সিমা গ্যালারি এবং অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আলোচনাচক্র ‘ইম্যাজিনেশনস: রুরাল, আর্বান, গ্লোবাল’ দফায় দফায় তুলেছে শিল্প ভাবনা নিয়ে নানা প্রসঙ্গ, প্রশ্ন।
চলচ্চিত্রে কি পেন্টিংয়ের জায়গা আছে? নাটকে আছে কি সঙ্গীতের স্থান?
শিল্পে সীমা থাকে। আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয় এক এক ধরনের কাজকে। কিন্তু নামের সেই সীমা লঙ্ঘন করেই কি গড়া যায় নতুন শিল্প?
আলোচনা গড়াল নাটক থেকে সিনেমা, সিনেমা থেকে নৃত্যে। ঢুকে পড়ল পেন্টিং, ভাস্কর্য, সঙ্গীত। সৃষ্টির গণ্ডি কি আদৌ স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে এমনই নানা কথায় জড়ালেন শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছ’জন। নাট্যব্যক্তিত্ব ও পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়, পরিচালক অনীক দত্ত, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের অধ্যাপক নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, নৃত্যশিল্পী ইলিয়ানা চিতারিস্তি ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর (আর্টস) জনাথন কেনেডি। সভা সঞ্চালনায় রইলেন লেখক, অধ্যাপক, নাট্য সমালোচক, পরিচালক আনন্দ লাল।
শিল্পে কল্পনার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল রবিবার থেকেই। সিমা গ্যালারি এবং অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আলোচনাচক্র ‘ইম্যাজিনেশনস: রুরাল, আর্বান, গ্লোবাল’ দফায় দফায় তুলেছে শিল্প ভাবনা নিয়ে নানা প্রসঙ্গ, প্রশ্ন। সোম বিকেলে শিল্পের সীমানা নিয়ে চর্চা ছিল দু’দিনের এই আলোচনাচক্রের শেষ প্রসঙ্গ। বাস্তবকে তুলে ধরতে শিল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা কথা হয়েছে। যোগ দিয়েছেন দেশ-বিদেশে শিল্পচর্চা নিয়ে যুক্ত বিভিন্ন জনে। সুমনের কথায় এ বার উঠে এল নানা ধরনের শিল্পের যৌথ প্রকাশের কথা। সুমন বললেন, ‘‘কোনও শিল্পচর্চার ফল কী হবে, সে তো পরের কথা। কিন্তু যে কোনও কাজে শিল্পের নানা মাধ্যমকে একসঙ্গে ব্যবহার করতে পারা প্রয়োজন। তবেই বাস্তবে তার ফল মিলবে। নানা ধরনের শিল্পে মন দেওয়ার জন্য চাই অনুশীলন। তা আগে শুরু হওয়া প্রয়োজন।’’ ইলিনিয়া একমত। তাঁর বক্তব্য, নতুন শিল্প তৈরি করতে গেলে সীমানা প্রসারিত করতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘ওড়িশির মুদ্রার সঙ্গে ছৌ নাচের চলন মেশানো যেতেই পারে। তার জন্য দু’টি মাধ্যম সম্পর্কেই হতে হবে ওয়াকিবহাল। তবেই আর আলাদা করা যাবে না কোনটি ওড়িশির মুদ্রা, কোনটি ছৌয়ের।’’ আর এ ভাবেই নতুন আকৃতি পাবে ভাবনা, কল্পনা।
দিন দিন শিল্পের নানা মাধ্যমের মধ্যে দূরত্ব কমছে। পেন্টিংয়ের সংগ্রহশালায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিচ্ছে সঙ্গীত। নৃত্য হয়ে উঠেছে নাটক এবং সিনেমায় অভিনয়ের অপরিহার্য অঙ্গ। নানা ভাবে মনে করালেন অনীক, নীলাদ্রি এবং জনাথন। প্রাচীন শিল্পভাবনার কথা উল্লেখ করলেন আনন্দ। ভরতের ‘নাট্যশাস্ত্র’ হোক কিংবা এরিস্টটলের ‘পোয়েটিক্স’, দু’ক্ষেত্রেই শিল্পের নানা মাধ্যমের আলাপচারিতায় নাটক তৈরির তত্ত্বের কথা উঠে এল তাঁর বক্তব্যে। সমকালীন শিল্প ভাবনা কি আবার ফিরে যাচ্ছে প্রাচীনের অবিভক্ত ধারণায়, দর্শকদের কাছে রয়ে গেল সে প্রশ্ন।
সোমবার সকালে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় আলোচনা শুরু হয়েছিল শিল্পীর মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ নিয়ে। শিল্পীর ভাবপ্রকাশের গতিপথ কোন দিকে গড়াবে, সে প্রসঙ্গেও হয়েছে আলোচনা। ভবিষ্যৎ কি নতুন আঙ্গিককে আঁকড়ে ধরবে না কি থাকবে পুরনোর স্থানও, প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে শ্রোতাদের কাছে। সিমার অধিকর্তা রাখী সরকারের সঞ্চালনায় আলোচনা হয়েছে শিল্প ভাবনার রসদ নিয়ে। পুরনোকে নতুন চোখে দেখায় কি ওঠে ন্যায্য-অন্যায্যের প্রসঙ্গে, সে ভাবনাও এসেছে ঘুরে ফিরে।
সে সব নানা ভাবনা ও প্রশ্নও ধরা রইল দু’দিনের শেষের সেই আলোচনায়। নতুন ভাবে শিল্পকে দেখার সময় ইতিমধ্যেই এসেছে, উঠে এল প্রসঙ্গ। গণ্ডি ভাঙার গুরুত্ব বেড়েছে, তা-ই হয়ে রইল শেষ কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy