Advertisement
E-Paper

কোভিডের মরসুমে উচ্চরক্তচাপ বশে রাখতে না পারলে বিপদ, নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে, জেনে রাখুন

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের রাজ্যে কোভিডে যতজনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগেরই রক্তচাপ বশে ছিল না

শহরাঞ্চলে ৩৫ - ৪০ শতাংশ ৪০ পেরিয়ে যাওয়া মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। ছবি: শাটারস্টক

শহরাঞ্চলে ৩৫ - ৪০ শতাংশ ৪০ পেরিয়ে যাওয়া মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ১৩:১৫
Share
Save

কোভিড হোক না হোক, উচ্চ রক্তচাপ বশে রাখা দরকার সব সময়ই। কারণ কথাতেই আছে, রক্তচাপ বশে না থাকলে, পাম্প মে ফেইল, ফিল্টার মে স্টপ, টিউব মে বার্স্ট। অর্থাৎ যখন-তখন হার্টঅ্যাটাক, কিডনি ফেলিওর বা স্ট্রোকের আশঙ্কা। আর এই ধরনের প্রতিটি সমস্যা হল কোভিডের কোমর্বিডিটি। উচ্চ রক্তচাপও তাই। কাজেই রক্তচাপ বশে না থাকলে বিপদ আসতে পারে চারদিক দিয়ে। সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষা থেকেও সে রকমই জানা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ ধরনের মানুষের কোভিড হলে অবস্থার খুব দ্রুত অবনতি হয় এবং তাঁদের অনেকেই মারা যান। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের রাজ্যে কোভিডে যতজনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগেরই রক্তচাপ বশে ছিল না।

অর্থাৎ যাঁদের রক্তচাপ বশে আছে, তাঁদের তত বিপদ নেই, তাই তো? তাহলে আসুন, দেখে নেওয়া যাক, কতজন মানুষের রক্তচাপ বশে থাকে।

এ প্রসঙ্গে এক মজার পরিসংখ্যান দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, “আমাদের দেশে যতজন মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও কম মানুষ জানতে পারেন যে তাঁদের সমস্যা আছে। এঁদের মধ্যে আবার চিকিৎসা করাতে আসেন, ওরকম ৫০ শতাংশ মানুষ। ঠিক চিকিৎসা পাওয়া মানুষের সংখ্যা এর ৫০ শতাংশ। রক্তচাপ বশে থাকে এঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশের। কাজেই আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনি ঠিক আছেন, হয়তো আসলে ঠিক নেই।”

আরও পড়ুন: স্পুটনিকে জব্দ কোভিড ১৯? কী বলছেন চিকিৎসকরা​

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানও সে কথাই বলছে। জানা যাচ্ছে, দেশে উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন প্রায় ২০ কোটি মানুষ। আর তার মধ্যে মাত্র ২ কোটি মানুষ তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে ন’কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক কোটি উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কতজনের যে রোগ বশে রয়েছে আর কতজন ডাক্তারই দেখাননি, সে হিসেব নেই কারও কাছে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিওর ও স্ট্রোকের প্রবণতা বিপজ্জনক আকার নিতে পারে। ফাইল ছবি

অর্থাৎ ঘোর বিপদ

বিপদ বলে বিপদ! একে তো হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনির গোলমাল, ডিমেনসিয়া ইত্যাদির ভয়, তার উপর উচ্চ রক্তচাপের হাত ধরে ডায়াবিটিসের আগমনও কিছুটা সহজ হয়। আর এইসব হাজারও রোগে জর্জরিত অবস্থায় কোভিড হলে কী হতে পারে সহজেই অনুমেয়।

আরও পড়ুন: আমি করোনা আক্রান্ত, এখন কী কী করছি

সুকুমারবাবু জানিয়েছেন, ‘‘কোভিড জটিল রূপ ধরলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে। তার প্রভাব পড়ে শরীরের প্রতিটি প্রত্যঙ্গে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে যে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিওর ও স্ট্রোকের প্রবণতা এমনিতেই আছে, তা বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে। অতএব রক্তচাপ বশে রাখুন যে কোনও মূল্যে।’’

রক্তচাপ বশে রাখার উপায়

• উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েটের বড় ভূমিকা আছে। এ ডায়েটে ফল, শাকসবজি, হোল গ্রেইন, দেশি মুরগির মাংস ও ডিম, মাছ, কম চর্বিওয়ালা দুধ ও সেই দুধে বানানো খাবার খেতে হয়। নুন ও চর্বিসমৃদ্ধ খাবার বাদ যায়। বাদ যায় তেল-ঘি-ঠাসা বাজারের খাবার ও প্রসেসড ফুড। কাজেই নিয়মিত এই ডায়েট খেলে রক্তচাপ কমতে বাধ্য।

• নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়। বাদ দিতে হয় দিনরাত শুয়ে-বসে থাকার অভ্যাস। এতে সরাসরি রক্তচাপ কমে। কমে মানসিক চাপ ও ওজন। তার হাত ধরেও কমে রক্তচাপ।

• নজর দিতে হয় মানসিক স্বাস্থ্য ও ঘুমের দিকে। না হলে রক্তচাপ যেমন বশে থাকে না, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে। কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কাও বাড়তে পারে।

• সপ্তাহে দু-তিন দিন দু-এক পেগ করে মদ্যপান করলে রক্তচাপ ও হৃৎপিন্ডের কার্যকারিতা ভাল থাকে বলে ওটুকু মদ্যপান করা যেতে পারে। তার বেশি করলে কিন্তু উলটো বিপদ হয়। অতিরিক্ত মদ্যপানে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে কোভিডের আশঙ্কাও বাড়তে পারে।

• ধূমপান না ছাড়লে একদিকে যেমন রক্তচাপ বাড়ে, বাড়ে কোভিডের আশঙ্কাও।

• এ সবের সঙ্গে প্রয়োজন হলে ওষুধ খেতে হয়। অনেকে আবার ওষুধ খেতে শুরু করার পর নিয়ম মানা ছেড়ে দেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত হল, নিয়ম ও ওষুধ পাশাপাশি না চললে আশানুরূপ ফল হয় না।

আরও পড়ুন: শরীর অচল থেকে পক্ষাঘাত, করোনার দোসর কি এ বার গুলেনবারি সিনড্রোম? কী বলছেন চিকিৎসকেরা​


উচ্চ রক্তচাপ থাকলে যা করবেন না

• খুব বেশি রাগারাগি, চেঁচামেচি করবেন না।

• নুন খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন না। গরমে ঘেমে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

• ব্যথার ওষুধ বা গর্ভনিরোধক বড়ি অনেক সময় রক্তচাপ বাড়ায়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তা ব্যবহার করবেন না।

• কোভিডের আশঙ্কা বাড়তে পারে বলে যে সব ওষুধের নামের শেষে ‘প্রিল’ বা ‘সার্টান’ আছে, তা খাওয়া বন্ধ করে দেবেন না। এতে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। কারণ কোনও গাইডলাইনেই এখনও পর্যন্ত বলা হয়নি যে এইসব ওষুধ খেলে কোভিডের আশঙ্কা বাড়ে।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

করোনা কোভিড-১৯ Healthy Living Tips Corona COVID-19 High Blood Pressure Coronavirus in West Bengal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।