Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
covid-19

কোভিডে সুস্থ হওয়ার হার কেন বাড়ছে দেশে? ভাইরাসের ভয় এখনও কতটা?

আমরা বিপদ কাটিয়ে উঠতে চলেছি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

করোনায় সুস্থ হওয়ার হার বাড়লেও সাবধানতায় ঢিলেমি নয়। ছবি: এপি।

করোনায় সুস্থ হওয়ার হার বাড়লেও সাবধানতায় ঢিলেমি নয়। ছবি: এপি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ১৭:৩২
Share: Save:

দমন দিউ ও লাক্ষাদ্বীপ ছাড়া ভারতের অন্য সব রাজ্যেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কোভিড-১৯। দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই-সহ দেশের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণের হার লাফিয়ে বাড়লেও আশার কথা হল সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কিছু দিন আগেও সুস্থতার হার ছিল ৫০ শতাংশ। এই কদিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশের(৫৩.৭৯%) কাছাকাছি। নিঃসন্দেহে করোনামুক্তির এই বাড়তি হার সবাইকে স্বস্তি দিচ্ছে।

তা হলে কি আমরা বিপদ কাটিয়ে উঠতে চলেছি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, এ কথা ঠিক যে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার ক্রমশ বাড়ছে। একই সঙ্গে এও দেখতে হবে যে কত জন মানুষ দৈনিক আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রতি দিন কত জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ইউরোপের কিছু দেশের তুলনায় আমাদের দেশ অনেক ভাল অবস্থায় আছে। কিন্তু এখনই এই কথা বলার সময় আসেনি যে আমরা নিরাপদে আছি।" সুকুমার বাবুর কথায় এর মধ্যে ভয়েরও একটা বিষয় আছে। কোভিড রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুহারও কিন্তু বাড়ছে।

কয়েক সপ্তাহ আগেও আমাদের দেশে মৃত্যু হার ছিল ২.৮ শতাংশ। এই কয়েক দিনে তা বেড়ে হয়েছে ৩.৪ শতাংশ । আবার আমাদের রাজ্যে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশ। মারা যাচ্ছেন এমন রোগীদের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এদের বেশির ভাগের বয়স বেশি এবং হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখ-সহ অন্যান্য অসুখ আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে,যে সব কোভিড-১৯ আক্রান্ত সেরে উঠছেন, তাঁদের সংক্রমণ মাইল্ড বা মডারেট। যাঁদের সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি সেই সব রোগীদের সেরে ওঠার হার এখনও জানা যায়নি। তাই এখনও কোভিড-১৯-এর ছোঁয়াচ বাচিয়ে চলার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা মেনে চলাই বাঞ্ছনীয়।

আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে খাওয়া কতটা নিরাপদ?

কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার জানালেন, "সেরে ওঠা রোগীর সংখ্যার সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যার তুলনা করাটা চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী কতটা ঠিক সে নিয়ে একটা সংশয় থেকে যায়। কেননা আজ যাঁরা সুস্থ হচ্ছেন, তাঁরা ১৪ দিন বা তারও আগে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তাই এই তুলনা কার কতটা উপকারে লাগবে তা বোঝা মুশকিল। শুরুতে যখন প্রথম কোভিড-১৯-এর প্রকোপ শুরু হল, তখন কোভিড পজিটিভ হলে তাঁদের উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, হাসপাতালে ভর্তি করা হত। তাঁদের সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু গুরুতর অসুস্থদের মধ্যে কত জন সেরে উঠেছেন সেই পরিসংখ্যান জানা দরকার।" তবে কুণাল বাবুর মতে, একটা কথা ঠিক যে আমাদের দেশে মৃত্যুর হার বিশ্বের নিরিখে অনেক কম। এ দেশে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষে মৃত্যুর হার খুব বেশি হলে ১০ জন। সেই জায়গায় ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স-সহ ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হয়েছে প্রতি ১০ লক্ষে প্রায় ৪৫০-৫০০ জনের। সে দিক থেকে দেখতে গেলে অবশ্যই আমরা অনেকটা ভাল জায়গায় আছি।

টেস্টের পরিমাণ আরও বাড়লে রোগী নির্ণয় আরও সহজ হবে। ফাইল চিত্র।

এই ভাল থাকার কারণ হিসেবেও কয়েকটা বিষয় অনুমা করছেন অনেকেই। যেমন দেশে ব.স্ক মানুষের সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় কম, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেড়ে যাওয়া, গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা তৈরি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: পিরিয়ডের সমস্যা বাড়াচ্ছে করোনার উদ্বেগ, কী কী উপায়ে মিলবে সমাধান

এ দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের সংখ্যা ইতালি, স্পেন বা আমেরিকার থেকে অনেক কম। তবে কুণালবাবুর মতে, ইউরোপ আমেরিকার মৃত্যুহার বিচার করে ছদ্ম নিরাপত্তা বোধে না ভোগাই ভাল। কেননা আমাদের প্রতিবেশী দেশ চিন, কোরিয়া বা জাপানে কিন্তু কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর হার এ দেশের তুলনায় নগণ্য। তাই কোভিড-১৯-কে ভারতীয়রা জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে বা এত দ্রুত গোষ্ঠী অনাক্রম্যতায় এসে পৌঁছেছে দেশ, এমনটা ভাবার সময় এখনও আসেনি। তবে যে ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল তার থেকে হয়তো কিছুটা নিরাপদে আছে ভারতীয়রা।

তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাবধানের মার নেই। তাই মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রেখে, ভিড় এড়িয়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে এবং বারংবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে কোভিড-১৯-এর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Coronavirus Dearth Rate Herd Immunity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy