Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

লকডাউনে মনখারাপ? যা খুশি খাবেন না, ওজন বাড়লেই বিপদ

মাঝেমধ্যে টুকটাক না খেয়ে থাকতে না পারলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে খান স্বাস্থ্যকর খাবার।

যা খুশি খাবেন না। ছবি: শাটারস্টক।

যা খুশি খাবেন না। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ১৭:১৪
Share: Save:

খাবারের যোগান না থাকলে অবশ্য আলাদা কথা, কিন্তু যদি থাকে আর একঘেয়েমি, উদ্বেগ, মনখারাপ, একাকীত্ব, ভয় ইত্যাদির চাপে পড়ে খাবারকেই সঙ্গী করে নেন, ঝামেলা আছে। শুয়ে-বসে থেকে আর খেয়েদেয়ে ওজন বাড়বে, আর ওজন বাড়লে বাড়বে কোভিড ১৯-এর আশঙ্কা।

হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। যে বিপদটির ভয়ে আপনি গৃহবন্দি হয়েছেন, মানে হতে বাধ্য হয়েছেন, সে তার থাবা এক কদম বাড়িয়ে দেবে। কেন? সহজ হিসেব, ওজন বাড়লে শরীরে প্রদাহের প্রবণতা বাড়ে! আর প্রদাহ বাড়লে বাড়ে যে কোনও সংক্রমণের আশঙ্কা! সাধারণ সর্দিজ্বর হলে না হয় সামলে নেবেন, অবশ্য না-ও সামলাতে পারেন, কারণ এখন যে কোনও অসুখ হওয়া মানেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমা আর তার হাত ধরে ‘তার’ আগমনের আশঙ্কা বাড়া। অর্থাৎ সহজ কথা, ভুলভাল খাওয়া যাবে না, ওজনটি বাড়তে দেওয়া যাবে না।

ধরুন, এ সব শুনে আপনার উদ্যম খুব বেড়ে গেল। ঠিক করলেন, খাওয়া একটু বেশি হয় হোক, বসেই তো আছেন, সে সময় না হয় একটু ব্যায়াম করে ক্যালোরি ঝড়িয়ে দেবেন। ভাল কথা। ব্যায়াম করলে ওজন কমবে, ইমিউনিটি বাড়বে, ঘুম হবে, সব ঠিক, কাজেই তাতে কোনও বাধা নেই অবশ্যই। কিন্তু টিভিতে আতঙ্কের খবর দেখার সময়, কাউকে পাশে বসিয়ে গল্প করার জন্য যখন মন আকুলিবিকুলি করে, কবে এ সব মিটবে ভেবে হতাশ হয়ে পড়েন বা একঘেয়েমি-একাকীত্বের চোটে চোখে জল চলে আসে, তখন সে সব ভুলতে কী খান না খান সেটাও একটু খেয়াল করা শুরু করুন। আপনার সে সময় কি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে না কেক-পেস্ট্রি-আইসক্রিম-কোল্ডড্রিঙ্ক খাওয়ার জন্য মন আকুলিবিকুলি করে? একবাটি পাস্তায় ডুবে মন হালকা করেন? নাকি চিপস থেকে শুরু করে রাজ্যের ভাজাভুজির থালা সাজিয়ে বসে যান?

ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। —ফাইল চিত্র।

আরও পড়ুন: লকডাউন: আজকের যোগব্যায়াম কটি চক্রাসন​

ভাবছেন, এ আর নতুন কথা কী! দুঃসময়ের সঙ্গী তো এরাই! তা হলে শুনুন, শরীরে প্রদাহের প্রবণতা বাড়াতে এ সব, অর্থাৎ খুব বেশি মাত্রায় প্রসেস করা খাবার তথা মিষ্টি-নুন-ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবারের বিরাট অবদান। দেদার চালিয়ে গেলে কমবে ইমিউনিটি, আবার বাড়বে সেই কোভিড- ১৯ এর আশঙ্কা। একা ব্যায়ামে আর কতটুকু কী করতে পারবেন!

কিন্তু এ সবই তো খেতে ইচ্ছে করে! সে তো করবেই। কারণ এ সব খাবার এমনভাবে বানানো হয় যাতে ব্রেনের প্লেজার রিসেপ্টর ঝট করে উদ্দীপিত হয়ে যায়। মন খারাপ কমে, বরং ভাললাগতে শুরু করে। তবে তা ক্ষণস্থায়ী। কিছু ক্ষণ পর আবার যখন খারাপ লাগা শুরু হয়, আবার শুরু হয় খাওয়া। ভরাপেটেও।

এ অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে। মনখারাপ লাগলে ভরাপেটেও আমরা টুকটাক খেতে থাকি। কেন বলুন তো? এর রহস্য লুকিয়ে আছে খাবারের উপাদানের মধ্যে। ফ্যাট-চিনি-নুন ও সুগন্ধেভরা প্রসেসড খাবার সরাসরি প্রভাব ফেলে ব্রেনে। এক দিকে যেমন মন ভাল হয়ে যায়, অন্য দিকে পেট ভরে যাওয়ার যে সিগন্যাল আছে ব্রেনে সে ঠিক ধরে উঠতে পারে না কী হচ্ছে। ফলে খাবার বন্ধ করার ঘণ্টি বাজে না সময়মতো। আমরা দুনিয়া ভুলে খেতে থাকি। ফল, এক দিকে খাবারের প্রভাবে প্রদাহের প্রবণতা বাড়ে, অন্য দিকে ক্যালোরি বেড়ে যাওয়ায় ওজন বাড়ে, তার হাত ধরেও বাড়ে প্রদাহ। অর্থাৎ এই বদভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে, কোভিডের মরসুমে রক্ষা পাওয়া কঠিন।

ফুড ডায়েরি বানান।—ফাইল চিত্র।

আরও পড়ুন: সংক্রমণ ঘটতে পারে বাসনপত্র থেকেও, জেনে নিন কোন ধরনের থালা-বাটি নিরাপদ​

সমাধান

মনোচিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম কয়েকটি পথের হদিশ দিয়েছেন, আসুন দেখে নেওয়া যাক।

প্রথমেই ফুড ডায়েরি বানান। তাতে কখন কী খাচ্ছেন, কী পরিমাণে খাচ্ছেন, খাওয়ার আগে মনোভাব কী রকম ছিল, খাওয়ার পর কী হল, সব লিখুন। তা হলেই বুঝবেন কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, যেমন একঘেয়ে লাগছে না কি একা মনে হচ্ছে নিজেকে? হতাশ লাগছে না উদ্বেগ হচ্ছে? মনখারাপ লাগছে না ভয় পাচ্ছেন? সে সময় কোন ধরনের খাবার খেলে সাময়িক স্বস্তি হচ্ছে, সব ভাল করে বুঝেশুনে লিখুন।

সমস্যা পেয়ে গেলে দেখবেন সেখান থেকেই সমাধানের রাস্তা বেরিয়ে আসবে। যখনই জেনে যাবেন, কী রকম লাগলে কী খাচ্ছেন, তখন তাকে খাবার ছাড়া অন্য কোনও ভাবে ম্যানেজ করতে হবে। এমন কিছু যা ব্রেনকে পুরোপুরি ব্যস্ত করে দেবে। যেমন—

ক) একঘেয়ে লাগলে মিনিট দশেক শব্দজব্দ বা সুডোকু করুন। অভ্যাস না থাকলে নতুন করে শুরু করে দেখুন, মন্দ না-ও লাগতে পারে। ইউটিউব দেখে নতুন কোনও রান্না করতে পারেন। বা যা আপনার ভাল লাগে।

খ) একা লাগলে বা খুব মনখারাপ হলে কাছের কাউকে ফোন করুন। অন্য সময় হয়তো কাজের চাপে যোগাযোগ রাখতে পারেননি, এখন সময় পেয়েছেন, সম্পর্কটা ঝালিয়ে নিন। নিজেকে আর একা মনে হবে না। মন ভাল হয়ে যাবে।

গ) উদ্বেগ হলে, ভয় লাগলে আগে টিভি বা মোবাইলে আপডেট দেখা বন্ধ করে বই নিয়ে বসুন। ডুবে যেতে পারবেন এমন বই। কিছুটা স্বস্তি পাবেন। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করলেও মন ঘুরে যায় সহজে। ব্যায়াম করতে পারেন। স্ট্রেস বাড়লে অনেকে কাপড় কাচেন বা ঘর গুছান। চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

ঘ) ক্রিয়েটিভ কিছু করার অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই। সময় কোথা দিয়ে কেটে যাবে টেরই পাবেন না।

চেষ্টা করার পরও কিছু কিছু সময় পেরে উঠবেন না। সে সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন। কী ভাবে দেখে নিন।

ক) স্ন্যাক্সের প্যাকেট হাতের গোড়ায় না রেখে, রাখুন রান্নাঘরের দূরুহতম কোণে। যাতে যেতে, বার করতে ও নিয়ে টিভির সামনে এসে বসতে একটু কষ্ট করতে হয়।

খ) যেতে-আসতে কষ্ট হবে বলে প্যাকেটশুদ্ধ নিয়ে বসবেন না। বাটিতে অল্প একটু নিয়ে আসুন।

গ) ভাল করে চিবিয়ে, খাবারের স্বাদ-গন্ধ উপভোগ করে একটু একটু করে খান। যাকে বলে মাইন্ডফুল ইটিং।

খাওয়ার অনিয়ম করবেন না।—ফাইল চিত্র।

ঘ) ভুলভাল খাচ্ছেন বলে মনে যেন অপরাধবোধ না জাগে। এ থেকেও মানসিক চাপ বাড়বে। যা এ সময় ভাল নয়। কাজেই এই খাবার ভাল আর ওইটা মন্দ এ ভাবে খাবারের ভাগ না করে, ‘নিয়মিত খাওয়া যায়’ ও ‘মাঝেমধ্যে খেতে হয়’, ভাগ করুন এ ভাবে। মাঝেমধ্যে ঘন ঘন খাওয়া হয়ে গেলে পরের দিকে রাশ টেনে ধরলেই আর সমস্যা নেই।

ঙ) খাওয়ার অনিয়ম করবেন না। দিনে-রাতের মূল খাবার যাতে স্বাস্থ্যকর হয়,সে দিকে খেয়াল রাখুন। প্রোটিন ও শাকসব্জি পর্যাপ্ত খেলে পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে। মন অত খাই খাই করে না।

চ) এর সঙ্গে এমন কিছু খাবার খান যা শরীরে খুশির হরমোন সেরেটোনিনের ক্ষরণ বাড়ায়। যেমন, গাঢ় সবুজ শাকসব্জি, মাছ, চিকেন, ডিম, ওটস, ইয়োগার্ট, বাদাম, বীজ ইত্যাদি।

মাঝেমধ্যে টুকটাক না খেয়ে থাকতে না পারলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে খান স্বাস্থ্যকর খাবার। যেমন—

কোল্ডড্রিঙ্কের বদলে ফল বা শাকসব্জির স্মুদি। খুব ভাল করে ধুয়ে, অনেক ক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর বানাবেন ও টাটকা টাটকা খেয়ে নেবেন।

চিপস ও ভাজাভুজির বদলে খান সেঁকা বাদাম।

সাধারণ চকোলেটের বদলে কম করে ৮৫ শতাংশ কোকা আছে এমন ডার্ক চকোলেট।

আইসক্রিমের বদলে ফ্রোজেন বেরি বা কলার স্মুদি।

চানাচুরের বদলে সব রকম বাদাম মিলিয়ে মিশিয়ে। ছোলাও খেতে পারেন।

স্যান্ডউইচের বদলে হামাস ও গাজর। হামাস ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন।

সাধারণ মাখনের বদলে ঘরে পি-নাট বাটার বানিয়ে খান।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Health Lifestyle Food COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy