Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
breakfast

লকডাউনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বদল আনুন ব্রেকফাস্টে, পাতে থাকুক এ সব

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এমন কোন কোন খাবার রাখতে পারেন সকালের পাতে?

ব্রেকফাস্টের পাতেই থাকুক রোগ প্রতিরোধের মন্ত্র। ছবি: শাটারস্টক।

ব্রেকফাস্টের পাতেই থাকুক রোগ প্রতিরোধের মন্ত্র। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ১৩:১৮
Share: Save:

করোনার বাড়াবাড়ি হওয়ার আগে যে সব খাবার খুব একটা খাওয়া হত না, তারাই এখন ঢুকে পড়েছে গৃহস্থের হেঁশেলে। সচেতন হয়েছেন সবাই। নিজে হাতে কেটেবেটে রান্না করাই শুধু নয়, কোন উপাদান কতটুকু মেশালে কতটা পুষ্টি বাড়বে, সে হিসেবও এখন সবার নখদর্পণে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে রসনার চেয়ে বেশি কদর পাচ্ছে পুষ্টিগুণ। মুখরোচকের বদলে গুরুত্ব পাচ্ছে বাঙালির ঘরোয়া হাঁড়ি-হেসেলের খাবার। সকালের মালাই চা বা সুগন্ধি দার্জিলিং চায়ের বদলে মানুষ মজে উঠেছেন উষ্ণ গরম হলদি-দুধে। কেউ বেছেছেন ভেষজ চা, কেউ বা টাটকা উপাদান। ফলমূল-শাকসব্জি খাওয়ারও নতুন ধারা শুরু হয়েছে।

ব্রেকফাস্ট টেবলের খাবার বদলে গিয়েছে। চেনা সসেজ, ডিমের পোচের জায়গায় এসেছে সেদ্ধ ডিম। ফলের রসের পরিবর্তে হলদি দুধ, ভেষজ চা বা গোটা ফল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এমন কোন কোন খাবার রাখতে পারেন সকালের পাতে?

আরও পড়ুন: ‘ডক্টর শপিং’-এর প্রবণতা কি বাড়ছে আতঙ্কের শহরে

হলদি-দুধ

কারকিউমিন থাকার কারণেই হলুদের এত নামডাক। দুধে হলুদ মিশলে তাকে পুরোদস্তুর পাওয়ার যায়। ডাবল টোনড বা মাঠা তোলা দুধ নয়, সরে মাখামাখি গাঢ় দুধ। কারণ এমনিতেই হলুদে কারকিউমিন থাকে খুব কম, মোটে ৩ শতাংশ। তার উপর চিবিয়ে জল দিয়ে খেয়ে নিলে, তার বেশির ভাগটাই শোষিত হয় না। সে জন্যই মালাই দুধের আগমন। কারকিউমিন ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়। কাজেই ফ্যাটজাতীয় খাবারের সঙ্গে খেলে উপকার বেশি। আর একটি রাস্তা অবশ্য আছে। গোলমরিচ দিয়ে বেটে খাওয়া। কারণ গোলমরিচে আছে পিপারিন, যা কারমিউমিনের শোষণ প্রায় ২০০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু হঠাৎ হলুদ খাবেন কেন? এত দিন তো না খেয়ে বেশ চলছিল। তার মানে কি সে করোনা ঠেকায়? না, একেবারেই না। কারকিউমিন শরীরে অহেতুক প্রদাহের প্রবণতা কমায়। যার হাত ধরে বেশ কিছু ক্রনিক অসুখবিসুখের প্রকোপ কমে। ক্রনিক রোগের প্রকোপ কমা মানে শরীর সুস্থ থাকা। শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ব্যথাবেদনা কমে। জীবাণু নাশ করে। তার সঙ্গে দুধের গুণ যুক্ত হলে ভারী হয় উপকারের পাল্লা।

তবে গুঁড়ো হলুদ নয়। কারণ, এতে ভেজাল হিসেবে থাকতে পারে বিষাক্ত মেটালিন হলুদ রং, বার্লি, ময়দা ইত্যাদি। কাঁচা হলুদ খান ভাল করে ধুয়ে। শুকনো গোটা হলুদও খেতে পারেন, বাটার সুবিধে থাকলে।

কতটা খাবেন? দিনে ২৫০ মিগ্রা খেলে সব দিক বজায় থাকে। যদিও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন প্রদাহ কমানোর উপকার পেতে গেলে দিনে ৫০০-১০০০ মিগ্রা খাওয়া দরকার। সহজ হিসেবে, সকালে-রাত্রে এক চা-চামচ করে খান। রান্নায় ব্যবহার করুন। বেশি খেলে আবার ক্ষতি হতে পারে।

আরও পড়ুন: বাড়ি থেকে কাজই কি এখন নতুন কর্মসংস্কৃতি

হলুদের ক্ষতি? রক্ত পাতলা রাখে বলে গর্ভাবস্থায় খুব বেশি না খাওয়াই ভাল। যাঁদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে, তাঁরাও খাবেন রয়েসয়ে। কারণ হলুদে ২ শতাংশ অক্সালেট আছে, যার প্রভাবে কারও কারও কিডনিতে পাথর হতে পারে। সকালে খালিপেটে খাবেন। এর পর আধঘণ্টা আর কিছু খাবেন না। রাত্রে শোওয়ার আগে হলদি-দুধ খেতে পারেন, যদি দুধ এবং হলুদ সহ্য হয় পেটে, ঘুম ভাল হবে।

ভেষজ চা

তুলসি চা

বাড়িতে গাছ থাকলে তুলসি পাতা দিয়ে বানাতে পারেন। সাধারন জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কম থাকবে। নিয়মিত খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

কী ভাবে বানাবেন? একবাটি জলে একমুঠো তুলসি পাতা ফুটতে দিন। টগবগ করে ফুটলে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট ফোটান। এরপর এতে মেশান এক চামচ মধু আর দু-চামচ লেবুর রস। মধু দেবে এনার্জি, লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগবে। ইচ্ছে হলে ধনে ও আদাও মেশাতে পারেন। শুকনো কাশির প্রকোপ কম থাকবে। কমবে প্রদাহের প্রবণতা। কীভাবে বানাবেন, দেখে নিন।

এক লিটার জলে দু-চামচ আদা কুচি, চার চামচ ধনে ও একমুঠো তুলসি পাতা দিয়ে কম আঁচে ভাল করে ফোটান, যত ক্ষণ না জল অর্ধেক হয়ে যায়। এবার ছেঁকে নিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে খান।

তবে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত তুলসি চা না খাওয়াই ভাল। কারণ তুলসিতে আছে এস্ট্রাজল যা জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে। যাঁরা ডায়াবিটিসের ওষুধ খান বা ইনসুলিন নেন, তাঁরা নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। কারণ তুলসি রক্তে সুগারের মাত্রা কমায় বলে জানা গেছে। রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেলেও সাবধান। কারণ তুলসিও রক্ত পাতলা রাখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, যাঁদের নিয়মিত অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা তুলসি খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন কারণ দুইয়ের মিলিত প্রভাবে লিভারের কিছু ক্ষতি হতে পারে।

দারচিনির চা

দারচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়েও বানাতে পারেন ভেষজ চা। এক চামচ দারচিনির গুঁড়ো, সিকি চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো, এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধু-র মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত জল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন। দারচিনির কুমারিন, গোলমরিচের পিপারিন প্রদাহের প্রবণতা কমাবে, বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। লেবুর ভিটামিন সি-এর কাজও তাই। সঙ্গে যুক্ত হবে মধুর এনার্জি। বেশ খানিক ক্ষণ চাঙ্গা রাখার অব্যর্থ পানীয়। তবে কুমারিন বেশি খাওয়া ঠিক না। লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আবার সুগার কমাতে পারে বলে যাঁর ডায়াবিটিসের ওষুধ চলছে, তিনি বুঝেশুনে খাবেন।

চায়ের সঙ্গে ‘টা’

সাধারন চায়ে ক্যাফিনে ট্যানিন ইত্যাদি থাকে বলে খালি পেটে খেলে কারও কারও অম্বল বাড়ে। ভেষজ চায়ে সে ভয় নেই। তার উপর সকালে হলদি-দুধ খেয়েছেন। কাজেই ‘টা’ না খেলে কোনও ক্ষতি নেই। বিস্কুট জাতীয় কিছু না খাওয়াই ভাল। কিন্তু অভ্যাস বলে কথা! সেক্ষেত্রে খান কল বেরনো ছোলা বা মুগ। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের দৌলতে পুষ্টির পাশাপাশি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। লেবুর রস মিশিয়ে নিলে স্বাদ বাড়বে, বাড়বে পুষ্টিও। সব রকম বাদাম খেতে পারেন। চিনে বাদাম খেলেও উপকার হবে। পেট ভরা থাকবে অনেক ক্ষণ।

আরও পড়ুন: করোনার সঙ্গে যৌথ জীবনযুদ্ধে জিততে বদলাতে হবে নিজেকে

ফলের রস বাদ, কিন্তু ফল নয়

আগে হয়তো কথায় কথায় ফলের রস খেতেন। ওজন ও সুগার যে এর দৌলতেই বাড়ে তা জানতেন না। এখন জেনেছেন। এও জেনেছেন যে সুগার ও ওজন বাড়লে করোনার জটিলতা বাড়ে। অতএব ফলের রস বাদ। ফল ও দই দিয়ে স্মুদি বানিয়ে খান। দইয়ের প্রবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। ফলেরও আছে এই গুণ, সঙ্গে অঢেল পুষ্টি। এর মধ্যে যদি একটু দারচিনির গুড়ো, গোলমরিচ, গুড় বা মধু মেশান, ব্রেকফাস্ট আর খেতে হবে না। ফলে রোগ ঠেকানোর পাশাপাশি ঝড়বে মেদ, চাকচিক্য বাড়বে ত্বকের, চুলের।

রোজ রোজ স্মুদি না খেয়ে মাঝেমধ্যে রায়তা খেতে পারেন। সব রকম ফল, গোলমরিচ ও রসুন মিশিয়ে। রসুনের গুণের কথা তো জানাই আছে। অ্যালিসিন নামের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের প্রভাবে সে সর্দি-কাশি ঠেকায়। প্রেশার-সুগার-হৃদরোগ ও কোলেস্টেরলকে বশে রাখে। বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে বেশি নয়, দু’-তিন কোয়াই যথেষ্ট।

চাই অন্য কিছুও

অন্য কিছু খেতে চান? খান। তবে প্যাকেটের খাবার নয় কিন্তু। ঘরে কেটে-বেটে যা বানাবেন, সেটাই হবে আপনার পরিবারের খাদ্য। শাক-সব্জি তো ভাল করে ধুয়েই ঘরে তুলছেন, কাজেই কিছু সব্জির অন্তত খোসা ফেলবেন না। বেশি ফাইবার পাবেন। তাতে ওজন ঠিক থাকবে। পেট পরিষ্কার থাকবে। সাশ্রয়ও হবে একটু। এ সবের সঙ্গে চাই একটা কি দুটো ডিম, শরীরের অবস্থা বুঝে। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের জোগানে যে শরীরকে সুস্থ রাখবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy