Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
vitamin d

করোনা ঠেকাতে ভিটামিন ডি-র কি কোনও ভূমিকা আদৌ আছে?

কয়েকটা গবেষণা কী বলছে?

কিছু খাবার থেকেও মেলে ভিটামিন ডি। ছবি: শাটারস্টক।

কিছু খাবার থেকেও মেলে ভিটামিন ডি। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪২
Share: Save:

কয়েকটা সাপ্লিমেন্ট খেয়ে নিলেন আর করোনা ত্রিসীমানায় ঘেঁষলো না, তেমন কিন্তু নয় ব্যাপারটা। ভিটামিন ডি-র কাজ সব ঘুরপথে। তা-ও আবার খাওয়ামাত্র যে সে সব কাজ শুরু হয়ে যাবে, এমনও নয়।

তা হলে খাবেন কেন? কয়েকটা গবেষণা কী বলছে?

• আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন। আর সেখানের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ। আইরিশ লঙ্গিচ্যুডিনাল স্টাডি অন এজিং হয় এখানেই। জানা যায়, যে কোনও সংক্রমণ ঠেকাতে, তা সে ভাইরাস হোক কি ব্যাক্টিরিয়া কি অন্য কিছু, শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলতে ভিটামিন ডি-এর বিরাট ভূমিকা। বিশেষ করে এই সময় যখন আপামর জনগণ বসে আছেন কার্যত সূর্যালোকের অন্তরালে।

• ফুসফুসের সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতা রাখে এই ভিটামিন। তা সে টিবি হোক কি হাঁপানি, কি ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ অথবা সিওপিডি। এবং শরীরে এর ঘাটতি না থাকলে রোগ হলেও তা সারে সহজে।

আরও পড়ুন: মাস্ক পরব নাকি পরব না? কখন কেমন মাস্ক দূরে রাখবে করোনা?

• বিশ্বের ১৪টি দেশের ১১ হাজার ৩২১ জন মানুষকে নিয়ে একটি রিভিউ স্টাডি করে দেখা যায় ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পর তাঁদের ফুসফুসে আচমকা বড় ধরনের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে গিয়েছে।

• দীর্ঘ দিন ধরে শরীরে এর ঘাটতি থেকে গেলে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

• হার্টের নানাবিধ রোগ, তা সে হার্ট ফেলিওর হোক কি ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ, কি সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ, সবের আশঙ্কা কমে। এমনকি, ইস্কিমিক হৃদরোগের রিস্ক ফ্যাক্টর, হাইপ্রেশার বা ডায়াবিটিজ ঠেকাতেও তার ভূমিকা আছে এবং চিকিৎসায় কতটা ভাল ফল হবে তা-ও নির্ভর করে শরীরে এর ঘাটতি আছে কি নেই তার উপরে।

• বয়স্ক মানুষের মৃত্যুহার কমতে পারে এই সাপ্লিমেন্ট খেলে, যাঁদের কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই ফুসফুসে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।

তা হলে কথা হল কোভিডের আশঙ্কা কমবে কি না। হিসেব তো তাই বলে। করোনাভাইরাস সবার আগে জব্দ করে ফুসফুসকে। কাজেই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ফুসফুসকে যদি সতেজ রাখা যায়, রোগের আশঙ্কা যেমন কমে, রোগের বাড়াবাড়ি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। তার উপর হৃদরোগ, হাইপ্রেশার, ডায়াবিটিজ— সবই তো কোভিড ১৯-এর রিস্ক ফ্যাক্টর। এরা থাকলে রোগের আশঙ্কা ও জটিলতা, দুই-ই বাড়ে। অতএব...।

গায়ে রোদ লাগালেও মেলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি।

গরমের দেশে ভিটামিন ডি-র অভাব হয় না

অনেকে তাই ভাবেন বটে। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক সে রকম নয়। ত্বকে নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় ধরে রোদ লাগলে ভিটামিন ডি তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু রোদ কি সব সময় পর্যাপ্ত লাগে? রোদ আছে বলেই কি আপনি রোদ পোহাতে বেরোন! নাকি ঠান্ডা ঘরে বসে থাকার অছিলা খোঁজেন? বাধ্যতামূলক ভাবে যাঁদের বেরতে হয়, তাঁরা ছাড়া রোদে রোদে কেউ ঘোরেন না। বাধ্য হয়ে বেরতে হলে শরীরের খোলা অংশে থাকে সানস্ক্রিনের পুরু আস্তরণ। চোখে রোদচশমা। মাথায় ছাতা। শীতে এক-আধটু রোদ পোহালেও ঠান্ডা ও কালো হওয়ার ভয়ে পুরো শরীরই প্রায় ঢাকা থাকে। থাকে সানস্ক্রিন। রোদ তা হলে ঢুকবে কোথা দিয়ে? নিয়ম হল, দিনে কম করে ৩০-৪০ মিনিট খোলা শরীরে রোদ লাগানো। ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ বলছেন, “সারা শরীরে রোদ লাগানোর মতো পরিস্থিতি আমাদের দেশে নেই। সে ক্ষেত্রে সকাল ৭-৮টার মধ্যে খুব একটা শরীর না ঢেকে যদি খোলা জায়গায় হাঁটতে পারেন ৪০-৪৫ মিনিট, কাজ হবে। সম্ভব না হলে পা দুটো কেবল মেলে রাখুন রোদে। যখন সময় পাবেন। তার পরেও যদি সমস্যা হয়, আমাদের দেশে এখন ঘরে ঘরে ভিটামিন ডি-এর অভাব, তখন সাপ্লিমেন্ট খাবেন।”

আরও পড়ুন: দ্বাদশ দিন: আজকের যোগাভ্যাস

অভাব কেন

নানা কারণে হয়। যেমন:

• গায়ের রং ঘোর কালো হলে যতই রোদ পোহান না কেন, ত্বকে উপস্থিত মেলাটোনিনের কারণে ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না-ও হতে পারে। বয়স্ক মানুষদের এই সমস্যা বেশি হয়।

• ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন, তৈলাক্ত মাছ, ক্যানে ভরা টুনা, অতিরিক্ত ভিটামিন ডি মেশানো দুধ-সোয়ামিল্ক-ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল-কমলালেবুর রস, চিজ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কড লিভার অয়েল ইত্যাদি না খেলে বা কম খেলে সমস্যা হতে পারে। সমস্যা হয় ওজন কমানোর তাগিদে ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিলে। কারণ, খাবারের ভিটামিন ডি ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়েই শরীরে ঢোকে।

• পেটের কিছু গোলমাল, যেমন, ক্রোনস ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিলিয়াক ডিজিজ ইত্যাদি থাকলে খাবারের ভিটামিন ডি শরীরে শোষিত হতে পারে না।

• সমস্যা হয় খুব মোটা হলেও। বিএমআই ৩০-এর উপরে উঠে গেলেই শুরু হয় ঝামেলা।

তা হলে সাপ্লিমেন্ট

“সাধারণ অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করে তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” জানালেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। “ভিটামিন ডি-এর মাত্রা ২০ ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটারের নীচে গেলেই সচরাচর ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন যে হেতু বেশ কিছু দিন ধরে ঘরের বাইরে পা রাখছেন না, রক্ত পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ কম, কাজেই বয়স্ক মানুষ, কোভিডের রিস্ক ফ্যাক্টর আছে, যেমন, হৃদরোগ, হাইপ্রেশার, ডায়াবিটিজ, ফুসফুসের সমস্যা, ধূমপান ইত্যাদি, ঋতুবন্ধ হয়ে গিয়েছে এমন মহিলারা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে সাপ্লিমেন্ট খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন। ভয় নেই। রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা সহজে বিপদসীমার উপরে যায় না। উল্টো দিকে বরং বিপজ্জনক এই সংক্রমণটির আশঙ্কা এক ধাক্কায় কিছুটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Vitamin D Novel Coronavirus Coronavirus Medicines
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy