Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
arthritis

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে ওজন ঠিক রাখতে হবে

বিভিন্ন ব্যথা বেদনার মধ্যে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বেশ মারাত্মক ধরনের। আবার অসুখটি আটকে রাখার জন্যে নিয়ম করে এমন কিছু ওষুধ খেতে হয়, যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোভিড সহ যে কোনও সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই যাঁরা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে কষ্ট পাচ্ছেন তাঁদের ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত বলে সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ।

হাতের ও পায়ের আঙুলের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা দিয়ে রোগের সূত্রপাত হয়। ছবি : শাটারস্টক

হাতের ও পায়ের আঙুলের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা দিয়ে রোগের সূত্রপাত হয়। ছবি : শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:৪৯
Share: Save:

শীতকালকে অনেকে পছন্দ করলেও কিছু মানুষ ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে ব্যথার ভয়ে কুঁকড়ে থাকেন। আসলে শীতকালে আর্থ্রাইটিস জাতীয় অসুখের ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বাড়ে। বিশেষ করে যাঁদের রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যা আছে, তাঁদের অনেকেই এই সময়টায় বেশ ভয়ে থাকেন। বিভিন্ন ব্যথা বেদনার মধ্যে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বেশ মারাত্মক ধরনের। তার উপর কোভিড আবহে রিউম্যাটয়েড আক্রান্তদের বিশেষ সতর্কতা নেওয়া দরকার, বলছিলেন মেডিসিন ও রিউম্যাটোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। কেন না, শীতের সময় ইনফ্ল্যামেশন অর্থাৎ প্রদাহ বেড়ে যায়। আবার অসুখটি আটকে রাখার জন্যে নিয়ম করে এমন কিছু ওষুধ খেতে হয়, যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোভিড সহ যে কোনও সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই যাঁরা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে কষ্ট পাচ্ছেন তাঁদের ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত বলে সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ।

এ দেশে প্রতি বছর ১০ লক্ষ মানুষ নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হন। দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা নিয়ে দিনযাপন করছেন। সংখ্যার হিসেবে প্রায় ১৩ কোটি। একটা সময় ছিল, যখন এই রোগের সে রকম ভাল চিকিৎসা না থাকায় মানুষ গৃহবন্দি জবুথবু জীবন যাপন করতে বাধ্য হতেন। কিন্তু মডার্ন মেডিক্যাল সায়েন্সের হাতে এখন অনেক উন্নত মানের ওষুধ আছে, যার সাহায্যে অসুখের বাড়বাড়ন্ত অনেকটাই আটকে রাখা সম্ভব বলে জানালেন রিউম্যাটোলজির বিশেষজ্ঞ অভ্রজিৎ রায়।

অস্থিসন্ধির প্রদাহকে ‘আর্থ্রাইটিস’ বলা হয়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস অসুখে হাতের ও পায়ের আঙুলের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা দিয়ে রোগের সূত্রপাত হয়, পরে তা গোড়ালি, হাঁটু, ঊরুসন্ধিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই অসুখটা একধরনের অটো ইমিউন ডিজিজ অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অস্থিসন্ধিকে শত্রু মনে করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যায়। এর ফলে হাত পায়ের আঙুলের গাঁট থেকে শুরু করে শরীরের কাঠামোর সব ক’টি জয়েন্টই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে বললেন অভ্রজিৎ রায়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস অস্থিসন্ধির আবরণ বা লাইনিংকে ধ্বংস করে দেয়। ভয়ানক ব্যথা হতে হতে জয়েন্টের হাড় ক্ষয়ে গিয়ে টিস্যু অর্থাৎ কোষকলা ফাইব্রোসিস হয়ে ফুলে ওঠে ও নড়াচড়া করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। সঠিক চিকিৎসা করা না হলে অস্থিসন্ধি বিকৃত হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন : গর্ভাবস্থার ব্যায়াম

সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন যে, ফিজিওথেরাপি ও ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানো হয়। অসুখটা শুরুতে ধরা পড়ার পর সঠিক ওষুধ প্রয়োগ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে রোগটার বিস্তার আটকে দেওয়া যায়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে অল্প জ্বর, খিদে কমে যাওয়া, গা ম্যাজ ম্যাজ করা, কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলার মতো সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়। এর পর হাত পায়ের আঙুল আড়ষ্ট লাগতে শুরু করে। বিশেষ করে সকালে ঘুম ভেঙে ওঠার পর ব্রাশ ধরতেও অসুবিধে হতে পারে। কিছুক্ষণ পর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। শুরুতে বেশির ভাগ মানুষই খুব একটা গা করেন না, বললেন অভ্রজিৎ রায়। চিকিৎসা শুরু না করলে শরীরের প্রায় সব ক’টি অস্থিসন্ধি এতে আক্রান্ত হয়। হাত পায়ের আঙুল ও অন্যান্য অস্থিসন্ধি গরম হয়ে ফুলে ওঠে। আঙুল ছাড়া কবজি, কনুই, কাঁধ, গোড়ালি, হাঁটু, ঊরুসন্ধি সব ক’টি জয়েন্টে সমস্যা শুরু হবার সম্ভাবনা থাকে। আর এই কারণেই একে বলে ‘রিউম্যাটয়েড পলিআর্থ্রাইটিস’। অস্থিসন্ধির আবরণ সায়নোভিয়ামকে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম শত্রু ঠাহর করে আক্রমণ করে বলে সমস্যা শুরু হয়। শুরুতেই ওষুধের সাহায্যে রোগটাকে আটকে দিতে না পারলে একে একে কার্টিলেজ, হাড় সবই আক্রান্ত হয়ে অস্থিসন্ধি বিকৃত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে জানালেন অভ্রজিৎ।

মেয়েদের ক্ষেত্রে এই অসুখের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ছাড়াও অন্যান্য অটোইমিউন ডিজিজ, যেমন থাইরয়েডের অসুখ, শ্বেতি ইত্যাদি বংশে থাকলেও এই অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। যদিও যে কোনও বয়সে এই অসুখ হতে পারে, তবে ৪০ – ৬০ বছর বয়সিরাই এতে বেশি আক্রান্ত হন। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ওজন হলে এই অসুখের সম্ভাবনা বাড়ে, ধূমপান এবং বায়ুদূষণও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে সিলিকা ও অ্যাসবেস্টরের দূষণ অন্যান্য অসুখের পাশাপাশি এই রোগকেও ডেকে আনতে পারে। তাই কোনও রকম সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করিয়ে রোগের চিকিৎসা শুরু করা উচিত বলেই জানান বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন : স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে কি না, জেনে নিন অ্যাপে

যাঁরা এই অসুখে ভুগছেন, তাঁদের ঠান্ডা লাগাতে বারণ করলেন সুকুমার মুখোপাধ্যায়। কেন না ঠান্ডায় ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। এ ছাড়া লাগাতার ব্যথার কারণে ও শারীরিক অসুবিধে থেকে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি থেকে শুরু করে হার্টের অসুখ হতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করার পাশাপাশি সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিতে হবে। অনেক সময় বাড়াবাড়ি রকমের রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে গোড়ালি, হাঁটু, ঊরুসন্ধির মতো অস্থিসন্ধি ক্ষয়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অস্থি শল্য চিকিৎসক সৌমিত্র মিশ্র জানালেন যে, এ ক্ষেত্রে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের সাহায্যে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়। জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া আর কোনও চিকিৎসায় রোগীর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব নয় বলে সৌমিত্র মিশ্রর অভিমত। তবে এখন নতুন নতুন ওষুধের সাহায্যে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসকে আটকে রাখা যায়। এ ছাড়া নিয়মিত এক্সারসাইজ, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ফলোআপ চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে সুস্থ থাকা যায়।

আরও পড়ুন : তুলনাহীন আর্গন তেল

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy