Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dementia

করোনা কি আনছে অকাল স্মৃতিভ্রংশ 

মনোরোগ চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, লকডাউনের জীবনে বয়স নির্বিশেষে বহু মানুষের উপরেই ভুলে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০২
Share: Save:

মধ্যবয়সি মহিলা। অন্য কোনও অসুস্থতার লক্ষণ নেই। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানিয়েছিলেন, দিন কয়েক হল কিছু মনে রাখতে পারছেন না। সব ভুলে যাচ্ছেন। কথা বলে চিকিৎসক জানতে পারেন, আগে কখনও এমন হয়নি তাঁর। লকডাউন শুরু হওয়ার কিছু দিন পর থেকে এই উপসর্গের শুরু। চিকিৎসক বুঝতে পারেন, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলেছে। তাই ভুলে যাওয়ার এই প্রবণতা।

মনোরোগ চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, লকডাউনের জীবনে বয়স নির্বিশেষে বহু মানুষের উপরেই ভুলে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে। সাধারণ ভাবে স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) ষাট বা তার বেশি বয়সিদের রোগ বলে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানাচ্ছে, বিশ্বে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। প্রতি বছর এক কোটি মানুষ নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হন। হু-র গবেষণা বলছে, ২০৩০ সালে ডিমেনশিয়া রোগীর সম্ভাব্য সংখ্যা হতে পারে আট কোটি ২০ লক্ষ। আর ৩০ বছর পরে অর্থাৎ ২০৫০ সালে ওই রোগীর সংখ্যা পৌঁছতে পারে ১৫ কোটি ২০ লক্ষে।

কিন্তু কোভিড-১৯ সেই সমস্ত হিসেব গুলিয়ে দিয়ে অকাল স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। রাজ্যে মনোরোগ চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সব বয়সিদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেই গভীর প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থায় স্বাধীন ভাবে চলাফেরা, নিজের মতো থাকা (অর্থাৎ সেন্স অব অটোনমি), কার সঙ্গে কী ভাবে মিশতে হবে (অর্থাৎ সেন্স অব রিলেটেডনেস) এবং নিজস্ব কর্মদক্ষতার বোধ বা নিজের উপরে ভরসাকে (অর্থাৎ সেন্স অব কম্পিটেন্সি) আঘাত করছে। এর ফলে তৈরি হচ্ছে গভীর হতাশা। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘হতাশা, অবসাদ থেকে ভুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। যাকে আমরা বলি সিউডো-ডিমেনশিয়া। স্বাভাবিক মানসিক অস্তিত্ব এখন এতটাই আঘাত পাচ্ছে যে, তার জেরে এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।’’

কী করবেন

• ঘরবন্দি জীবনেও নিজস্ব রুটিন তৈরি করুন
• স্নান, খাওয়া ও ঘুমের সময় অপরিবর্তিত রাখুন
• আলাদা করে সময় না কাটিয়ে দিনের অন্তত কিছুটা সময় বাড়ির সকলে একসঙ্গে কাটান
• টেলিভিশন, মোবাইলের ব্যবহার (স্ক্রিন টাইম) কমিয়ে আনুন
• বাল্য বন্ধুদের নম্বর খুঁজে বার করে তাঁদের সঙ্গে ফোনে গল্প করুন
• বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন
• পছন্দের গান শুনুন
• ইন্ডোর গেমস খেলুন

মনোরোগ চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, সাধারণ সময়ে প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট হিসেব থাকে। অর্থাৎ একটি কাজ শেষ হলে আরেকটি শুরু হবে, সেই ছকটা মনের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কোভিড-১৯ সেই সব তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে। মনোবিদ নীলাঞ্জনা স্যান্যাল জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় সকালে উঠে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ সেরে অফিস, স্কুল, কলেজে বেরোনোর নির্দিষ্ট রুটিন থাকে। বর্তমান জীবনে সেটাই নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কাজের ধারাবাহিকতাই মনের মধ্যে ‘অ্যাঙ্কর-পয়েন্ট’ বা নোঙর তৈরি করে। ধারাবাহিকতার এই শৃঙ্খলই আমাদের সময়ের সঙ্গে বেঁধে রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেই শৃঙ্খল খুলে সময়ের সূত্র হারিয়ে গিয়েছে। তাই অনেকেই, তিনি যে বয়সিই হোন না কেন, কত তারিখ বা কোন বার জিজ্ঞেস করলে চট করে বলতে পারছেন না।’’ তবে এর সঙ্গে স্থায়ী স্মৃতিভ্রংশের কোনও যোগ নেই বলে জানাচ্ছেন তিনি। মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এখন একটি দিনের সঙ্গে আরেকটি দিনের কোনও পার্থক্য থাকছে না। ক্রমাগত একটি বিষয়ে চিন্তা চলতে থাকলে অন্য বিষয়ে তেমন ভাবে মনঃসংযোগ করা যায় না। করোনা-আতঙ্ক ছাড়া এখন মানুষের মনে কার্যত আর কিছু নেই। সেটাই ভুলে যাওয়ার ঘটনা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে।’’

এই মানসিক অবস্থা কত দিন থাকবে? লকডাউন উঠে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কবে ফিরবে-র মতোই সেই প্রশ্নের উত্তরও অনিশ্চিত বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Dementia Coronavirus Lockdown Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy