Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
heart

লকডাউনে বাড়ছে সাডেন হার্ট অ্যাটাক, কী কী উপসর্গ দেখলেই সচেতন হবেন

সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের পিছনে নানা কারণ থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর জন্য দায়ী হৃদপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দন। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে 'অ্যারিদমিয়া'।

হৃদযন্ত্র ঠিক ভাবে পাম্প করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পায় না। ফাইল ছবি।

হৃদযন্ত্র ঠিক ভাবে পাম্প করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পায় না। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ১৭:২১
Share: Save:

করোনার সংক্রমণ এড়াতে বেশির ভাগ মানুষই গৃহবন্দি। অল্পবিস্তর শরীর খারাপ হলে কেউই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কখনও বা হাসপাতালে বা ক্লিনিকে যেতেও ইতস্তত করছেন। ফলে কিছু ক্ষেত্রে ধেয়ে অসছে আচমকা বিপদ। বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের সমস্যা। কোথাও আবার ভিতরে ভিতরে এই হৃদযন্ত্রের সমস্যা এতটাই জোরদার হয়ে চেপে বসেছে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটুকুও পাওয়া যাচ্ছে না। সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ভয় মাথাচাড়া দিচ্ছে।

শুধুই যে বয়স্ক বা ডায়বিটিস ও হাইপ্রেশারের রোগীদেরই আচমকা মৃত্যু এসে গ্রাস করছে তা নয়, ২৫–৩০ বছরের তরুণ-তরুণীরাও হঠাৎ বিপদে পড়ছেন। প্রাণহানিও ঘটছে।

হার্ট সার্জন কুনাল সরকারের অভিমত, "সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের পিছনে নানা কারণ থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর জন্য দায়ী হৃদপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দন। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে 'অ্যারিদমিয়া'। একে অবহেলা করলে আচমকা ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।"

আরও পড়ুন: লকডাউনে সারা ক্ষণ মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার? চোখ বাঁচাতে মেনে চলুন এ সব

কম বয়সে এ রকম হলে বেশির ভাগ মানুষই গ্রাহ্য করেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩০–৪০ বছর বয়সিদের সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি বেশি। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের সমস্যা প্রায় দ্বিগুন। তবে যাঁদের হার্টের অসুখ আছে তাঁরা যদি নিয়মিত ওষুধ না খান, প্রেশার, সুগার নিয়ন্ত্রণ না করেন তাঁদের এই সমস্যার ঝুঁকি অনেক বেশি, বললেন কুনাল সরকার।

ডায়াবিটিস থাকলে তা মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা করান।

"যাঁদের ইতিমধ্যে এক বার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে, কিন্তু লকডাউনের কারণে চেক আপ করাতে পারছেন না বা দীর্ঘ দিন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁদেরও সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি থাকে," বললেন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশকুমার হাজরা। এ ছাড়া যাদের করোনারি আর্টারি ডিজিজ আছে, পরিবারে আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ইতিহাস আছে বা আচমকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন (সিনকোপ) বা হৃদস্পন্দনের সমস্যা আছে তাঁদেরও আচমকা মৃত্যুর হার বেশি, জানালেন তিনি। এ ছাড়া ধূমপান, মাদক সেবন ও অতিরিক্ত মদ্যপান আচমকা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

কী কী সমস্যা থাকলে সাবধান হবেন

• শ্বাসের কষ্ট হার্টের অসুখের অন্যতম লক্ষ্মণ। হাঁটাচলা বা অল্প পরিশ্রমে হার্ট বিট বেড়ে যেতে পারে।

• পায়ের পাতা, গোড়ালি ও পা ফুলে যাওয়া হার্ট ফেলিওরের কারণেও হতে পারে। এ রকম হলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো দরকার।

• হার্টের সমস্যা থাকলেও দিনভর ক্লান্ত লাগে, কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না। কাজেই অবহেলা করবেন না।

• দ্রুত পায়ে হাঁটাচলা ও এক্সারসাইজ করার ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করে। অল্প হাটলেই হাঁপিয়ে উঠতে হয়।

• কাশি ও বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হলে সচেতন হতে হবে।

• শরীরে জল জমে ওজন বাড়তে শুরু করে।

• খিদে কমে যায় ও গা বমি ভাব থাকে।

আরও পড়ুন: লকডাউনে ক্লান্তি কমিয়ে তরতাজা থাকতে চান? তা হলে মেনে চলুন এ সব

পাতে থাক সুষম আহার।

জীবনযাপনও বদলাতে হবে

• বাড়িতে থাকলেও হার্ট ভাল রাখার পাশাপাশি, সামগ্রিক ভাবে ভাল থাকতে নিয়মিত ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে। ছাদে বা বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করলে ভাল হয়।

• সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার কথা শুধু ভাবলে চলবে না, ছেড়েই দিতে হবে।

• রোজকার ডায়েটে রাখুন পর্যাপ্ত শাকসব্জি ও ফল। ভাত, রুটি অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমাতে হবে।

• নুন খাওয়ায় মাত্রা রাখা জরুরি। নুনে থাকা সোডিয়াম হার্ট ফেলিওরের সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর করে তোলে। নুনের বাড়তি সোডিয়ামের জন্য হার্ট ফেলিওর ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেড়ে যায়। নুনের সোডিয়াম রক্তবাহী ধমনীতে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ আর্টারিতে বাড়তি চাপ পড়ে এক দিকে ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যায়, অন্য দিকে হৃদপিণ্ডের পেশী বাড়তি চাপের ফলে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি নুন খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।

• মন ভাল রাখতে নিয়ম করে মেডিটেশন বা প্রাণায়াম করা উচিত। এ ছাড়া ভাল গান শোনা আর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ভাল হয়।

• অকারণে টেনশন করবেন না। আর নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে ভুলবেন না।

• কোনও রকম সমস্যা বুঝলে ভয় না পেয়ে অবশ্যই হাসপাতালে ডাক্তার দেখান।

(ছবি: শাটারস্টক।)

অন্য বিষয়গুলি:

Sudden Heart Attack Heart Lockdown Heart Diseases
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy