Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

অতিরিক্ত ওজনে করোনার ফল হতে পারে মারাত্মক, মেদ কমাতে কী কী করতেই হবে

আমাদের দেশের ১ কোটি ৩৫ লক্ষ মানুষ বাড়তি ওজন নিয়ে বিব্রত। বেশি ওজন মানেই বেশি অসুখ।

বাড়তি ওজন ডেকে আনে নানা অসুখকে। ছবি:শাটারস্টক

বাড়তি ওজন ডেকে আনে নানা অসুখকে। ছবি:শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:১৯
Share: Save:

খাওয়াদাওয়া জোরকদমে চলছে কিন্তু ক্যালোরি খরচ নামমাত্র। মেদ জমছে শরীরে। কোভিডের কারণে বাড়িতে আটকে থেকে বাড়তি ওজন নিয়ে অনেকেই জেরবার। 'সায়েন্স ডিরেক্ট' পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য বলছে, আমাদের দেশের ১ কোটি ৩৫ লক্ষ মানুষ বাড়তি ওজন নিয়ে বিব্রত। বেশি ওজন মানেই বেশি অসুখ।

ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকারের কথায়, ‘‘ডায়াবিটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে স্তন ক্যানসার, এন্ডোমেট্রিয়াম ক্যানসার-সহ নানা ক্যানসার, ক্রনিক ত্বকের অসুখ একজিমা-সহ অজস্র অসুখের সম্ভাবনা বাড়তি ওজনের ফলে।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রতি ৩ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ১ জন বাড়তি ওজনের সমস্যা নিয়ে বিব্রত। কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বেশি মোটা চেহারার মানুষদের। ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক মৌলিমাধব ঘটক জানালেন, শরীরে বাড়তি মেদ জমলে মেটাবলিক সিনড্রোমের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয় (অর্থাৎ রক্তচাপ বাড়ে, অগ্ন্যাশয়ের কাজ করার ক্ষমতা এলোমেলো হয়ে যায়, রক্তে চর্বি ভেসে বেড়ায়)। মেটাবলিক সিনড্রোম আবার করোনার সংক্রমণের জন্যে আদর্শ।

আরও পড়ুন: পুজোর সময় কি 'ফ্যাশনেবল' মাস্ক পরা উচিত, কী বলছেন চিকিৎসকেরা?​

এ দিকে নভেল করোনায় আক্রান্ত হলে ফুসফুসের সমস্যা তো হয়ই আবার বাড়তি ওজন ফুসফুসের উপরে বেশি চাপ দেয়। মৌলিমাধববাবু জানান, যাঁদের ভুঁড়ি আছে তাঁদের ফুসফুসের ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদায় বাড়তি চাপ পড়ে ফুসফুস সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। ফলে বাতাস টানার সময় ফুসফুস সম্পূর্ণ ভাবে প্রসারিত হতে পারে না। তাই ওজন বাড়লে শরীরে সবসময় অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে ফুসফুস কিছুটা কমজোর হয়ে পড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে শ্বাসনালিও কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্যে একেবারে আদর্শ পরিবেশ। তাই ওজন স্বাভাবিক করে নিতে হবে, এমনই অভিমত চিকিৎসকদের।

ওবেসিটি বা স্থূলত্ব থাকলে এম্বোলাইজেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তাঁদের দ্রুত অবস্থার অবনতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এম্বোলাইজেশনের অর্থ রক্তে ভেসে বেড়ানো চর্বির ডেলা কোনও ধমনিতে আটকে যাওয়া। এর ফলে রোগীর হৃদপিণ্ড, ফুসফুস বা মস্তিষ্কে রক্তচলাচল কমে যায়। এরকম হলে রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে। শুধু এখানেই শেষ নয় শুনলে আতঙ্কিত হবেন ওজন বেশি হলে যে কোনও সংক্রমণে সাইটোকাইন স্টর্ম শুরু হয়।

ওজন কমানোর প্রাথমিক শর্ত ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করা। ফাইল ছবি।

আমাদের শরীরের পাহারাদার শ্বেত কণিকা সংক্রমণ তাড়াতে গিয়ে অতিরিক্ত সাইটোকাইন নিঃসরণ করে। ফলে শরীরের মধ্যে সাইটোকাইন ঝড় সৃষ্টি হয়ে রোগীর অবস্থা দ্রুত গুরুতর হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। মোটা চেহারার মানুষের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি। ‘বেসাল মেটাবলিক রেট’(বিএমআই) ৩০-এর বেশি হলে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে মৃত্যুর হার স্বাভাবিক ওজনের মানুষের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ (২.৯ গুণ) বেশি।

আরও পড়ুন: নিউ নর্মালে সম্পর্ক ভাল রাখতে কী করবেন, কী করবেন না

ওজন কমাতে কী করবেন

• ওজন কমানোর প্রাথমিক শর্ত ক্যালোরি মেপে খাওয়া আর ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করা। চিনি-সহ সব মিষ্টি যুক্ত খাবার বন্ধ করতে হবে।

• প্রত্যেক দিন সকালে বা বিকেলে নিয়ম করে অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত পায়ে হাঁটতে হবে। কোনও অছিলাতেই হাঁটা বন্ধ করলে চলবে না।

• কোমর ও পেটের মেদ কমাতে যোগাসন ও ব্যায়াম করতে হবে। ২০–৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে সপ্তাহে ৫ দিন।

• প্রাণায়াম-সহ অন্যান্য ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ করা জরুরি। হাঁপানি বা ফুসফুসের অন্য অসুখ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসার পাশাপাশি ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ করা জরুরি।

• লেবু জাতীয় ভিটামিন সি যুক্ত ফল, শাক সবজি সহ লো ক্যালোরি ডায়েট করতে হবে। ফাস্ট ফুড ও ভাজা খাবার একেবারে বন্ধ রাখতে হবে।

• সর্দি-কাশি বা জ্বর হলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার শপথ নিন এখন থেকেই।

আরও পড়ুন: একাধিক সমস্যার অব্যর্থ দাওয়াই, রোজ কতটা জল খাবেন? কেন?​

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২

• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE