কোভিড এড়াতে প্রসূতীরা মেনে চলুন বাড়তি সতর্কতা। ছবি: আইস্টক।
লকডাউনে সারা ক্ষণ পরিবারের সঙ্গ পেলেও এক অজানা আশঙ্কা হবু মায়েদের মনে কাঁটার মতো খচখচ করে। বিশেষ করে যাঁরা প্রথম বার মা হতে চলেছেন, তাঁরা অনভিজ্ঞতার দরুণ আরও বেশি মানসিক উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
যাঁরা মা হতে চলেছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট সময় পর পর কিছু টেস্ট করানো ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হয়। কিন্তু এই লকডাউনের সময় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাওয়ার আগে একটু ভাবতেও হচ্ছে। তাই নিতান্ত প্রয়োজন না হলে অন্তঃসত্ত্বাদের বাড়ির বাইরে না বেরনোই ভাল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ঠিক কী কী মানতে হবে এ সময়?
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বাড়তি সাবধানতা নেওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় ওষুধ, যেমন ফোলিক অ্যাসিড ও অন্য ওষুধ খেতে ভুললে চলবে না। আর সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে। প্রতি বার খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত রগড়ে ধুতে হবে। নাকে, মুখে, চোখে কখনওই হাত দেওয়া চলবে না। বাড়িতে কারও হাঁচি, সর্দি হলে তাঁর কাছাকাছি যাওয়া একেবারে মানা। এ ক্ষেত্রে হবু মা কে অন্য ঘরে থাকতে হবে, নাক মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখা দরকার।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বাড়ির লোকজনকে কী ভাবে সময় দেবেন?
অবসাদ থেকে সরে আসতে হবে দ্রুত।
‘আমেরিকান কলেজ অব অবস্ট্রেটিশিয়ান অ্যান্ড গায়নকোলজি’ হবু মা এবং সদ্য মায়েদের জন্য সার্স কোভ-২ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটা গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে। সেখানেও বাড়িতে থাকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে লকডাউনের সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকককে ফোন করে সমস্যার কথা জানাতে হবে।
অভিনিবেশবাবুর মতে, এই সময় হবু মাকে ভাল থাকতে গেলে কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমন:
গর্ভাবস্থায় কিছু রুটিন টেস্ট করা প্রয়োজন। লকডাউনের সময় আলট্রাসোনোগ্রাফি-সহ অন্যান্য পরীক্ষার দিন পূর্ব নির্ধারিত থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে নিতে হবে। খুব সমস্যা না হলে কয়েক দিন পরে টেস্ট করা যেতে পারে। হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে যাওয়া উচিত। মাস্ক পরাও বাধ্যতামূলক। হাসপাতালই হোক অথবা ক্লিনিক, যে কোনও মানুষের থেকে হবু মাকে ৬ ফুট দুরে থাকতে হবে। কোনও অবস্থাতেই মুখে, চোখে বা নাকে হাত দেওয়া চলবে না। বাড়ি ফিরে পোশাক সাবান জলে কেচে, সাবান মেখে পরিস্কার হয়ে তবেই ঘরে যেতে হবে। এই সময় মোবাইল, আংটি, ঘড়ির ব্যবহার কমিয়ে দিন। কেননা, এগুলো থেকেও কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুকি থাকে।
হবু মা এবং যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন, তাঁদের ভয় ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। সঙ্গে যোগ হয়েছে কোভিডের আতঙ্ক। তবু এর মধ্যেই ভাল থাকতে হবে। ফিজিক্যাল ডিস্ট্যানস বজায় রাখতে হলেও টেলিফোনে বন্ধু ও ভাই-বোনদের সঙ্গে গল্প করতে পারেন। ভাল বই পড়লে মন ভাল থাকে, দুপুরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বই পড়ুন। বাড়ির হালকা কাজকর্ম, রান্না সবই করতে পারেন। টেলিভিশনে সিনেমা দেখতে পারেন, তবে করোনা সংক্রান্ত খবর মনের উপর চাপ দিলে তা দেখবেন না। কোনও রকম শারীরিক সমস্যা হলে ঝুঁকি না নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে ফোন করতে হবে। দরকার হলে অবিলম্বে হবু মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: পরোক্ষে ঘ্রাণশক্তিকে নষ্ট করে কোভিড-১৯, জানাল গবেষণা
হবু মায়ের যদি সর্দি কাশি হয় গরম জলে গার্গল করবেন, অসুখটা বাড়তে দেবেন না। কিন্তু যদি এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকে এবং ঠোঁট বা মুখে নীলচে আভা দেখা দেয়, তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা ভাবতে হবে ও প্রয়োজনে পরীক্ষা করাতে হবে। কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে ভেঙে পড়বেন না। বরং কিছু নিয়ম মানলে ও সাবধানে থাকলে এই অসুখ সেরেও যায়।
আশার কথা
• সদ্যজাত শিশুর বেলায় এই ভাইরাস অত মারাত্মক আকার নিতে পারছে না।
• ‘দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স’-এ এক জন করোনা পজিটিভ প্রসূতির স্বাভাবিক ভাবে প্রসব হয়েছে, বাচ্চাটির কোভিড-১৯ নেগেটিভ।
• প্রমাণ মিলেছে, মায়ের দুধে করোনাভাইরাস থাকে না। তাই করোনা আক্রান্ত মায়েরও বাচ্চাকে দুধ দিতে কোনও বাধা নেই।
• হায়দবাবাদের একটি ওষুধ প্রস্তুতকতারী সংস্থা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ‘ক্লোরোফ্লু’ নামে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, এটি ফেজ-৩ ট্রায়ালে যাচ্ছে। আশা করা যায়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই ভ্যাক্সিনের সাহায্য মিলবে। প্রসূতীদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাক্সিন আরও ভাল কার্যকর বলে গবেষকদের মত।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy