিল, তাদের প্রকোপ বাড়বে

দ্রুত গতির যুগে মনের উপর চাপ বাড়ছে। ছবি: শাটারস্টক

দ্রুত গতির যুগে মনের উপর চাপ বাড়ছে। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ১৫:২৮
Share: Save:

যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি, তাতে মানসিক চাপ বাড়বে, এ আর বড় কথা কী! যতদিন না সমস্যা কিছুটা মিটছে, চাপ পুরোপুরি কমবে না, এটাও সত্যি। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও একটা বড় সত্যি হল, চাপের মধ্যে থেকেই খুঁজে নিতে হবে চাপমুক্তির পথ। না হলে করোনা আবহে লাগাতার উদ্বেগ, ঘুম না হওয়া, ভুল খাবার খাওয়া ও অনিয়মিত জীবনযাপনের হাত ধরে ছোটখাটো যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ আগে থেকে ছিল, তাদের প্রকোপ বাড়বে, মন আরও বিপর্যস্ত হবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে খুলে যাবে সব রকম সংক্রমণের দরজা, করোনা সংক্রমণেরও।

মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপা্যায়ের মত, "চাপকে চাপের মতো থাকতে দিন। নিজে সামান্য কয়েকটা নিয়ম মেনে চলুন, দেখবেন মূল সমস্যা না মিটলেও আপনার উপর তার প্রভাব কম পড়ছে।"

সমাধানের পথ

• রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। সাবধান হয়ে চলুন। বাকিটা আপনার হাতে নেই। শুধু প্রস্তুতি রেখে দিন, রোগ হলে কোথায় যাবেন, কী করবেন, তার। হয়তো কোথাও যেতে হবে না, বাড়িতেই সব মিটে যাবে ভালভাবে, কারণ ৯৭-৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সামান্য চিকিৎসাতেই রোগ সেরে যায়।

• বাস্তববাদী ও ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান। উদ্বেগপ্রবণ মানুষের সঙ্গ আপাতত এড়িয়ে চলুন।

• আগে যে সব কাজকর্ম করতেন, ভাল লাগুক না লাগুক, সে সব করুন। ব্যস্ত থাকলে মন কিছুটা হালকা থাকে।

• কিছু হবির চর্চা করতে পারলে ভাল।

• ৩০-৪০ মিনিট ব্যায়াম করুন। এতে মন যেমন ভাল হয়, বাড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

• ডিপ ব্রিদিং ও মন হালকা রাখার শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করুন । এতে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়বে। মন শান্ত থাকবে।

• মদের উপর নির্ভরশীল হবেন না। এতে অন্য অপকারের সঙ্গে উদ্বেগও বাড়বে।

• প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার খান।

• মানসিক চাপ কমাতে ভুলভাল খেতে শুরু করবেন না। এতে বিপদ বাড়বে।

আরও পড়ুন: যত বেশি ওজন, তত বেশি ঝুঁকি বাড়ছে কোভিডে, কী বলছেন চিকিৎসকেরা?​

স্ট্রেস ইটিংয়ে বিপদ বাড়ে

স্ট্রেস ইটিংয়ের সময় মানুষ সচরাচর খান ভাজাভুজি, মিষ্টি, চকলেট ইত্যাদি। অর্থাৎ ফ্যাট-চিনি-নুন ও সুগন্ধে ভরা প্রসেসড খাবার। এ সব খেলে ব্রেনের প্লেজার রিসেপটর ঝট করে উদ্দীপিত হয় বলে মন খারাপ কমে শুরু হয় ভাল লাগা। তবে তা ক্ষণস্থায়ী। কিছুক্ষণ পর আবার যখন খারাপ লাগা শুরু হয়, আবার শুরু হয় খাওয়া। এর আরও একটা বিপদ আছে। এই সব খেতে শুরু করলে পেট ভরে যাওয়ার যে রিসেপটর আছে, মস্তিষ্কে সে ঠিক ধরে উঠতে পারে না কী হচ্ছে। ফলে খাবার বন্ধ করার ঘণ্টা বাজে না সময়মতো। বেশি খাওয়া হয়ে যায়। ওজন বাড়ে। ফলে একদিকে যেমন এ সব খাবারের প্রভাবে সরাসরি প্রদাহের প্রবণতা বাড়ে, ওজন বাড়ার হাত ধরেও বাড়ে প্রদাহ। বেড়ে যায় সংক্রমণের আশঙ্কা।

বানান ফুড ডায়েরি

কাজেই এই অভ্যাস কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। কঠিন কিছু নয়। একটা ফুড ডায়েরি বানান। তাতে কখন কী খাচ্ছেন, কী পরিমাণে খাচ্ছেন, খাওয়ার আগে মনোভাব কী রকম ছিল, খাওয়ার পর কী হল, সব লিখুন তাতে। বুঝতে পারবেন, কোন পরিস্থিতিতে স্ট্রেস ইটিং করছেন। তখন সেই পরিস্থিতিটা অন্যভাবে ম্যানেজ করলেই ঝামেলা মিটে যাবে। যেমন--

• একঘেয়ে লাগলে কিছু না খেয়ে মিনিট দশেক শব্দজব্দ করুন। নতুন কোনও রান্না করতে পারেন। বা যা আপনার ভাল লাগে। খাওয়ার প্রাথমিক ঝোঁক কেটে যাবে।

• একা লাগলে বা মন খারাপ হলে কাছের কাউকে ফোন করুন।

• উদ্বেগ হলে, ভয় লাগলে পুরোপুরি ডুবে যেতে পারেন এমন কোনও কাজ করতে হবে। অনেকে কাপড় কাচেন, ঘর গুছান, কি ব্যায়াম করেন। আপনিও করে দেখতে পারেন। সৃষ্টিশীল কিছু করার অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই।

তবে সব সময় যে এভাবে সামলাতে পারবেন, এমন নয়। তখন উদ্বেগ কমাতে পারে যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর খাবা্র, তা অল্প করে নিয়ে খাবারের স্বাদ-গন্ধ উপভোগ করে ধীরেসুস্থে খান। যাকে বলে মাইন্ডফুল ইটিং। খাওয়ার আনন্দ পাবেন, উদ্বেগ কমবে, পুষ্টিও পাবে শরীর।

উদ্বেগ কমাতে তৈলাক্ত মাছ, ছানা, মাছ, ডিম এ জাতীয় খাবার খেতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

উদ্বেগ কমানোর খাবার

• ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ব্রাজিল নাট ও আমন্ড খান। ব্রাজিল নাটে আছে সেলেনিয়াম-ও। লাগাতার উদ্বেগে শরীরে যে প্রদাহ বাড়ে, তা কমায়। তবে দিনে ৩-৪টের বেশি নয়।

• ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কম খেলে মুড অফ বেশি হয়। কাজেই সপ্তাহে অন্তত দু-বার তৈলাক্ত মাছ খান। খান সয়াবিন, আখরোট, তিসির বীজ, শিয়া বীজ, কড লিভার অয়েল।

• ভিটামিন ডি-এর অভাব মেটাতে খান তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কড লিভার অয়েল। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে।

• মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে উদ্বেগ, অনিদ্রা কমায় ট্রিপ্টোফান। কাজেই চিকেন, ডিম, চিজ, মাছ, বাদাম, কুমড়ো বীজ, তিল, দুধ, কলা খান মাত্রা রেখে। কুমড়োর বীজে আছে পটাশিয়াম ও জিঙ্ক, মুড অফের মহৌষধ। কলার পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামও মাথা ঠান্ডা করে।

• দিনে ৪০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলে ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্রিপ্টোফান, ম্যাগনেশিয়ামের প্রভাবে মন ভাল থাকে। তবে তাতে কোকোর পরিমাণ যেন ৭০ শতাংশের বেশি থাকে।

• হলুদের কারকিউমিন প্রদাহ কমায়, মন শান্ত করে, বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

• চ্যামোলিন চা জীবাণুনাশক, প্রদাহ কমায়, মন হালকা করে। গ্রিন টি-ও তাই।

• টক দই ও ইয়োগার্টে আছে ল্যাক্টোব্যাসিলাস ও বাইফিডোব্যাকটেরিয়া জীবাণু। এরা পেটের পাশাপাশি মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে। প্রদাহ কমায় বলে মনও ভাল থাকে।

আরও পড়ুন: বুক ধড়ফড়? পা, গোড়ালি ফুলে যাচ্ছে? হার্টের ছন্দে গোলমাল নয় তো?​

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE