Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
diet

মেদ ঝরানো, ব্যথা কমানো, কো-মর্বিডিটি ঠেকানো, এই সব ব্যায়ামেই কেল্লাফতে

পেশি যত মজবুত হয়, তত ক্যালোরি খরচের হার বাড়ে শরীরের৷ ফলে ওজন যেমন বশে থাকে, বশে থাকে ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, হাই কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভার, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি কোভিডের কো-মর্বিডিটি৷

নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বাড়ে অর্থাৎ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ে। ছবি: শাটারস্টক

নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বাড়ে অর্থাৎ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ে। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ১৪:২২
Share: Save:

নানা ধরনের ব্যায়াম হয়। অল্প হাঁটাহাটি থেকে শুরু করে যোগা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, ওয়েট লিফটিং, নাচ ইত্যাদি। প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট উপকার আছে। সব উপকার একসঙ্গে পেতে গেলে সব রকম ব্যায়াম মিলিয়ে–মিশিয়ে করতে হয়। যাঁরা টানটান পেশিবহুল শরীর পেতে চান, তাঁরা বেশি জোর দেন ওজন নিয়ে ব্যায়াম করার দিকে।

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মৌলিমাধব ঘটক জানিয়েছেন, এমনিও পেশির ক্ষয় ঠেকাতে গেলে ওজন নিয়ে ব্যায়াম করা দরকার। কারণ পেশি যত মজবুত হয়, তত ক্যালোরি খরচের হার বাড়ে শরীরের। ফলে ওজন যেমন বশে থাকে, বশে থাকে ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, হাই কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভার, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি কোভিডের কো-মর্বিডিটি।

দৈনিক হাঁটাহাটির পাশাপাশি হালকা ওজন নিয়েও ব্যায়াম করুন, বিশেষ করে কোভিডের এই মরসুমে। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে, ভাল ঘুম হবে, মানসিক চাপ কম থাকবে, এতেও কোভিডের আশঙ্কা ও প্রকোপ কম থাকবে, বলাই বাহুল্য। তবে তারজন্য যে জিমেই যেতে হবে এমন নয়, শরীরের ওজনকে ব্যবহার করেও ব্যায়াম করতে পারেন, যাকে বলে বডি ওয়েট ট্রেনিং।

আরও পড়ুন:করোনা আবহে টিকায় গাফিলতি, মাম্পসের সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে​

বডি ওয়েট ট্রেনিং

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ অশোক দাস জানিয়েছেন, বডি ওয়েট ট্রেনিংয়ের সুফল পেতে পর পর কয়েকটি ব্যায়াম করুন। যেমন ধরুন, ৫ মিনিট স্পট জগিং, স্টেপ জাম্প বা স্কিপিং করলেন কি একটু নাচলেন। তারপর স্কোয়াট, পুশ-আপ, প্ল্যাঙ্ক করলেন বা হিপ ব্রিজ, ক্রাঞ্চেস তো কখনও বেঞ্চ ডিপ, ওয়াকিং লাঞ্জেস, জাম্পিং জ্যাক, বক্স জাম্পিং করলেন। কীভাবে ব্যায়ামগুলি করতে হয় তা অভিজ্ঞ কারও কাছে শিখে নেবেন। নাহলে হাঁটু–কোমরে ব্যথা হতে পারে।

প্লাঙ্কেও মেলে উপকার। ছবি: শাটারস্টক

মৌলিমাধব বলেন, ‘‘ঘরোয়া কিছু কাজেও ওয়েট ট্রেনিংয়ের উপকার হয়, যেমন, বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটলে, দু–হাতে ভারী ব্যাগ বইলে, হাঁটু ঠিক থাকলে দু–একতলা সিঁড়ি ওঠানামা করলে, এমনকি জোরে হাঁটলেও কাজ হবে। তবে ঘরে ব্যায়াম করুন কি জিমে, শুরু করার আগে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে নেবেন, না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’’

আরও পড়ুন:রসুন কি রোজ খাওয়া উচিত? খেলে কী পরিমাণে, কীভাবে​

প্রস্তুতি

• ডাক্তারের কাছে জেনে নিন কোন ব্যায়াম করতে পারবেন আর কোনটা নয়। বিশেষ করে বয়স বেশি হলে, কোনও ওষুধ খেলে, অসুখ–বিসুখ বা চোটের ইতিহাস থাকলে।

• অল্প করে শুরু করে ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়ান। খেয়াল রাখুন শরীরের কোথাও ব্যথা–বেদনা হচ্ছে কি না। হলে থেমে যেতে হবে।

• মূল ব্যায়ামের আগে ভাল করে ওয়ার্মআপ করতে হবে। শরীর গরম করা যাকে বলে, যাতে পেশি একটু চনমনে হয়ে ওঠে। যেমন ৫–১০ মিনিট হাঁটা ও অল্প স্ট্রেচিং।

আরও পড়ুন:বিশ্বে আক্রান্ত ১৩৭ কোটি, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কি না কী ভাবে বুঝবেন​

জিমে ব্যায়াম করলে

কার্ডিও, স্ট্রেচিং ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিংয়ের মিশ্রণে সাজাতে হবে রুটিন। অশোক দাসের মত, ‘শরীরের প্রতিটি মূল পেশি, যেমন, পা, হিপ, পিঠ–কোমর, বুক, পেট, কাঁধ ও হাতের স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করা উচিত সপ্তাহে অন্তত দু–বার। কেউ সপ্তাহে ৩ দিন পুরো শরীরের ব্যায়াম করে পরের তিন দিন যোগা এবং কার্ডিও করতে বলেন। কেউ এক দিনের ব্যবধানে আপার বডি ও লোয়ার বডি ওয়ার্ক আউট করান। কেউ আবার একেকটা বর্ডি পার্টের ট্রেনিং করেন একেক দিন। ’

নিয়ম হল, যে বডি পার্টের স্ট্রেন্থ ট্রেনিং হবে, তাকে তারপর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। কারণ ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে পেশিতে যে চাপ পড়ে তাতে সূক্ষ্মভাবে টিস্যু ছিঁড়ে যায়। রিকভারি ফেজে সে সব জোড়ার ফলেই একদিকে নতুন পেশি তৈরি হয়, অন্য দিকে প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয়ে চর্বি গলতে শুরু করে। এ কাজে ৪৮ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। ব্যতিক্রম হল কোর এক্সারসাইজ, অর্থাৎ যে ব্যায়ামে শরীরের ভিতরের পেশি শক্তপোক্ত হয়, যেমন প্লাঙ্ক, পিলাটেজ, পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ, পুশ আউট, সুইস বল ক্রাঞ্চেস, ব্রিজ ইত্যাদি। এই সব ব্যায়াম রোজই করা ভাল।

ফিটনেসের চর্চা চলছে অনলাইনেও। ছবি: শাটারস্টক

ব্যায়ামের আগে-পরে

• ব্যায়ামের আগে চিনি ছাড়া কালো কফি খান। এনার্জি পাবেন বেশি।

• ব্যায়াম করার ঘণ্টাখানেক আগে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার খান অল্প করে। পেটভরে খেলে খাওয়ার ঘণ্টা তিনেক বাদে ব্যায়াম করবেন।

আরও পড়ুন:গ্রিন টি খেলেই রোগা? কখন, কতটা খাবেন, সঠিক চা বাছবেন কীভাবে

• ব্যায়াম শেষ করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্লুকোজ, কলা বা টাটকা ফলের রস খান। এর ১০–২০ মিনিট পর প্রোটিন ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার খাবেন। সবচেয়ে ভাল হয় ব্যায়াম শেষ করার ৪৫–৬০ মিনিটের মধ্যে খেয়ে নিলে।

• ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে দিনে বার ছয়েক খাবেন। প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার। রাতের খাবার খেয়ে নেবেন তাড়াতাড়ি।

• পর্যাপ্ত জল খেতে হবে দিনভর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE