প্রতীকী ছবি।
করোনার মোকাবিলা করতে হলে বাড়াতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর তার জন্য বেশি করে খেতে হবে প্রোটিন বা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ কথা অজানা নয় একটি শিশুরও। কিন্তু সেই প্রোটিন মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খেতে শুরু করলে তা থেকে যে হিতে বিপরীত হতে পারে, তা কি সকলে জানেন?
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের বক্তব্য, আজকাল ঠিক এটাই ঘটছে। খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তো থাকছেই, তার পাশাপাশি অনেকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই নিতে শুরু করেছেন প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। আর দিনের পর দিন অতিরিক্ত প্রোটিন সেবনের এই প্রবণতা ডেকে আনছে অন্য বিপদ। দেখা দিচ্ছে ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ওজন বৃদ্ধি-সহ কিডনি এবং লিভারের একাধিক সমস্যা। পুষ্টিবিদদের বক্তব্য, ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়ার এই প্রবণতা বড়সড় বিপদ ডেকে আড়তে পারে।
মানবদেহে প্রোটিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে প্রোটিন। সেই কারণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। তবে তাঁদের সেই পরামর্শ মানতে গিয়ে যাঁরা বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন, ভয়টা দেখা দিয়েছে তাঁদের নিয়েই।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিনকে বেশি করে জায়গা দিতে খাদ্য তালিকা বদলে গিয়েছে অনেকেরই। শরীরের যতটা প্রয়োজন, তার তুলনায় অনেকটাই বেশি পরিমাণ ডিম, মাছ, মাংস-সহ নানা ফলমূল খাচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে অনেকে আবার প্রোটিন সাপ্লিমেন্টও নিচ্ছেন। অত্যধিক পরিমাণ এই প্রোটিন সকলের শরীর নিতে পারছে না। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রোটিনের আধিক্যে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনই শরীরের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে শরীরে মেদ জমে, যা পরবর্তীকালে কিডনি, লিভার-সহ শরীরের একাধিক অঙ্গের ক্ষতি করতে থাকে। সেই ক্ষতি ভবিষ্যতে শরীরে আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তাই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনেই খাবারের তালিকায় প্রোটিন রাখার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘শরীরের জন্য ডিম, মাছ, মাংস জরুরি। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত কখনওই নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে শরীরে তা চর্বি হিসেবে জমে যাবে। যা ধীরে ধীরে কিডনি-সহ একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করবে। ভবিষ্যতে যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।’’
চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী বললেন, ‘‘প্রোটিন জাতীয় খাবার নিয়মিত ভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। এর ফলে একাধিক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।’’ তিনি চিকিৎসক অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েই খাওয়াদাওয়ার পরামর্শ দেন।
পুষ্টিবিদ রেশমি রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘গত কয়েক মাসে ওজন বেড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। অনেকেরই হঠাৎ করে সুগার, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। এমনকি, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও অনেকেই একাধিক জটিল সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়াই অনেক ক্ষেত্রে সমস্যাজর জন্ম দিচ্ছে।’’
আর এক পুষ্টিবিদ অর্পিতা ঘোষ দেব বললেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষেরই বয়স এবং কাজের ধরন অনুযায়ী খাওয়াদাওয়া করা উচিত। দিনের পর দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে ঢুকলে একাধিক সমস্যা তৈরি হবে।’’ তিনি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সুষম আহারের পরামর্শ দেন।
তাই খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন নয়, বরং পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার উপরেই জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। আর তাতেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে বলে অভিমত তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy