আমাদের দেশে বছরে ১০ মিলিয়ন মানুষ কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসে ভোগেন।
করোনার ভয়ে ইদানীং অ্যান্টিসেপটিক সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এর থেকে মুখে গলায় লালচে র্যাশ, সঙ্গে চুলকানি। ক্রিম, লোশন, ভেষজ নির্যাস কোনও কিছুতেই কাজ না হওয়ায় ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হল। শীতে ত্বক শুকিয়ে গিয়ে সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এই সময় কোনও রাসায়ানিক বা উল, সিন্থেটিক বা রঙের সংস্পর্শে ত্বকের উপর লালচে র্যাশ, জ্বালা, চুলকুনির ঝুঁকি বাড়ে। এই সমস্যার ডাক্তারি নাম ‘কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’ বা সংস্পর্শ জনিত ত্বকের সমস্যা, বললেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির প্রেসিডেন্ট ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর।
যদিও সারা বছরই এই সমস্যা নিয়ে ভোগান্তি হতে পারে, তবে শীতের শুকনো ত্বকে সমস্যা বাড়ে। আমাদের দেশে বছরে ১০ মিলিয়ন মানুষ কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসে ভোগেন। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গেছে যে, ১৫ বছরের বেশি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংস্পর্শ জনিত ত্বকের সমস্যা দেখা যায় সব থেকে বেশি, ৫৮ শতাংশ। ৭–১৫ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ এবং ২ বছরের নীচে ১১ শতাংশ। গবেষক দলের প্রধান সন্দীপন জানালেন যে, বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি বড়দের মধ্যেও কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের ঝুঁকি যথেষ্ট বেশি। চুলের ডাই, নেল পলিশ, লিপস্টিক, আলতা, সিঁদুর, ক্রিম, নানা রকমের ফেসিয়াল, হেয়ার ডাই, লিপস্টিক, সাবান, আফটার শেভ লোশন, সুগন্ধী তেল সহ যে কোনও কিছুর সংস্পর্শ কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া হাওয়াই বা প্লাস্টিকের চটি, সিন্থেটিক বা উলের পোশাক, জাঙ্ক জুয়েলারি সহ যে কোনও কিছুর সংস্পর্শে ত্বকের ক্রনিক সমস্যা, এমনকি শ্বেতীও হতে পারে।
প্রসাধনী ও পোশাক বা গয়নায় থাকা কেমিক্যালসের সংস্পর্শে ত্বকের যে সমস্যা হয় তারই ডাক্তারি নাম কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস, বললেন সন্দীপন। নামেই মালুম, কোনও বিপত্তিকর পদার্থের সংস্পর্শে ত্বকে যে প্রদাহ হয়, সেগুলোকেই আমরা বলি কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। তবে প্রসাধনী ব্যবহার করলেই যে ত্বকের অসুবিধে হবে, তা নয়। যে কোনও প্রসাধনী কিনে ব্যবহার করার আগে হাতে, কনুইয়ের সামনে বা কানের পিছনে সারা রাত লাগিয়ে দেখা উচিত, কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। বেশি ক্ষারযুক্ত সাবানে ত্বকের অসুবিধে আরও বেড়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার থেকেও কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হতে পারে।
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হলে অনেকেই নানান ভেষজ ক্রিম বা ওষুধ মেখে রোগ বাড়িয়ে ফেলেন।
প্রসাধনী তো আছেই, সঙ্গে এসে তাল মেলায় রোদ। অলক্ষ্যে ঘটে যায় কিছু ইমিউনোলোজিক্যাল ক্রিয়া-বিক্রিয়া। দেখা যায়, ফোটো ইরিট্যান্ট ডার্মাটাইটিস। দেখতে সানবার্নের মতোই। মুখ, গলা বা শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে মাথার তালুতেও কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হয়। এর থেকে চুল ঝরে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে সেমি-পার্মানেন্ট বা পার্মানেন্ট ডাই থেকে চুলের ক্ষতি হতে পারে, চুল ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। এমনকি হতে পারে জীবন বিপন্নকারী আনাফাইলেক্সিস, বললেন সন্দীপন। এই ব্যাপারটা হলে সারা গায়ে র্যাশ হয়ে, বা লাল হয়ে চুলকে, শ্বাসনালী তে ইডিমা হয়ে নিঃশ্বাসের সমস্যা হয়ে ভয়ঙ্কর বিপদের ঝুঁকি দেখা যায়।
আরও পড়ুন: কোভিডের নতুন স্ট্রেন ধরা পড়ার মতো কিট কি এ দেশে আছে?
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হলে অনেকেই নানান ভেষজ ক্রিম বা ওষুধ মেখে রোগ বাড়িয়ে ফেলেন। সন্দীপন ধর জানালেন যে, “ভেষজ প্রসাধনীর উপাদান না জেনে তা লাগানো ঠিক নয়। কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের প্রধান চিকিৎসা হল এই— যে কারণে সমস্যা হচ্ছে, তা ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া। এই সমস্যার চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে প্রথমেই নিখুঁত রোগ নির্ধারণ, ঠিক কী ধরনের অ্যালার্জি, আর কী থেকে সেই অ্যালার্জি হয়েছে সেটা বোঝা। তার পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। বেশির ভাগ সময় আমাদের চেম্বারেই এর চিকিৎসা করা হয়। যেমন অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খেতে হয়, লাগানোর স্টেরয়েড মলম বা লোশন ঠিক যে ভাবে চিকিৎসক বলে দেবেন, সে ভাবে লাগাতে হবে। কখনও আবার সিস্টেমিক স্টেরয়েড প্রয়োগ করতে হতে পারে, খাবার ওষুধ হিসাবে অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কখনো কখনও ৭–১০ দিনের চিকিৎসাতেই রোগের বিস্তার আটকে দেওয়া যায়। কিন্তু সেলফ মেডিকেশনে সমস্যা ক্রনিক হয়ে গেলে ত্বকের উপর কিছু দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে থেকে যাওয়া যেমন ত্বক চুলকে, কালো পুরু হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানো দরকার।”
আরও পড়ুন: রান্না করতে গিয়ে কোন ভুলগুলো আমরা বার বার করি, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস প্রতিরোধে যে কোনও কসমেটিক কেনার আগে তার লেবেলটি ভাল করে পড়ে নিতে হবে। কোন উপাদানে অ্যালার্জি, সেটা জানা থাকলে ভাল। বেশি দামি কসমেটিক মানেই যে তার থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে কথা মনে করার কোনও কারণ নেই। মনে রাখবেন, কোনও প্রসাধনী মেখে ফর্সা হওয়া যায় না। ফেয়ারনেস ক্রিম বলে বাজারে যা চলে তার অনেকগুলোতেই থাকে ব্লিচিং এজেন্ট আর স্টেরয়েড, যেগুলি না জেনে দীর্ঘদিন ত্বকে লাগালে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হতে পারে, চামড়া পাতলা হয়ে, লাল হয়ে, রক্তনালী ফুটে বেরতে পারে, মেয়েদের মুখে গজাতে পারে অবাঞ্ছিত লোম। তাই ফেয়ারনেস ক্রিম থেকে দূরে থাকাই ভাল। আর যে কোনও ত্বকের সমস্যায় সেলফ মেডিকেশন করলে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy