Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
whatsapp

শুধু ভারতীয়দের ফোনেই আড়ি হোয়াটসঅ্যাপের, দু’মুখো নীতিতে বিতর্ক

ইউরোপে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপ রীতিমতো সাবধানী। ভারতের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটছে কেন?

কেন দু’ধরনের নীতি হোয়াটসঅ্যাপের? প্রশ্ন নানা মহলে।—ফাইল চিত্র

কেন দু’ধরনের নীতি হোয়াটসঅ্যাপের? প্রশ্ন নানা মহলে।—ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:১৬
Share: Save:

ভারতীয় হিসাবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করলে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য মোটেই সুরক্ষিত নয়। কিন্তু ইউরোপীয় ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টোটা। এই খবর সামনে আসায় মেসেজিং অ্যাপটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও উস্কে দিয়েছে।

ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের বিষয়ে নীতি বদলানোর পর হোয়াটসঅ্যাপের তরফে জানানো হয়েছে, ইউরোপে এই বিষয়টি নিয়ে তাদের পলিসির বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য ফেসবুকের কাছেও চলে যাবে বলে জানিয়েছিল মেসেজিং অ্যাপটি। কিন্তু ইউরোপে তা হবে না। সেখানকার ব্যবহারকারীর অর্থনৈতিক লেনদেন, অনলাইনে কেনাকাটা বা লোকেশন সার্ভিসের ডেটা হোয়াটসঅ্যাপ তাদের মূল কোম্পানি ফেসবুককে দেবে না।

কেন এই দু’মুখো নীতি? এর পিছনে রয়েছে ইউরোপের ‘দ্য জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন’ বা জিডিপিআর-এর ভূমিকা। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে এই আইন বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ইউরোপিয়ান কমিশন ২০১৭ সালে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১১০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা ধার্য করে এই আইন ভাঙার জন্য। ফেসবুকের অপরাধ ছিল, তারা জানায়নি, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর ফেসবুকের কাছেও চলে যাবে। এই ঘটনার পর থেকেই ইউরোপে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপ রীতিমতো সাবধানী। তা হলে ভারতের ক্ষেত্রে এর উল্টোটা ঘটছে কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কারণ ভারতে সাইবার আইনে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে এখনও সে ভাবে কড়া পদক্ষেপ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালে ‘পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল’ বা পিডিপি বিলের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু তা নিয়ে যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটি বা জেপিসি এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে এরই ফাঁকতালে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের অন্দরে ঢুকে পড়তে পারছে হোয়াটসঅ্যাপ। শুধু তাই নয়, সে তথ্য তারা পাঠিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকের কাছেও। ভবিষ্যতে এই আইন বলবৎ হলে, হোয়াটসঅ্যাপ বা তাদের মতো অন্য অ্যাপের নীতিতে বদল আসবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তা হলে কি ভারতীয়দের হাতে তথ্য সুরক্ষিত রাখার কোনও রাস্তাই নেই? অবশ্যই আছে বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ৪৩ এ ধারায় ব্যক্তিগত তথ্যের সংরক্ষণ এবং বিনা অনুমতিতে তাকে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কী কী শাস্তি হতে পারে, তার উল্লেখ স্পষ্ট ভাবেই আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে প্রমাণ করতে হবে, তাঁর নিজের তথ্য নিয়ে এ ধরনের কিছু ঘটেছে। তাতে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। কিন্তু এক জন সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে এই আইনি জটিলতা সামলানো কঠিন এবং প্রমাণ করা আরও কঠিন বলেই, এখনও তেমন কিছু হয়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন তাঁরা।

তবে এ সবের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপও নেমে পড়েছে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে। বিভিন্ন জায়গায় তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছে, ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে তারা কতটা চিন্তিত। এবং সব জায়গাতেই বলা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপ কোনও ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত পরিসরে আড়ি পাতছে না। যদিও তাতেও লাভ হচ্ছে না। কারণ বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী ইতিমধ্যেই সিগন্যাল, টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলতে শুরু করেছেন। হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কে ভয়ও কাটছে না কোনও ভাবেই।

আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপ নয় প্রেম বাড়ছে টেলিগ্রামে, কী করে? জানাল আনন্দবাজার ডিজিটাল

আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপে ভয়! ‘দল’ বদলে দলে দলে সিগন্যাল আর টেলিগ্রামে

অন্য বিষয়গুলি:

WhatsApp policies privacy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE