ছবি: রয়টার্স।
একে তো ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ে নানা প্রশ্ন-সংশয় রয়েছে। তার উপরে আবার কোভিড ১৯-এর অ্যান্টিবডি শরীরে কত দিন স্থায়ী হয়, সেটাও এখনও স্পষ্ট নয়। তাই ভ্যাকসিন এলেই সব সমস্যার সমাধান— এমন ভ্রান্ত নিরাপত্তা বোধ থেকে সাধারণ মানুষকে অবিলম্বে বেরোতে হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী-গবেষকেরা।
এই মুহূর্তে কোভিড ভ্যাকসিনের যে প্রোটোকল তৈরি করছে বিভিন্ন নির্মাতা সংস্থা, তার সিংহভাগই হল ‘টু শট’ ভ্যাকসিন। অর্থাৎ, দু’বার ভ্যাকসিন নিতে হবে কাউকে। কিন্তু তার পরেও যদি কাজ না হয়, তা হলে সে ক্ষেত্রে তৃতীয় শটও নিতে হতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। শুধুমাত্র ভারতের জনসংখ্যাই যদি দেখা যায়, তা হলেও যে পরিমাণ ভ্যাকসিনের ডোজ প্রয়োজন, তা এক বারে উৎপাদনের ক্ষমতা এই মুহূর্তে কোনও ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থারই নেই।
সে কারণে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে নীতি নির্ধারণ করা হচ্ছে। কী ভাবে ভ্যাকসিন ‘ডিস্ট্রিবিউট’ করা হবে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করছে এই বিষয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এমেরিটাস-বিজ্ঞানী নরেন্দ্র কে মেহরা বলেন, ‘‘সবাই একসঙ্গে ভ্যাকসিন পাবেন না। কাদের কাদের ভ্যাকসিন প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করে তাঁদের প্রথম দেওয়া হবে। তেমনটাই ঠিক করছে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি।’’
আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিন এলেও তা বিতরণের পরিকল্পনা প্রয়োজন, বললেন অভিজিৎ
কিন্তু এখানে একটি সমস্যা কাজ করছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। তা হল, কোভিড ১৯-এর অ্যান্টিবডি শরীরে কত দিন স্থায়ী হয়, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে। কারণ, শরীরে অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বের উপরে ভ্যাকসিন গবেষণা অনেকাংশে নির্ভর করে। এমনিতে সাধারণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, দু’বছরের বেশি প্রতিরোধী শক্তি শরীরে থাকে না। পাঁচ-ছ’মাসের পরেই অ্যান্টিবডি ‘ডিটেক্টেবল লেভেল’-এর নীচে চলে যায়।
আরও পড়ুন: শুরু নিউ নর্ম্যাল, ছোটদের সুরক্ষায় এই সব মানতেই হবে
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিনের যে প্রোটোকল তৈরি করা হচ্ছে, তা অনুমানভিত্তিক। কারণ, শরীরে কত দিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী শক্তি কাজ করছে, সে সংক্রান্ত পরস্পরবিরোধী বক্তব্য অনেক জায়গায় উঠে আসছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ বলছেন চার মাসের পরে কোভিডের ইমিউনিটি আর থাকে না। আবার অনেকে বলছেন, পাঁচ মাসের পরেও শরীরে ভালই ইমিউনিটি থাকে। এর মূল কারণটা হল, আমরা এখনও ভাইরাসটাকেই ভাল করে বুঝে উঠতে পারিনি।’’ তবে এটুকু পরিষ্কার, ভ্যাকসিন বাজারে এলেও সঙ্গে সঙ্গে তা সবার কাছে পৌঁছবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরামর্শদাতার কথায়, ‘‘ভ্যাকসিন বাজারে এলেই নিমেষে সব সমস্যা মিটে যাবে, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। কারণ, ভ্যাকসিন বাজারে এলেও তা কত দিনে সবার কাছে পৌঁছবে, তার সঙ্গে ভ্যাকসিনের উৎপাদন, সরবরাহ, বণ্টন-সহ একাধিক বিষয় ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ফলে ভ্যাকসিন আসছে, অতএব সব ঠিক হয়ে যাবে, এই ভ্রান্ত নিরাপত্তায় না থাকাই ভাল।’’
সিরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০২৪ সালের আগে কখনওই বিশ্বের সবার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এমনিতেই জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই ভ্যাকসিন না-ও পেতে পারেন। যাঁদের কাছে পৌঁছনো যাবে, তাঁদের ক্ষেত্রেও ২০২৪ সালটা হল ন্যূনতম সময়। বাস্তবে তার থেকেও বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy