Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
কোভিডে আক্রান্ত প্রায় ২ কোটি, সুস্থ ১ কোটি ৩২ লক্ষ
Coronavirus

কলেরা-টাইফয়েডের থেকে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ

গত ৩১ ডিসেম্বরে কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত, অর্থাৎ এই ২২৪ দিনে সাম্প্রতিক অতিমারিতে মারা গিয়েছেন ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ!

ঘেঁষাঘেঁষি: কোভিড সংক্রমণ রোখার অন্যতম উপায় দূরত্ব-বিধি মানা। তবে অনেকেই তা মানছেন না। মঙ্গলবার, ক্যামাক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

ঘেঁষাঘেঁষি: কোভিড সংক্রমণ রোখার অন্যতম উপায় দূরত্ব-বিধি মানা। তবে অনেকেই তা মানছেন না। মঙ্গলবার, ক্যামাক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৮:৩৪
Share: Save:

কলেরা ও টাইফয়েডে বছরে সারা বিশ্বে গড়ে যত জন মানুষ মারা যান, গত সাত মাসে কোভিড ১৯-এ মৃত্যু হয়েছে তার দ্বিগুণের বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর কলেরা (১ লক্ষ ৪৩ হাজার) ও টাইফয়েডে (১ লক্ষ ৬১ হাজার) গড়ে ৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু (মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চ ধরে) হয়। সেখানে গত ৩১ ডিসেম্বরে কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত, অর্থাৎ এই ২২৪ দিনে সাম্প্রতিক অতিমারিতে মারা গিয়েছেন ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ! যে কারণে সাধারণ মানুষের একটি অংশ এই মুহূর্তে ‘ডেথ অ্যাংজ়াইটি’ বা মৃত্যুভয়ে আক্রান্ত বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। অবশ্য তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্তের সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সে তথ্য গৌণ হয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ তথ্য দিয়ে জানাচ্ছেন, মার্সের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছিল, সংক্রমিত রোগীর ৩৫ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। প্লেগের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার হল ৩০-৬০ শতাংশ। শুধুমাত্র ডেঙ্গিতেই বিশ্বে প্রতি বছর ১০-৪০ কোটি মানুষ সংক্রমিত হন। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে যার মৃত্যুহার ২০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে। আবার ২ লক্ষ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যান ইনফ্লুয়েঞ্জায়। কিন্তু ২১৫টি দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ করোনা সংক্রমিত হওয়ার পরে সে সব তথ্য খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না অনেকের কাছেই। ডব্লিউএইচও-র সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ২ কোটি সংক্রমিতের মধ্যে ১ কোটি ৩২ লক্ষের মতো মানুষই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে যত পরিমাণ অ্যাক্টিভ কেস রয়েছে, তার ৯৯ শতাংশই হল মৃদু উপসর্গের রোগী। শুধুমাত্র এক শতাংশ রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক। কিন্তু সেটা গুরুত্ব পাচ্ছে না।’’

মৃত্যুর খতিয়ান

রোগ মৃতের সংখ্যা
• কলেরা - ২১ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার

• টাইফয়েড - ১লক্ষ ২৮ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৬১ হাজার
• ইনফ্লুয়েঞ্জা - ২ লক্ষ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ

• কোভিড-১৯ - ৭ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৯৮ (মঙ্গলবার পর্যন্ত)


(কলেরা, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জার সংখ্যা বছরে, কোভিড-১৯-এর সংখ্যা সাত মাসে)

গুরুত্ব না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এল এম শ্রীবাস্তব জানাচ্ছেন, কোভিড ১৯-এর কারণে তৈরি হওয়া আতঙ্কের পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হল অনিশ্চয়তা, ‘সংক্রমিত হলে কী হবে’ এই চিন্তা। তাই মৃদু (মাইল্ড) উপসর্গ রোগীদের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের একটি অংশ এই ভেবে আতঙ্কে ভুগছেন, যদি সংক্রমণ না সারে তা হলে কী হবে! তাঁর কথায়, ‘‘অন্য কারণ হল স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অনিশ্চয়তা। যদি সঙ্কটজনক (ক্রিটিক্যাল) পর্যায়ে সংক্রমণ পৌঁছয়, তা হলে ঠিক মতো পরিষেবা পাওয়া যাবে তো? এই চিন্তাও কাজ করছে।’’ করোনা রোগীদের মানসিক চিকিৎসার জন্য গঠিত ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’-এর ‘ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্য প্রশান্তকুমার রায় বলছেন, ‘‘সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা যে ভাবে সর্বত্র প্রচার হচ্ছে, তার ফলেই মানুষের একটি অংশের মধ্যে ডেথ অ্যাংজ়াইটি কাজ করছে।’’

তবে বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ এও মনে করছেন, একটু ভয় থাকা ভাল। তা হলে সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে নিয়ম মানবেন সাধারণ মানুষ। এক গবেষকের কথায়, ‘‘এই সংক্রমণ রোখার একমাত্র পথই হল মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি, হ্যান্ড হাইজিন মেনে চলা। সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সে নিয়ম মানছেন অনেকে। কিন্তু একটি শ্রেণির মধ্যে এখনও নিয়ম না মানার বেপরোয়া মনোভাব কাজ করছে। যে কারণে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে আরও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19 Cholera Typhoid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy