একা করোনায় রক্ষা নেই দীপাবলি দোসর! যার প্রেক্ষিতে আলোর উৎসবেও সংযম দেখানোর কথা বলছেন চিকিৎসকেরা।
দুর্গাপুজোর মতো দীপাবলিতে বাজির ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে সরব হয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা চিঠি লিখে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম। নবান্ন সূত্রের খবর, এ বছর দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপের আর্জি জানিয়েছে রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিও। যার প্রেক্ষিতে দ্রুত বৈঠক করে এ বিষয়ে করণীয় স্থির করার পরিকল্পনা করেছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, দীপাবলির সময় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে। এর উপরে বাজি থেকে নির্গত বালি, ধুলো, সিলিকন সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়), হাঁপানির রোগীদের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলায় প্রতি বছরই আলোর উৎসবে বাজির ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করা হয়। করোনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একাংশের মতে, কোভিড আবহে সেই সতর্কবার্তা মেনে চলা বাধ্যতামূলক। তাঁদের মতে, কোভিডে দেহের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও মূলত এটি শ্বাসতন্ত্রের অসুখ। ফুসফুসের রক্তবাহী নালীতে রক্ত জমাট বেঁধে সমস্যা তৈরি হওয়ায় পাশাপাশি ‘পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিস’ও রয়েছে। এ ধরনের রোগীরা কোভিড থেকে সুস্থ হলেও দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন: ১৭ শতাংশ কোভিড মৃত্যুর নেপথ্যেই দূষিত বায়ু
বেসরকারি হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট অরিন্দম মুখোপাধ্যায় জানান, আক্রান্তেরা সাধারণত তিন ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। ভাইরাসের হানায় একদল রোগীর ফুসফুস হয়তো ততখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু মাংসপেশী দুর্বল হওয়ায় রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আবার কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে যাঁদের ফুসফুস জখম হয়েছে তাঁরা স্বাভাবিক হাঁটাচলা করার সময়ও দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি অনুভব করছেন। অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এমন রোগীও রয়েছেন। অরিন্দমের কথায়, ‘‘এই তিন ধরনের রোগীর ক্ষেত্রেই বাজি আদতে বিষবায়ু বহন করবে।’’
আর এক পালমোনোলজিস্ট সুস্মিতা রায়চৌধুরী জানান, পালোমোনোলজির বহির্বিভাগে যে সব রোগী এখন আসছেন, তাঁদের ১০ শতাংশই কোভিড পরবর্তী সমস্যার শিকার। তাঁর কথায়, ‘‘গুরুতর অসুস্থ করোনা-আক্রান্তদের মধ্যে একাংশের ফুসফুসের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা শেষ করে দিচ্ছে কোভিড।’’
আরও পড়ুন: এক জন ‘সুপার স্প্রেডারে’ আক্রান্ত কত, বাড়ছে শঙ্কা
দেহে কোভিডের অনুপ্রবেশে ফুসফুস তার কার্যক্ষমতা হারালে অনেক ক্ষেত্রে ইকমো’র (এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজিনেশন) সাহায্য নেওয়া হয়। ‘ইকমো সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র সভাপতি চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে সব করোনা আক্রান্ত দীর্ঘদিন আইসিইউয়ে থাকার পরে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল। বাজির ধোঁয়া তাঁদের কাছে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি করবে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে মাঝারি মাপের অসুস্থতা ছিল। এমন রোগীদেরও অসুখ বাড়িয়ে তুলতে পারে বাজির ধোঁয়া।
বক্ষরোগের প্রবীণ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এ দেশের আবহাওয়ায় শীতকালে কোভিড কী ভেল্কি দেখাবে, তা এখনও অজানা। রাজ্যে ৭৮ শতাংশ করোনা-আক্রান্ত হোম আইসোলেশনে থাকার পরেও গুরুতর অসুস্থ করোনা-আক্রান্তদের আইসিইউ-সিসিইউয়ের শয্যার জোগান দিতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এরই মধ্যে দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর অর্থ করোনা-আক্রান্তদের পাশাপাশি সিওপিডি, হাঁপানি রোগীদের খাদের ধারে এনে দাঁড় করানো। তাঁর কথায়, ‘‘করোনায় যাঁদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সময়ের সঙ্গে তাঁদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে পারে। আবার আজীবন অক্সিজেন, ওষুধের উপরে নির্ভরশীল থাকতে হতে পারে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে করোনায় মৃত্যুর হার হয়তো ১.৪৮ শতাংশ। কিন্তু কোভিড অনেককে যে প্রতিবন্ধী করে দিচ্ছে, তা ভুললে চলবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy