হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে বিতর্ক চলছেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে উল্লেখ করলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের এখনও যথেষ্ট সংশয় আছে। কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (এইচসিকিউ) ওষুধটি কতটা কার্যকর সে এখনও সমীক্ষা চলছে। অতি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক মুখপাত্র ও দেশের অগ্রণী দৈনিক ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-কে জানিয়েছেন যে ও দেশে এইচসিকিউ নিয়ে যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছিল তা বন্ধ করে দেওয়া হল। প্রায় ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু সে রকম উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়নি। সেই কারণেই কোভিড-১৯ আক্রান্তরা আর এই ওষুধটি প্রয়োগ করতে চাইছেন না। আমেরিকার টেনেসির ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক উইলিয়াম স্ক্যাফনার ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-কে জানিয়েছেন, ওষুধটির প্রথম ট্রায়ালের পর সে রকম উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়নি। তাই এইচসিকিউ-এর পরিবর্তে অন্য কার্যকর চিকিৎসা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের পক্ষে জানানো হয়, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সঙ্গে সঙ্গে ক্লোরোকুইন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন ওষুধের কম্বিনেশন নভেল করোনা আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের উপর প্রয়োগ করে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়নি বলে অন্য রোগীরা এই ওষুধের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই প্রয়োগ করার মতো যথেষ্ট রোগীর অভাবে তাঁরা একপ্রকার বাধ্য হয়ে ট্রায়াল দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। অন্য দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এইচসিকিউ ওষুধটি প্রয়োগ করে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মৃত্যুহার কমানো যায়নি। এই কারণেই ব্যাপক হারে ট্রায়াল বন্ধ করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানান, ‘‘আমরা যারা সরাসরি রোগীদের সঙ্গে কাজ করি তারা নির্দিষ্ট মাত্রায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিই। এ ছাড়া আইসিএমআর-এর নির্দেশিকা মেনে ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার, যেমন পুলিশ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের এইচসিকিউ নিতে বলা হয়েছে। আবার ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের ওষুধটি দেওয়ার কথা বলা হলেও আমি ব্যক্তিগত ভাবে দেওয়ার পক্ষপাতী নই।’’ তিনি বলেন, ‘‘ওষুধটির কার্যকারিতা সম্পর্কে এখনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আবার কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অন্যান্য কিছু উপসর্গভিত্তিক ওষুধের পাশাপাশি এইচসিকিউ-ও দিচ্ছি। নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ না থাকায় এই ওষুধটির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে গেলে সুদীর্ঘ ট্রায়াল দিতে হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর। এখনও সেই পরিসংখ্যান আমাদের হাতে আসেনি।’’
আরও পড়ুন: আগামী এক মাসে করোনা-চিত্রটা কেমন হতে পারে ভারতে
ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ছাড়াও আরও অন্যান্য কিছু ওষুধ আমরা ব্যবহার করছি। ডেনমার্কে তৈরি আরও একটি উন্নতমানের ওষুধ কিছু দিনের মধ্যেই এসে গেলে হয়তো রোগীদের আরও একটু কষ্ট কমবে বলে আশা করা যায়।’’ শ্যামাশিসবাবু জানালেন, প্রত্যেক চিকিৎসাকর্মী সপ্তাহে এক দিন করে এইচসিকিউ খাচ্ছেন, রোগ প্রতিরোধে এটিই একমাত্র উপায়।
আরও পড়ুন: বাবা দিবসে ‘স্বর্গীয় ফল’ অথবা কমলালেবু-চকোলেটের যুগলবন্দি
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের বক্তব্য, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের উপর এই ওষুধ প্রয়োগে দেখা গিয়েছে যে এইচসিকিউ ওষুধটি কোষের পিএইচ ব্যালান্সের তারতম্য ঘটিয়ে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির গতি থামিয়ে দিতে পারে। নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ না থাকায় কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ওষুধের ডোজ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে এই ওষুধটি প্রয়োগ করার আগে রোগীর ইসিজি করিয়ে নেওয়া উচিত। কেননা এইচসিকিউ ওষুধটির নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম হার্টের এক নির্দিষ্ট ছন্দ (কিউ টি) থামিয়ে দেওয়া। ইসিজি করে যদি দেখা যায় হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সমস্যা আছে তা হলে এই ওষুধটি না দেওয়াই ভাল। অরিন্দমবাবু জানালেন, এ সব সত্ত্বেও নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধটি ব্যবহার করা হচ্ছে জেনে আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাঁর কথায়: ‘‘আমরা যারা চিকিৎসা করি তারাও নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ খেয়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে আটকানোর চেষ্টা করছি।’’
তবে একই সঙ্গে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খাবেন না। কোভিড-১৯-এর ওষুধ থাকুক বা না থাকুক, অসুখটি যে অত্যন্ত ছোঁয়াচে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই মাস্ক পরা ও মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। এ ছাড়া সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর আপ্তবাক্যটি ভুললে চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy