সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে আনলক পর্বেও। ফাইল ছবি।
কোভিড পরবর্তী সময়ে জীবন পালটে গিয়েছে পুরোপুরি। কেউ রোগের ভয়ে ঘর থেকে বেরচ্ছেন না। কাউকে আসতে দিচ্ছেন না বাড়িতে। পরিচারিকাদের ঢুকতে দিতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। ফলে পরিশ্রম বেশি হচ্ছে। ত্রিসীমানায় কোনও কোভিড রোগীর কথা কানে এলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার ভাবছেন কিছুই হবে না । দল বেঁধে বেড়াতে বেরিয়ে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞদের মত, এই দুটোর কোনওটাই চলবে না। আতঙ্কে গুটিয়ে থাকলে যেমন হবে না। সব কিছু বেশি হালকাভাবে নিলেও মুশকিল। চলতে হবে ভারসাম্য রেখে। মেলামেশা, আড্ডা, খাওয়া, বেড়ানো, ব্যায়াম, সবই চলবে। তবে নতুন নিয়মে।
আনলক ও নিউ নর্মাল জীবন
প্রথমে বিদেশের কয়েকটা খবর দেওয়া যাক। ২৪শে জানুয়ারি থেকে ৭ই এপ্রিল, মোট ৭৬ দিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে উহান। সবাই ভেবেছিলেন, একটা মহোৎসবই হবে। পথে-ঘাটে, সুপার মার্কেটে উপচে পড়বে ভিড়। টি বার ও কফিশপে জমবে আড্ডা। কিন্তু সে রকম কিছুই হল না। প্রায় ছ-মাসের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করা মানুষ নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে পা রাখলেন না। কম খাওয়া, ঘরে থাকা, দূরে দূরে থাকা মজ্জায় মিশে গেছে তাঁদের। তাঁরা বুঝেছেন, বাজার-হাট খুলে যাওয়া আর ভাইরাসের বিদায় নেওয়া এক নয়। তাই মুখোশে বাঁধা নাক-মুখ তাঁদের আলগা হল না একবারও। একবারও ছেদ পড়ল না হাত ধোওয়ার রুটিনে। মনে রাখতে হবে এই বিষয়গুলি।
আরও পড়ুন: করোনাকালে অটিস্টিকদের নিয়ে চিন্তা, হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করছে এই সব নেটওয়ার্ক
শুধু এক জায়গাতেই যা একটু ভিড় জমেছিল, একটু না, বেশিই ভিড়। কবরখানায়। কারণ টানা ৭৬ দিন মৃতদেহ সৎকারের ছাড়পত্র ছিল না। করোনা রোগীদের তো নয়ই, এমনি রোগীদেরও না। বাড়ির লোকেরা তাই ছোট ছোট দলে সেখানে হাজির হয়েছিলেন প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে। তখনও তাঁদের নাক-মুখ ঢাকা ছিল মুখোশে। গড়িয়ে পড়া চোখের জল মুছতে হাতের উলটো পিঠ নয়, ছিল রুমাল বা পেপার ন্যাপকিন। সান্ত্বনা দিতে কেউ কাউকে বুকে টেনে নেননি। বজায় ছিল ৬ ফুটের সামাজিক দূরত্ব।
আনলক পর্বে বিমান চালু হলেও এয়ারপোর্টেও রয়েছে সামাজিক দূরত্ব বিধি। ফাইল ছবি।
এবার দক্ষিণ কোরিয়া
কোনও দিন সেভাবে লকডাউনই করতে হয়নি তাঁদের। জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ প্রথম কোভিড রোগীর সন্ধান পাওয়ার পর গণহারে টেস্ট কিট বানানো চালু করে দেন তাঁরা। দেশ জুড়ে ৬০০টির বেশি টেস্টিং সেন্টার ও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দিনে এক লক্ষ করে কিট তৈরি করে সন্দেহভাজন প্রত্যেককে পরীক্ষা করে প্রয়োজন মতো চিকিৎসা, আইসোলেশন, কোয়রান্টিন করে তাঁরা রোগকে সীমা ছাড়াতে দেননি। ফেব্রুয়ারির শেষে অবশ্য আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় সবাইকেই কিছুদিন ঘরে থাকতে হয়েছিল। তবে তাঁরা সে বিপদও সামলে নেন দ্রুত। এই পথেই চলতে হবে এ দেশেও।
আরও পড়ুন: মাথা-ঘাড়ে অসহ্য ব্যথা? নার্ভের সমস্যা নয় তো? কীভাবে বুঝবেন
আসলে এ তাঁদের পুরোনো ভুল থেকে নেওয়া শিক্ষা। ২০১৫ সালে যখন সার্স কেড়ে নিয়েছিল ৩৬টি তাজা প্রাণ, তখনই তাঁরা বুঝেছিলেন, উপসর্গ হওয়ার পরে নয়, রোগ ধরতে হবে আগে, যখন সে শরীরে আত্মগোপন করে ডালপালা মেলছে।
তার মানে কি প্রতিটি মানুষকে পরীক্ষা করেছেন তাঁরা? না, সন্দেহভাজনদের করেছেন কেবল। একজনের শরীরে জীবাণু পাওয়া গেলে তাঁর ক্রেডিট কার্ডের নথি, জিপিএস রেকর্ড, সিকিউরিটি ক্যামেরা ফুটেজ খুঁজে কার কার সঙ্গে তিনি মিশেছেন তা বার করে তার পর তাঁদের পরীক্ষা করেছেন। এবার তাঁদের মধ্যে যাঁর যাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, একই ভাবে তাঁদের সূত্রে অন্যদের বার করেছেন খুঁজে। তার পাশাপাশি চলেছে সচেতনতার পাঠ। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক, হাত ধোওয়া, অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না বেরনো ইত্যাদি।
নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে নতুন জীবনে। দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসনকেও। ফাইল ছবি
শুধু নাগরিকদের শুভবুদ্ধির উপর ভরসা করেই যে তাঁরা বসেছিলেন, এমন নয়। ভাইরাস শরীরে নিয়ে বাইরে বেরলে বিরাট অঙ্কের জরিমানা ধার্য হয়েছিল। সঙ্গে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল যে, বাইরে পা রাখলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তাই এখন, সারা পৃথিবী যখন ত্রস্ত, দক্ষিণ কোরিয়ার রাস্তাঘাটে, অফিসে, কফি শপে, রেস্তরাঁয় দূরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক পরে, স্যানিটাইজার নিয়ে মানুষ দিব্যি উপভোগ করছেন জীবন। আশা করা যায়, 'নিউ নর্ম্যাল' জীবনে এ দেশও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
আমাদের কথা
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, "আনলক শুরু হল মানে আপনি মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে গেলেন, তা আর হওয়ার নয়। কারণ এই ভাইরাস যাওয়ার জন্য আসেনি। এইচআইভি, ডেঙ্গি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যেমন ঘুরে-ফিরে আসে, এ-ও তেমন। সময়ের সঙ্গে এর প্রকোপ হয়তো কমে যাবে। কমবে ধবংস করার ক্ষমতা। কিন্তু কবে কমবে, কতটা কমবে বা আদৌ কমবে কিনা, তা বলা খুব কঠিন। কাজেই এখন যেমন সাবধান হয়ে চলছেন, তেমনই থাকতে হবে তখনও। ভিড় বাসে-ট্রেনে-মেট্রোয় ওঠা যাবে না বলে হয়তো কেউ কেউ স্কুটি, বাইক, সাইকেল বা গাড়ি কেনার কথা ভাববেন। ক্লাব-পার্টি, রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া, চায়ের দোকানে আড্ডা মারা, গায়ে গায়ে বসে সিনেমা-থিয়েটার দেখা, দূর-দূরান্তে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভুলে থাকতে হবে আগামী কয়েক মাস বা বছর খানেক বছর দেড়েক । কাজ, তার পর ঘরে থাকা, মোটের উপর এই হবে জীবন।"
আরও পড়ুন: নাগাড়ে কাশি, স্বরে বদল ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে
এ কি কোনও জীবন! দুশ্চিন্তার ভার লাঘব করতে না পারলে মানুষ তো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে! কাজেই বেশির ভাগ মানুষকে আনলকে অভ্যস্ত হতেও সময় দিতে হবে।
শরীরচর্চা করতে হবে নিয়মিত। এতেই বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ছবি: শাটারস্টক
বেহিসেবি জীবনযাপনের ফলে রোগ বাড়ছে হু হু করে। কোথায় এর শেষ, কেউ জানে না। পাল্লা দিয়ে খারাপ হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য। কোন পথে আসবে এর সমাধান?
মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের মতে, "পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নেওয়া যাবে, তত তাড়াতাড়ি আসবে সমাধান। একাও যে ভাল থাকা যায়, তা শিখতে হবে। রাতারাতি হবে না। মাথা ঠান্ডা করে চেষ্টা করে গেলেই দেখবেন, এক সময় পারছেন মানিয়ে নিতে। কয়েকটি সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তার প্রথমেই আছে শরীরচর্চা। এতে আপনা থেকে শরীর-মন ভাল হয়ে যায়। তখন ভাল লাগার জায়গা গুলি খুঁজে বের করা সহজ হয়, হয়তো অনভ্যাসে যার কথা ভুলেই গেছেন। যেমন, বই পড়া, গান শোনা, সৃজনশীল বা সেবামূলক কিছু করা। নিজে খুঁজে না পেলে বিশেষজ্ঞের সাহায্যও নিতে পারেন।"
আরও পড়ুন: কোন ভেষজ চায়ের কী গুণ? কখন খাবেন, কীভাবে বানাবেন?
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy