Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Conjunctivitis

কনজাংটিভাইটিস চরিত্র বদলে বেশি সংক্রামক, আশঙ্কা কর্নিয়ার ক্ষতিরও

কনজাংটিভাইটিসের কবলে পড়ে এমন ‘অচ্ছুত’ হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে এই রোগের হঠাৎ চরিত্র বদল ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।

পুজোর পর থেকে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন।

পুজোর পর থেকে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৩৯
Share: Save:

টকটকে লাল চোখের সঙ্গে পিচুটি, জল ঝরা! সূর্যের দিকে তাকানো তো দূর, রোদচশমা ছাড়া বাইরে পা রাখাই দুষ্কর। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলতে গেলে আবার আর এক যন্ত্রণা! হঠাৎ ভোল বদলানো এমন ‘লাল চোখের’ দাপটে অফিস-কাছারি, স্কুল, কলেজ বন্ধ করে কার্যত বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।

কনজাংটিভাইটিসের কবলে পড়ে এমন ‘অচ্ছুত’ হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে এই রোগের হঠাৎ চরিত্র বদল ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, কনজাংটিভাইটিস আগে মূলত ব্যাক্টিরিয়ার প্রভাবে হলেও সম্প্রতি তার চরিত্রে কিছুটা বদল এসেছে। ব্যাক্টিরিয়ার পাশাপাশি ভাইরাসের প্রভাবেও ওই রোগ হচ্ছে। নতুন চরিত্রে উপসর্গ যেমন কিছুটা বদলেছে, তেমনই বেড়েছে ভোগান্তির মাত্রাও।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ব্যাক্টিরিয়াঘটিত কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে মোটামুটি সাত দিনের মধ্যে সুস্থ হওয়া গেলেও এই ক্ষেত্রে সময় লাগছে প্রায় ১১ দিন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুস্থ হতে লাগছে তারও বেশি সময়। তবে অন্যকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা থেকে যাচ্ছে প্রায় দু’সপ্তাহ। উপসর্গ হিসাবে চোখে তেমন পিচুটি না দেখা গেলেও চোখের পাতা ফোলা, চোখ করকর করা, চোখে জ্বালা ভাব, সর্দি-জ্বর, কানের কাছে গ্ল্যান্ড ফোলাও দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ব্যাক্টিরিয়াঘটিত কনজাংটিভাইটিস চোখের কর্নিয়ার উপরে তেমন কোনও প্রভাব না ফেলতে পারলেও তা ভাইরাসঘটিত হলে কর্নিয়ার মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। শুধু তা-ই নয়, এর অন্যকে সংক্রমিত করার ক্ষমতাও তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘‘এই নতুন ধরনের কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে চোখ লাল হলেও পিচুটি কার্যত থাকে না। শুধু চোখের পাতা ফোলা এবং সঙ্গে কখনও কখনও জ্বর বা সর্দি-কাশি থাকে। ভোল বদলানো এই কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে কর্নিয়ার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দৃষ্টিশক্তিও।’’ এমনকি, বাজারচলতি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুজোর পর থেকে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। এর জন্য আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার পাশাপাশি শীতের শুরুতে বাতাসে প্রচুর পরিমাণ ধূলিকণার উপস্থিতিই দায়ী বলে মনে করছেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নতুন এই কনজাংটিভাইটিসের পিছনে রয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস। এই সংক্রমণ আটকাতে ছোঁয়াচ বাঁচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই সংক্রমিতকে আলাদা ঘরে রাখা, এমনকি তাঁর ব্যবহারের জিনিস আলাদা করে দেওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে ঘন ঘন হাত ধোয়া, যতটা সম্ভব বাইরে না বেরোনোর পরামর্শও দিচ্ছেন। হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেহেতু এটি ভাইরাসঘটিত, তাই সংক্রমিত ব্যক্তি চোখে হাত দিয়ে কোনও জিনিস ছুঁলে এবং পরবর্তী কালে সেই জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করলে তাঁরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।’’ চক্ষু চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্ত জানান, ব্যাক্টিরিয়াঘটিত কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসা থাকলেও ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসের সে ভাবে কোনও চিকিৎসা নেই। তবে রোগী ও পরিজনেরা সতর্ক থাকলে এই রোগের আশঙ্কা অনেক কমে বলে জানান তিনি।তবে আশার কথা শোনাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মত, শীতের দাপট বাড়লে এই ‘চোখরাঙানি’ কমতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Conjunctivitis Eye Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy