কিডনির অসুখ বাড়ে কোভিডে। ফাইল চিত্র।
লকডাউন, গ্রীষ্ণ বা বর্ষা কোনও কিছুই কোভিড-১৯-কে জব্দ করতে পারেনি। এখন সুস্থ হওয়ার হার বাড়লেও ক্রনিক অসুখের রোগীদের শঙ্কা কমেনি একটুও। আমাদের দেশে ডায়াবিটিস ও হাই ব্লাড প্রেশারের কারণে ক্রনিক কিডনির অসুখের রোগীর সংখ্যা অনেক। এঁদের সঙ্গে যাঁরা কিডনির অসুখে ভুগছেন, তাঁদেরও বিশেষ সাবধানতা নেওয়া উচিত। কিডনির কাজ কমে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। তাই করোনার বিরুদ্ধে যথযথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
নেফ্রোলজিস্ট জয়ন্ত দত্তের মতে, “যাঁদের কিডনির কাজ একেবারেই কমে যায়, যাঁদের নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হয় তাঁদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার পাশাপাশি ডায়ালিসিসও চালিয়ে যেতে হবে। করোনার ভয়ে ডায়ালিসিস বন্ধ রাখলে সমস্যা বাড়বে।”
কিডনি আমাদের শরীরের রক্ত নানা দূষিত পদার্থ রক্ত থেকে ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দেয়। রক্ত পরিশোধন করার পাশাপাশি শরীরের পিএইচ ও জলের ভারসাম্য রক্ষা করা কিডনির অন্যতম কাজ। তাই কোনও ভাবে কিডনির কাজ ব্যহত হলে শরীরে নানান বিষাক্ত পদার্থ জমে অসুস্থতা বাড়ে। তাই কিডনির ক্রনিক অসুখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে ওষুধ ও সঠিক ডায়েট মেনে চলার পাশাপাশি হ্যান্ড হাইজিন ও মাস্ক ব্যবহার করা একান্ত আবশ্যক।
আরও পড়ুন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনা ঠেকাতে বড় ভূমিকা নেয় জিঙ্ক, কোন কোন খাবারে মিলবে তা?
ডায়াবিটিস আর ব্লাড প্রেশার থাকলে নিয়মিত চেক আপ করান
ক্রনিক কিডনি ডিজিজের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ আর ডায়বিটিস। তাই যাঁদের এই সব সমস্যা আছে, তাঁদের নিয়ম করে কিডনি চেক আপ করা উচিত। যেহেতু কিডনির অসুখের প্রাথমিক অবস্থায় সে রকম কোনও উল্লেখযোগ্য উপসর্গ থাকে না, তাই রোগ ধরা পড়তে দেরি হয়। তাই যাঁদের এই দুটি সমস্যা আছে তাঁদের বছরে এক বার রুটিন ইউরিন টেস্ট, ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। করোনার সময়ে রক্ত পরীক্ষা বা অন্যান্য চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে যেতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং বাড়ি ফেরার পর পোশাক বদলে সব কিছু স্যানিটাইজ করতে হবে।
কিডনির যত্নে কোনও ত্রুটি নয়।
কোন কোন উপসর্গে সাবধান হবেন
ক্রনিক কিডনির অসুখ আছে কি না তা বোঝা বেশ মুশকিল। এই সমস্যার সে রকম কোনও উপসর্গ থাকে না। বারে বারে প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবশ্যই ইউরিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এ ছাড়াও এই সব উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন।
• খিদে কমে যায়। বমি বমি ভাব থাকে। কখনও কখনও বমি হয়।
• অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, হাঁপিয়ে ওঠে, নিঃশ্বাসের কষ্ট হয়।
• ব্লাড প্রেশার ওঠানামা করতে পারে।
• একাধিক বার প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে। প্রস্রাবে জ্বালা ও ব্যথাও হতে পারে।
• সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখ, মুখ, পা ফোলা লাগে।
এই ধরণের সমস্যা হলে ইউরিন টেস্ট-সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা দরকার। কিডনির অসুখের পাঁচটি স্টেজ আছে। প্রথম চারটি স্টেজে ওষুধ ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করেই ভাল থাকা যায়। কিন্তু স্টেজ ৫ এ ডায়ালিসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় থাকে না।
আরও পড়ুন: খ্যাতি-বৈভব-গ্ল্যামারের মধ্যেও অবসাদের ছোবল! কেন মরেন সুশান্তরা...
কী করবেন, কী করবেন না
ক্রনিক কিডনির অসুখে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাবার খেতে হবে। বেশি নুন বা জলীয় খাবার খেলেও কিডনির ধকল বাড়ে। পা ও মুখে জল জমে ফুলে যায়। তাই কম নুন দিয়ে রান্না করা বাড়ির খাবার খেতে হবে। চানাচুর, চিপস, আচার ইত্যাদিতে প্রচুর নুন থাকে, এগুলি বাদ দেবেন। এ ছাড়া প্রানীজ প্রোটিন দুর্বল কিডনির উপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই মাছ, ডিম, চিকেন খেতে হবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট পরিমাপে।
করোনা আক্রান্তের কিডনি খারাপ হওয়ার শঙ্কা বেশি
নোভেল করোনাভাইরাসের চরিত্র সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই আমাদের অজানা। তবে দেখা গেছে যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ফুসফুসকে আক্রমণ করে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও কিডনির কোষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিডনির রক্তবাহী ধমনীতে রক্তের ডেলা আটকে যাওয়ায় শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কমে যায়। ফলে কিডনির কোষ এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিন, নিউ ইয়র্ক, ইতালি ও ফ্রান্সে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন. তাঁদের ৩০ শতাংশেরই কিডনি খারাপ হয়েছে। তাই কোভিড আক্রান্তদের বেলায় অসুখ সারার পর কিডনি বিশেষজ্ঞের পরমার্শ মেনে চলা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy