জিম চত্বরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ছবি: পিটিআই।
গোটা দেশে বুধবার থেকে জিম ও শরীরচর্চা কেন্দ্রগুলি খুলে যাচ্ছে। শর্তসাপেক্ষে মিলেছে অনুমতি। যদিও কন্টেনমেন্ট জোনে বন্ধ থাকছে জিম এবং যোগাভ্যাস সংস্থাগুলি।
কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকায় যা যা বলা হয়েছে
১. ৬৫ বছরের উপরে বয়স, কো মর্বিডিটি আছে, অন্তঃসত্ত্বা, ১০ বছরের কম বয়সি শিশুদের বদ্ধ জিম ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
২. জিম চত্বরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, শরীরচর্চার পদ্ধতি যিনি বুঝিয়ে দেবেন মাস্ক পরতে হবে তাঁকেও। তবে বাকিদের পক্ষে মাস্ক পরে শরীরচর্চা করলে শ্বাসকষ্টের সমস্যার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
৩. কোভিড ট্র্যাকার অ্যাপ বা আরোগ্য সেতু ব্যবহার করতে হবে।
৪. প্রতি ব্যক্তির জন্য চার মিটার জায়গা রাখতেই হবে। যন্ত্রপাতি রাখতে হবে ৬ ফুট দূরত্বে।
৫. প্রবেশ ও প্রস্থানের আলাদা জায়গা রাখতে হবে, দেওয়ালে নির্দিষ্ট চিহ্ন দিয়ে নির্দেশিকা করে দিতে হবে।
৬. শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের তাপমাত্রা ২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে যাতে মুক্ত বাতাস চলাচল করে।
৭. ভিড় এড়াতে প্রতিটি ক্লাসের মাঝে ১৫-৩০ মিনিটের ব্যবধান রাখা আবশ্যিক।
৮. প্রতি ক্লাসে ব্যক্তির সংখ্যা কমাতে হবে। ঘরের আয়তন এবং শরীরচর্চার ধরন অনুযায়ী সংখ্যা নির্দিষ্ট করতে হবে।
৯. স্যানিটাইজার ডিসপেনসার থাকতে হবে জিমে প্রবেশের মুখে। থার্মাল গানের মাধ্যমে মাপতে হবে তাপমাত্রা। সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি জিমে প্রবেশ করতে পারবেন।
নির্দেশিকা অনুযায়ী বন্ধ থাকছে
স্পা, সনা, স্টিম বাথ, সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
আরও পড়ুন: নিজে থেকে কোভিড টেস্ট করা কতটা জরুরি? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জীবাণুমুক্ত রাখা-সহ একাধিক নিয়মের কথা বলা হয়েছে এই নির্দেশিকায়। কিন্তু যেখানে যন্ত্র ব্যবহারের সময় সংস্পর্শে আসতে হয়, রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ কি আরও বাড়তে পারে? জিম খুলে দেওয়া কি ইতিবাচক পদক্ষেপ? কী করবে আমজনতা?
সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, শরীরচর্চা ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও এতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসছে।
১) মাস্ক পরে জিম করা সম্ভব নয়। মাস্ক খুলতেই হবে।
২) একাধিক মানুষ মাস্ক না পরে একই ঘরে থাকলে সংক্রমণ কীভাবে আটকাবে?
৩) মাস্ক খোলা অবস্থায় যদি এসি চলে, তাহলে ভাইরাসের সংক্রমণ গোটা ঘরে ছড়িয়ে যাবে।
৪) প্রত্যেকের যন্ত্রপাতি কি আলাদা হবে?
জিম সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বেশ কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত?
অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি বিষয় দেখতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত সিদ্ধান্তে মানুষ যাতে কোনও বিপদে না পড়েন, তা দেখা উচিত প্রশাসনের। জিম যদি খুলতেই হয়, তাহলে প্রতিটি মানুষের মধ্যে অন্তত ৬ থেকে ৮ ফুট দূরত্ব রাখতেই হবে। প্রতিটি যন্ত্র ব্যবহারের পর স্যানিটাইজ করতে হবে। একমাত্র সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ধোঁয়ার মাধ্যমে ভাইরাস মারা সম্ভব, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। প্রতিটি ব্যক্তির জিম ব্যবহারের পর ঘর ফাঁকা করে সেটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে। এসি চালানো যাবে না। বড় কোনও সংস্থায় এ সব নিয়ম মানা সম্ভব হলেও পাড়ায় যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা জিমে তা সম্ভব নয়। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।’’
জিম খোলার সিদ্ধান্ত কি দ্রুত নেওয়া হল?
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের বক্তব্য, জিমের আয়তন সব জায়গায় এক নয়। ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা বা গুণগত মান বজায় রাখা সব জিমে কোনওমতেই সম্ভব নয়। কাছাকাছি আসার প্রবল আশঙ্কা থেকেই যাবে।
আনলকের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই জিম বা এ জাতীয় ইনস্টিটিউট খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জিম তো জরুরি পরিষেবার অংশ নয়। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।এ সময় জিম না খুললেই ভাল হত। জিমে কাজ মানেই জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস এবং প্যাথোজেন আদানপ্রদান হবেই, তাই জিম খোলার সিদ্ধান্তে সমর্থন নেই জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর।
জিম খুললে চিন্তা কেন? ইতিবাচক দিক কোনগুলি? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
জিম খুললে কী ধরনের উপকার হতে পারে
জিম খোলার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জরুরি, এমনটাই মত ফিটনেস ট্রেনার চিন্ময় রায়ের। তিনি বলেন, ‘‘বাস চলছে, অটোও। গণপরিবহণও চলছে। সে ক্ষেত্রে প্রতি যাত্রীর আসন বা যান কি বারবার স্যানিটাইজ করা হচ্ছে? এগুলি বহুদিনই চলছে। সেই তুলনায় জিম অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। জিমের ক্ষেত্রে একই যন্ত্রপাতি ব্যবহার হলেও কিছুক্ষণ অন্তর তা স্যানিটাইজ করা হবে। প্রতি ব্যক্তির ব্যবহারের পরই জীবাণুমুক্ত করা হবে সেগুলি।’’
প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যবহারের পরই যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ছবি: পিটিআই
এ ছাড়াও নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে, সম্পূর্ণরূপে মানা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। জিম ব্যবহারের আগে একটি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে আসতেও বলেছেন চিন্ময়বাবু।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে বয়স্কদের মনে ভাঙন বেড়েছে, কী করবেন, কী করবেন না
করোনা আবহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটির উপরে। শরীরচর্চা করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, অ্যান্টিবডি অনেক বেশি কার্যকর থাকে। গোষ্ঠীবদ্ধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা হার্ড ইমিউনিটি তৈরিতেও এই সিদ্ধান্ত সাহায্য করবে, জানালেন চিন্ময়বাবু।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy