প্রতিবেশী করোনা আক্রান্ত হলেই আশঙ্কার কিছু নেই। ফাইল ছবি।
করোনা আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের সামাজিক বয়কটের মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক বার। কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসক, কোনও ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মী বা নার্সকে পাড়া ছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিগ্রহও করা হয়েছে করোনা রোগীকে। অযথা একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশীর করোনা মানে আপনারও করোনা হয়ে যাবে, এমন ভেবে ফেলেছেন কেউ কেউ। এমনকি একই আবাসনে কারও করোনা মানেই বাকি আবাসিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেশীর কেউ করোনায় মারা গেলে, সেই আতঙ্ক আরও জোরদার হচ্ছে। করোনা আতঙ্কে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। চিকিৎসকরা কিন্তু বলছেন, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সর্দি, কাশি, জ্বর হলেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ, এমনটা ভাবার কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করলেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি বলেন, “সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে ঠিকই। কিন্তু আসলে এটা দৈহিক দূরত্ব। খানিকটা ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলা।”
আরও পড়ুন: ফল বা সব্জি ধোওয়ার ক্ষেত্রে এখন কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
কী কী খেয়াল রাখতে হবে
• প্রতিবেশীর করোনা হলে প্রথমেই ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া
• নিয়ম করে তাদের খাবারের বিষয়টি নিশ্চিত করা
• তাদের ওষুধের বিষয়ে খোঁজ রাখা
• প্রয়োজনে অনলাইনে অর্ডার করে দেওয়া কিংবা ওষুধ কিনে বাইরে রেখে দেওয়া, তার পর স্যানিটাইজ করে নেওয়া
• মুখোমুখি বা পাশাপাশি জানলা থাকলে তা বন্ধ করে রাখাই শ্রেয়
• অসুস্থ বোধ করলে থানা কিংবা অ্যাম্বুল্যান্সে খবর দেওয়া
• বয়স্ক মানুষ একা রয়েছেন, সে ক্ষেত্রে সেফ হোমে রাখার বিষয়েও রাজ্য সরকারের হেল্পলাইনে ফোন করে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে
পাশে থাকুন সহানুভূতির সঙ্গে। ছবি: এএফপি
এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “গোষ্ঠীবদ্ধ জীব মানুষ। সবার আগে সেটা মাথার রাখতে হবে। তাই পাশের বাড়িতে কিংবা পাশের ফ্ল্যাটে করোনা হলেই যে আপনার হবে, এমনটা কখনও নয়। সবরকম ভাবে তাদের পাশে থাকুন। নিজের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে ওই মানুষগুলোই তো পাশে দাঁড়াবে।” প্রতিবেশী একা থাকলে তাকে পালা করে খাবার দেওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে বলেন সুবর্ণবাবু। কিন্তু সরাসরি সংস্পর্শে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেশী একা থাকলে তাকে খাবার দেওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখুন। ছবি: শাটারস্টক
করোনা আবহে সাধারণ ভাবে যা যা মাথায় রাখতে হবে
• সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
• মাস্ক পরা
• পারলে ফেস শিল্ড ব্যবহার
• বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া
• বাইরে বেরলে সাবান জলে সম্পূর্ণ ভাবে স্নান করে নেওয়া
• সর্দি-কাশির ধাত থাকলে গরম জলের ব্যবহার
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা কোথায় কত দূর? এ নিয়ে যা যা মাথায় রাখতেই হবে
প্রতিবেশীকে ছুঁলেই কি করোনা
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস এই প্রসঙ্গে বলেন, “কাউকে ছুঁলেই যে করোনা হবে, এই ধারণাও ভুল। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাইরাস শরীরে এলে তবেই করোনা আক্রান্ত হতে পারেন কেউ। তাই এ বিষয়ে ভুল ধারণাগুলো মাথা থেকে বের করে দিতে হবে। প্রতিবেশী অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনি কি চুপ করে থাকবেন? তখন তো তার পাশে দাঁড়াতেই হবে। তাই সতর্ক থাকুন। কিন্তু কোনও রকম আতঙ্কের ফাঁদে পড়বেন না। মানুষকে একঘরে করা কিংবা অচ্ছ্যুতের মতো দেখার যে প্রবণতা তা মারাত্মক। আমার আবাসনেও করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। আবসনেই তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে। একলা থাকার বা আইসোলেশনে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে তাঁর। তাই পাশে থাকুন সহানুভূতির সঙ্গে। দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখুন। কোনও রকম আতঙ্ক রাখবেন না।”
সামাজিক দূরত্ব মানে দৈহিক দূরত্ব, পাশে থাকুন সহানুভূতির সঙ্গে
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, “আমরা যাঁরা কোভিড রোগীদের নিয়ে কাজ করছি, তাঁরা সাবধানে রয়েছি। সবাই তো আক্রান্ত হননি। নিয়ম মেনে চলেছেন তাঁরা। সাফাইকর্মীদের অনেকেই যখন নিরাপদে আছেন, যথাযথ পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সবার আগে প্রশাসনকে এ বিষয়টির ভাল করে দায়িত্ব নিতে হবে। হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে যেন আর্ত ব্যক্তি সাহায্যটুকু পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রশান্তকুমার রায়ের মত, “করোনা আবহে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সবথেকে বেশি জরুরি। করোনা হলেই যে খারাপ কিছু হবে এ জাতীয় ভাবনা ঝেড়ে ফেলতে হবে। ইতিবাচক থাকতে হবে। যে বাড়িতে করোনা হয়েছে, তাঁদেরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রতিবেশীদেরও সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখতে হবে। বয়স্ক প্রতিবেশীকে সাহস জোগান। মনের জোরের সঙ্গে রোগ প্রতিরোধের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। করোনা হলে কিছু হবে না, নিয়মে থাকলেই সেরে যাবেন, এ কথা অনেকটাই মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে।”
আরও পড়ুন: বাচ্চাদের জ্বরের সঙ্গে এই সব উপসর্গ? সাবধান, কাওয়াসাকি বা এমআইএস- সি হতে পারে
বয়স্ক প্রতিবেশীকে বোঝাতে হবে রোগের গুরুত্ব, সাহস জোগাতে হবে। ছবি:শাটারস্টক
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy