প্রতীকী ছবি
বয়সভিত্তিক ভাগ থাকছে। কো-মর্বিডিটি সংক্রান্ত তথ্য থাকছে। পুরুষ ও মহিলা-ভেদে মৃত্যুর হার কত, জানা যাচ্ছে তা-ও। কিন্তু কোভিডে মৃতদের সামাজিক অবস্থান কী ছিল বা অর্থনীতির কোন স্তরে তাঁরা ছিলেন, সে সম্পর্কে কোনও তথ্যই কারও কাছে নেই। তার ফলে দেশ বা রাজ্যের কোভিড-চিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিধির বাইরে বেরিয়ে অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি-সহ জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে কোভিড। বস্তুত, তাতে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ফলে যতক্ষণ না এই সংক্রান্ত সম্পূর্ণ তথ্য উঠে আসছে, ততক্ষণ সামগ্রিক কোভিড-তথ্যে একটা ফাঁক থেকে যাবে বলেই ধারণা অনেকের। এর জন্য আলাদা সমীক্ষার দরকার বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
এমনিতে সাধারণ ধারণা হল, কোভিডে সব চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নিম্নবিত্ত বা আর্থিক ভাবে দুর্বলদের। কারণ, কাজের জন্য তাঁদের বাইরে বেরোতে হয়েছে। সেখানে মধ্য-উচ্চবিত্ত বা উচ্চবিত্তেরা আর্থিক সঙ্কুলান থাকার কারণে বাড়িতে নিরাপদে থাকতে পেরেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে যে কোনও ক্ষেত্রের শীর্ষ স্তরে থাকা মানুষজনও কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অনেকে মারাও গিয়েছেন। ফলে অর্থনীতির কোন স্তরের মানুষের মৃত্যুর হার বেশি, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার জানাচ্ছেন, এই বিষয়টি দু’দিক থেকে দেখা যেতে পারে। এক, অর্থনৈতিক ভাবে কোন স্তর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হল। দুই, মৃত্যুহার কোন স্তরের বেশি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব। অভিরূপবাবুর কথায়, ‘‘সে ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালে কত জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সরকারি হাসপাতালে কত জন মারা গিয়েছেন, এই তথ্য জোগাড় করতে পারলে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। কারণ যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালেই সাধারণত ভর্তি হবেন। ফলে ফারাকটা বোঝা যাবে।’’
আরও পড়ুন: হোম ডেলিভারি বা হোটেল-রেস্তরাঁ, বাইরের খাবার খেলে কী কী মানতেই হবে
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত ওজনে করোনার ফল হতে পারে মারাত্মক, মেদ কমাতে কী কী করতেই হবে
অর্থনীতির কোন স্তরের মানুষ সামাজিক দূরত্ব-বিধির নিয়ম ঠিক মতো মানতে পারছেন, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাক্রোইকনমিক্সের অধ্যাপক পরন্তপ বসু। ‘বিহেভিয়র অব সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং অব পুওর ভার্সেস রিচ’— এই ধারণাকে সামনে রেখে ইংল্যান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ওই গবেষণা করলেও তার ফলাফল ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে জানাচ্ছেন তিনি। মার্চ থেকে জুলাই, এই সময়সীমায় করা ওই গবেষণায় চলতি ধারণাকেই তথ্য দিয়ে পরন্তপ প্রমাণ করেছেন, পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে দূরত্ব-বিধি মানতে না পারায় এবং গণপরিবহণে যাতায়াতের কারণে নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষদের মধ্যেই সংক্রমণের হার সব চেয়ে বেশি। ফলে তাঁরাই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওই গবেষকের কথায়, ‘‘নিম্নবিত্ত এলাকায় সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলা সত্যিই সমস্যার।’’
তবে কোভিডে অর্থনীতির কোন স্তরের মানুষের মৃত্যুহার বেশি, তা নির্ণয় করা মুশকিল বলে জানাচ্ছেন অনেকে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন সায়েন্সেস’-এর ‘ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অপরাজিতা চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, মৃতের আর্থিক অবস্থা বার করা শক্ত। কারণ কার কত আয়, সেই তথ্য পাওয়া মুশকিল। তাই প্রতিদিন যেখানে সংক্রমিত এবং মৃতের তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সেখান থেকে আলাদা করে তাঁদের আর্থিক অবস্থা বার করা সহজ নয়। অপরাজিতার কথায়, ‘‘শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অর্থনীতি পরস্পর সম্পর্কিত। ফলে মৃতের শিক্ষাগত যোগ্যতার যদি উল্লেখ থাকে তথ্যে, তা থেকে কিছুটা ধারণা করা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy