Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Doctor's Advice For Child Health

কাশি হলেই কাফ সিরাপ নয়

বাচ্চাদের কাশি হলে তা কোন রোগের উপসর্গ, তা বুঝে চিকিৎসা করতে হবে। অনেক সময়েই এই কাশির হাত থেকে রেহাই পেতে মা-বাবারা বাচ্চাদের কাফ সিরাপ খাইয়ে দেন।

An image of Cough

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৩১
Share: Save:

শীত কালে বাচ্চাদের কাশি, সর্দি, জ্বর লেগেই থাকে। আর অনেক সময়েই এই কাশির হাত থেকে রেহাই পেতে মা-বাবারা বাচ্চাদের কাফ সিরাপ খাইয়ে দেন। কিছু সময়ে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সোজা দোকানে গিয়ে কাফ সিরাপ বেছে নিয়ে চলে আসেন অনেকে। তার লেবেলও হয়তো তাঁরা দেখেন না। এ প্রসঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা দরকার যে, ভারতীয় ড্রাগ রেগুলেটর চার বছরের কমবয়সি বাচ্চাদের জন্য বিশেষ অ্যান্টি-কোল্ড ড্রাগ কম্বিনেশন এ দেশে নিষিদ্ধ করেছে। ক্লোরফেনিরামিন ম্যালিয়েট ও ফিনাইলেফ্রিন কম্বিনেশন ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যে ওষুধ নিষিদ্ধ

এই বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “বাজারে প্রচুর কাশির ওষুধ পাওয়া যায়। অভিভাবকেরাও কাশির ওষুধের উপরে বেশি নির্ভর করতে চান। এ বার ক্লোরফেনিরামিন ম্যালিয়েট ও ফিনাইলেফ্রিন কম্বিনেশন ড্রাগ বাজারে অনেক পাওয়া যায়। এগুলোকে আমরা বলি ফিক্সড ডোজ় কম্বিনেশন ড্রাগ। এই ওষুধ বাচ্চাদের একদম দেওয়া যাবে না। এর নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তন্দ্রাচ্ছন্নতা, ঘুমের অভ্যেস পাল্টে যাওয়া, মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম কার্যকারিতার উপরে বা তার চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময়ে অভিভাবকরা দোকানে গিয়ে কাফ সিরাপ চেয়ে যা পান, নিয়ে চলে আসেন। কাশি না কমলে অনেকে বেশি কাফ সিরাপও খাইয়ে দেন। ডোজ়ের পরিমাণ যা বলা থাকে, তার চেয়ে বেশি খেলে অন্য রকম ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই ছ’বছরের নীচে যে কোনও কাফ সিরাপ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দোকান থেকে কিনে সন্তানকে খাইয়ে দেবেন না। বরং কাশি কেন হচ্ছে সেটা বুঝে চিকিৎসা করা উচিত।”

কাশি কেন হচ্ছে, সেই বুঝে চিকিৎসা

জ্বর যেমন কোনও রোগের উপসর্গ, তেমনই কোনও রোগের উপসর্গ কাশি। ফলে শুধু কাফ সিরাপ খাইয়ে কাশির উপশম সম্ভব নয়। বরং আসল রোগ নির্ণয় করতে হবে। ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীর কথায়, “অনেক শিশুই কাশির উপসর্গ নিয়ে আসে। প্রথমেই বুঝতে হবে যে কাশি সারানোর কোনও ওষুধ নেই। কাফ-সাপ্রেস্যান্ট ওষুধ বা ওপিওয়েড জাতীয় ওষুধ আগে থেকেই নিষিদ্ধ। আসলে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে কাশি হতে দেখা যায়। তা হলে কাশির কারণ আগে খুঁজে বার করতে হবে। সেই মতো চিকিৎসা।” যে-সব রোগে কাশির মতো উপসর্গ দেখা যায়, সেগুলো হল—

  • রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন: ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণ হলে বাচ্চাদের মধ্যে ক্রমাগত কাশির প্রবণতা দেখা যায়। আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টেও কনজেশন থাকে। এ সময়ে বাচ্চার যথাযথ হাইড্রেশন বজায় রাখতে হবে ও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়াতে হবে।
  • ব্রঙ্কোস্প্যাজ়ম: স্টেথো দিয়ে শুনে যদি বোঝা যায় যে, ব্রঙ্কোস্প্যাজ়ম আছে, তখন ওরাল ব্রঙ্কোডায়লেটর দিতে হয়। এর মধ্যে লিভোস্যালবুটামল, স্যালবুটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। তবে এই কাশি বেশি দিন চললে, ইনহেলারে তাড়াতাড়ি কাজ হবে।
  • চাইল্ডহুড অ্যাজ়মা: দীর্ঘ দিন সকালে উঠেই যদি বাচ্চার ঘং ঘং করে কাশি হয়, সেটা কিন্তু চাইল্ডহুড অ্যাজ়মার প্রাথমিক লক্ষণ। তখন ইনহেলার দিতে হয়। আর এ ধরনের কাশির ক্ষেত্রে ইনহেলার খুব কার্যকর। এর কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। বারবার কাশি কমানোর ওষুধ খাওয়ালে, তার প্রভাব সারা শরীরে পড়তে পারে। কিন্তু ইনহেলার টার্গেট-ওরিয়েন্টেড কাজ করে। সরাসরি ফুসফুসে গিয়েই কাজ করে। বাকি শরীরে তেমন প্রভাব ফেলে না।
  • অ্যালার্জি: ধুলো, ফুলের রেণু, ধূপের গন্ধ, শুকনো লঙ্কার ফোড়ন ইত্যাদিতে অনেকের অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকে। এর থেকেও কাশি ট্রিগার করতে পারে। শ্বাসযন্ত্রে ফরেন বডি থাকাও কাশির অন্যতম কারণ।

মনে রাখবেন

সাধারণ সর্দি-কাশিতে বাচ্চাদের গরম জলের ভাপ (স্টিম ইনহেলেশন) নেওয়াতে পারলে সবচেয়ে ভাল। এর কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই। বরং কফ বার করে দেয়। বাচ্চাকে ওষুধ খাওয়ানোর সময়ে ৫-১০ মিলি, যে পরিমাণই হোক, তা ওষুধের শিশির ক্যাপে মেপে খাওয়াবেন। চামচের মাপে খাওয়ানো ঠিক নয়, চামচের আকারের উপরে মাপ বদলে যায়।

শীত, বর্ষায় সর্দি-কাশির সমস্যা বাচ্চাদের লেগেই থাকে। তড়িঘড়ি তা সারিয়ে ফেলতে কাফ সিরাপ নয়, বরং শীঘ্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখতে হবে, কাশি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক প্রতিফলনও। তাই কাশির ধরন বুঝে চিকিৎসা হওয়াই শ্রেয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy