Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Chitra Banerjee Divakaruni

‘মেয়েদের কথা বেশি করে বলতেই হবে’, শহরে এসে মনে করালেন ‘মিস্ট্রেস অফ স্পাইসেস’-এর লেখিকা

নিজের শহর তাঁর মনের ভিতর অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে। বইয়ের পাতায় যেমন তা বুঝিয়েছেন, তেমন মুখে বলতেও দ্বিধা নেই। সে সব নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় বসলেন লেখিকা চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিভাকারুনি।

আমেরিকাবাসী বাঙালি লেখিকা চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিভাকারুনির ইংরেজি বই পড়ে ইতিমধ্যেই এ দেশকে নতুন করে চিনতে শিখেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের অনেকে।

আমেরিকাবাসী বাঙালি লেখিকা চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিভাকারুনির ইংরেজি বই পড়ে ইতিমধ্যেই এ দেশকে নতুন করে চিনতে শিখেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের অনেকে। ছবি: সংগৃহীত।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৩০
Share: Save:

হাতে ফুচকার বাটি। পরনে শাড়ি। কপালে টিপ। বললেন, ‘‘কলকাতায় বড় হয়েছি। বহু দিন হল থাকি না ঠিকই। কিন্তু এ শহরের অনেক কিছুই খুব টানে।’’

ফুচকা আর শাড়িও তেমন।

সচরাচর এ শহরে দেখা যায় না তাঁকে। কোনও সাহিত্য উৎসব মাঝেমধ্যে টেনে আনে। এ বারও তেমনটাই হয়েছে। স্বাধীনতা ও দেশভাগের ৭৫ বছরে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর নতুন বই ‘ইন্ডিপেনডেন্স’। যার পটভূমি কলকাতা। নিউ মার্কেট থেকে পার্ক সার্কাস— ভরে আছে পাতায় পাতায়। নিজের শহর তাঁর মনের ভিতর অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে। বইয়ের পাতায় যেমন তা বুঝিয়েছেন, তেমন মুখে বলতেও দ্বিধা নেই। সে সব নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় বসলেন লেখিকা চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিভাকারুনি।

আমেরিকাবাসী বাঙালি লেখিকার ইংরেজি বই পড়ে ইতিমধ্যেই এ দেশকে নতুন করে চিনতে শিখেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের অনেকে। নিজের শহর কলকাতাও তা বোঝে। ভারতীয় নারীদের নিয়ে গল্প বলা চিত্রাও নিজের শহরের মহিলাদের সঙ্গে আদানপ্রদান বাড়াতে চান। তাই জয়পুর থেকে কলকাতা, নানা জায়গার সাহিত্য উৎসবে পরিচিত লেখকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ফাঁকে ঠিক দেখা দেন দক্ষিণ কলকাতায় মহিলাদের আড্ডাচক্রে।

কিন্তু বার বার শুধু মেয়েদের কথাই বলেন কেন? অন্য কারও কথা কি বলতে ইচ্ছা করে না চিত্রার? ‘‘তেমনটাও নয়। আমার নতুন বইতেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ চরিত্র রয়েছে। কিন্তু মেয়েদের কথা তো এত দিন তেমন বলেননি কেউ। ইতিহাসে বরাবরই পুরুষদের কথা বেশি বলা হয়েছে। মেয়েদের কাহিনি তো বলতে হবে। সে ভারটাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছি আর কী,’’ বলেন ‘দ্য প্যালেস অফ ইলিউশন’, ‘দ্য লাস্ট কুইন’-এর লেখিকা।

দেশভাগের ক্ষেত্রেও বেছে নিয়েছেন সেই নারীকেন্দ্রিক কাহিনি। তিন বোনের জীবনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে উপন্যাস। চিত্রা মনে করেন, বাংলায় দেশভাগের প্রভাব নানা লেখক নানা ভাবে দেখেছেন। কিন্তু মেয়েদের কথা তো সকলে বলেন না। ‘‘মেয়েদের ক্ষেত্রে দেশভাগ আলাদা। তাঁদের জীবন, জীবীকা, শরীর, মন— কত ধরনের ঘটনা ধরে রেখেছে। আমাদের সংস্কৃতিতে সে সব কথা মুখ ফুটে বলার রেওয়াজ নেই। হাসিমুখে মেয়েরা সয়ে নিয়েছেন। চুপ করে থেকেছেন। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলা তো জরুরি। না হলে ইতিহাস অধরা থেকে যাবে,’’ বলেন আমেরিকার হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিং’-এর অধ্যাপিকা।

এত দিন মেয়েদের কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু দেশভাগ নিয়ে বিশেষ কিছু লিখতে তো দেখা যায়নি চিত্রাকে। বরং অন্য রকম ঘরছাড়াদের গল্প বেশি লিখেছেন তিনি। যাঁরা এ দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে সংসার পেতেছেন, বার বার তেমন চরিত্র উঠে এসেছে এই বাঙালি অধ্যাপিকার ছোট গল্প, উপন্যাসে। এ বার তবে কি নতুন কিছু বলার ইচ্ছা হল? নাকি আসলে যে কোনও ঘরছাড়ার গল্পই এক? কথা কেড়ে নিলেন লেখিকা। বললেন, ‘‘অন্য সব অভিজ্ঞতা আলাদা। যাঁরা লেখাপড়া বা কাজ নিয়ে বিদেশে যান, তা স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়েন। কষ্ট তো হয়ই, কিন্তু সেটা অন্য রকম। দেশভাগের জেরে ভিটে ছাড়ার কাহিনি একেবারে আলাদা। এই কষ্ট অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। এর মতো মর্মান্তিক কিছু হয় না!’’

১৯৫৬ সালে জন্ম। দেশভাগের সময়টা দেখেননি। কলকাতায় উচ্চবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন। লোরেটো স্কুলে লেখাপড়া। উদ্বাস্তুদের কষ্ট কি কোনও ভাবে সরাসরি টের পেয়েছেন কখনও? চিত্রা জানান, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। ফলে পূর্ববঙ্গে ভিটে ছাড়াদের মতো কষ্ট সরাসরি ভোগ করতে হয়নি তাঁর পরিবারের কাউকে। কিন্তু স্বাধীনতার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাড়ির বড়রা। বাবা আবার ছিলেন চিকিৎসক। মেয়েকে বড় করেছেন বাস্তব পরিস্থিতির কথা বলে। যাঁদের সব ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল, তাঁদের কী ভাবে জীবন চালাতে হয়েছে, তার সবটা না বুঝলেও, অনেকটা বাবা-মায়ের কাছে শুনেছেন। কলকাতা শহরে সেই কষ্টের ছাপ দেখেছেন। উদ্বাস্তুরা কী ভাবে লড়াই করেছেন, তা চিত্রার জানা। তাই দেশভাগের ৭৫ বছর পর নিজের সেই শহরের ইতিহাস ফিরে দেখা জরুরি বলে মনে করেন বাঙালি লেখিকা। চিত্রা বলেন, ‘‘কত জনে কত ভাবে লড়াই করে বেঁচেছেন, তা তো বাকিদের জানতে হবে।’’ ইংরেজি ভাষায় এ সব কাহিনি কতই বা লেখা হয়। চিত্রার কলম দেশের বাইরের বহু পাঠককে সেই সব কঠিন সময়ের কথা বলে।

শুধু ইতিহাস নয়, বর্তমানের সমস্যার দিকেও মন দেন লেখিকা। আমেরিকা দেশের নারীদের পাশে দাঁড়াতে দু’টি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ‘মৈত্রেয়ী’ আর ‘দয়া’। গার্হস্থ হিংসার শিকার যে সকল নারী, তাঁরা যাতে সমস্যায় কাউকে পাশে পান, সে দিকেও খেয়াল রাখেন লেখিকা। বলেন, ‘‘মেয়েদের এখনও অনেক সমস্যার শিকার হতে হয়। তাঁদের কথা বলতে হবেই। একে অপরের পাশে থাকতেই হবে।’’ লেখা থেকে সমাজসেবা, একই ভাবে তাই ব্যস্ত রাখে তাঁকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Chitra Banerjee Divakaruni Interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy