শারীরচর্চা বা খাদ্যাভ্যাসের বদল নয়, সহজেই শরীরের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে স্লিম অ্যান্ড ট্রিম হওয়া যায় লাইপোসাকশনের মাধ্যমে! এই ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। ‘‘লাইপোসাকশন করে ওজন কমানো যায় না। পেটের ভিতর, অন্ত্রের আশপাশে ফ্যাট জমে মূলত শরীরের যে অতিরিক্ত ওজন বাড়ে লাইপোসাকশনের মাধ্যমে সেই ফ্যাট কমিয়ে ফেলা যায় না। এই পদ্ধতিতে একমাত্র ত্বকের নীচের ফ্যাট কমানো হয়। শারীরচর্চা, ডায়েট করেও যখন থাই, ঊরু, নিতম্ব, ঘাড় ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ জায়গার ফ্যাট কমানো যায় না, তখন অন্তিম পথ লাইপোসাকশন,’’ বললেন প্লাস্টিক অ্যান্ড কসমেটিক সার্জেন ডা. কৌশিক নন্দী।
প্রস্তুতিপর্ব
লাইপোসাকশনের আগে রোগীর শারীরিক ইতিহাস খুঁটিয়ে দেখেন কসমেটিক সার্জেন। সব রকমের মেডিক্যাল চেকআপ করে নিশ্চিন্ত হওয়ার পরেই চিকিৎসা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে বয়স যত কম হবে, সাফল্যের হার তত বেশি। কম বয়সে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বেশ মজবুত থাকে, ত্বক টানটান থাকে, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে কমতে থাকে। বেশি বয়সে লাইপোসাকশন করলে ত্বক আলগা হয়ে ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন আবার সেই ঝুলে যাওয়া চামড়া অপারেশন করে বাদ দিতে হয়, অপারেশনের কাটা দাগ আজীবন শরীরে রয়ে যাবে। এ ছাড়া বয়স কম থাকলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগুলিও কম থাকে। মধুমেহ, রক্তাল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সার্জারির আগে ওষুধ ও ডায়েটের মাধ্যমে এইসব সমস্যা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও ঝুঁকি থেকে যায়, সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অল্পবয়সিদের মধ্যে এর সাকসেস রেট বেশি হলেও ছোটদের ক্ষেত্রে করা হয় না।
লাইপোসাকশনের পদ্ধতি
শরীরের যে অংশে লাইপোসাকশন হবে সেখানে একটা ছোট ছিদ্র করা হয়। সেখান দিয়ে ক্যানুলা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। একটা নলের মাধ্যমে ক্যানুলা সাকশন অ্যাপারেটাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ক্যানুলার সাহায্যেই ফ্যাট বার করে আনা হয়। এতে অবশ্য ত্বকের নীচের শিরা, উপশিরা এবং স্নায়ুর কোনও ক্ষতি হয় না। তবে ফ্যাটের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্লুইড বা তরলপদার্থ এবং রক্ত নির্গত হয়। তাই শরীরের অনেকটা জায়গা জুড়ে লাইপোসাকশন করলে দেহের ফিজ়িয়োলজির পরিবর্তন হতে পারে। পাশাপাশি ঝুঁকিও থাকে। ‘‘ঝুঁকি কমাতে লাইপোসাকশনের আগে শরীরে স্টেরাইল স্পেশ্যাল ফ্লুইড ইনজেক্ট করা হয়। তার বেশ কিছুক্ষণ পরে অ্যানাস্থেসিয়া করে লাইপোসাকশন করা হয়। স্টেরাইল স্পেশ্যাল ফ্লুইড দিলে দুটো সুবিধে হয়। লাইপোসাকশনের মাধ্যমে সহজে ফ্যাট বার করে আনা যায় এবং ফ্যাটের সঙ্গে নির্গত রক্তের পরিমাণও অনেকটা কমিয়ে ফেলা যায়,’’ বললেন ড. কৌশিক নন্দী। অনেক দিক মাথায় রেখে লাইপোসাকশন করতে হয়, তাই সময় অনেকটাই বেশি লাগে।
শরীরের বিশেষ অংশের ফ্যাট কমানোর বাইরেও অন্য চিকিৎসায় লাইপোসাকশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন, অনেক সময়ে কমবয়সি পুরুষদের স্তনের আয়তন বেড়ে যায়। এই ধরনের সমস্যা সমাধানে আগে স্তন কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হত। এখন স্তনের ভিতরের ফ্যাট লাইপোসাকশন করে বার করে দেওয়া হয়, তার পর ছোট একটা অপারেশনের মাধ্যমে ফ্যাট টিসু কেটে বাদ দেওয়া হয়। আবার ফ্যাটগ্রাফ্টিং করার আগেও শরীরের একাংশ থেকে লাইপোসাকশনের মাধ্যমে ফ্যাট বার করে নিতে হয়। তার পর সংগৃহীত ফ্যাট দিয়ে গ্রাফ্টিংয়ের কাজ হয়। যেমন গালে কোনও খুঁত বা ডিপ্রেশন থাকলে সেটা এই পদ্ধতিতে সিল করা হয়। টিউমেসেন্ট, পাওয়ার-অ্যাসিস্টেড, আল্ট্রাসাউন্ড-অ্যাসিস্টেড ও লেজ়ার অ্যাসিস্টেড, এই চারটি পদ্ধতির মাধ্যমে লাইপোসাকশন করা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতি টিউমেসেন্ট।
লাইপোসাকশনের পরে
লাইপোসাকশনের পরের কয়েকটা দিন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। লাইপোসাকশন করার পরে যন্ত্রণা হয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। সবরকম প্রিকশন নেওয়ার পরেও সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। যদিও সে সমস্যাও চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। তাই লাইপোসাকশনের আগে শুধু শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করলেই চলে না, মানসিক প্রস্তুতিও প্রয়োজন। ‘‘লাইপোসাকশনের পরেই সোয়েলিং নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্কিনটাইট পোশাক পরতে হয়। তাই এ ধরনের চিকিৎসা শীতে করতে পারলে ভাল। গরমে স্কিনটাইট পোশাক মোটেও আরামদায়ক নয়, তা ছাড়া ঘাম থেকে ত্বকের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে,’’ পরামর্শ দিলেন ডা. নন্দী।
পোস্ট-অপারেটিভ পিরিয়ড পেরিয়ে গেলে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে আসা যায়। খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা বা অন্য কাজে কোনও সমস্যা থাকে না। তবে শরীরে যাতে অতিরিক্ত মেদ না জমে, তার জন্য নিয়মিত শারীরচর্চা ও ডায়েট মেনে চলা জরুরি। যদিও যে অংশে লাইপোসাকশন করা হয়, সেখানে পরবর্তী কালে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে না। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া ও জীবনযাপনের ফলে শরীরে ফ্যাট জমতে শুরু করলে স্বাভাবিক ভাবে যেখানে লাইপোসাকশন করা হয়েছে সেখানেও ফ্যাট জমবে। মাথায় রাখবেন, লাইপোসাকশন খরচসাপেক্ষ। কসমেটিক সার্জারির অন্তর্গত বলে এ ক্ষেত্রে মেডিক্লেম পলিসির সুবিধে পাওয়া যায় না। তাই সবক’টি দিক মাথায় রেখে অপারেশনের পরে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy