ফাইল চিত্র।
‘‘কাজটা কঠোর মনে হতে পারে! কিন্তু ছোটদের ভিক্ষে করার প্রবণতা বন্ধ করতে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের দায়িত্বও নেহাত কম নয়,”— বুধবার দুপুরে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের মুখে পথশিশুদের বেলুন, চকলেট, মাস্ক বিলি করার ফাঁকে আলোচনা করছিলেন রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন ও শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা।
মাইকে তখন সাধারণ পথচারীদের উদ্দেশ্যে প্রচার চলছে, ‘‘ছোটদের ভিক্ষা দিয়ে তাদের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার ইচ্ছেটা নষ্ট করবেন না। ছোটদের ভিক্ষাবৃত্তির প্রবণতা বন্ধ করতে দায়িত্ব পালন করুন।’’
রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের মোড়ের কাছে মুক্তমঞ্চ থেকে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে কিছু দূর পর্যন্ত ফুটপাতের বাসিন্দা পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিলেন কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। বড়দের বলছিলেন, ‘‘শুনুন, বাচ্চাদের দেখিয়ে ভিক্ষে করলে কিন্তু জরিমানা, দু’বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে!’’ ছোটদেরও বললেন, ‘‘বড়রা কেউ বললেও কিছু বিক্রি করিস না যেন। পড়াশোনার সময়, ছোটদের এ সব কাজ করতে নেই!’’ যুগ্ম শ্রম কমিশনার মনীষা ভট্টাচার্য বলছিলেন, “অনেকেই অন্যের বাচ্চাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নেতিয়ে পড়া অবস্থায় কোলে নিয়ে ভিক্ষে করতে বেরোন। এর পিছনে সংগঠিত চক্র থাকে। বাচ্চার মুখ দেখিয়ে সহানুভূতির জোরে ভিক্ষে আদায় সোজা। এ সবে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয়।’’ দারিদ্র বা ভরণপোষণের জন্য নাবালিকার বিয়ের মতো খিদে মেটানোর কথা বলে ভিক্ষে করাটাও অপরাধ, বোঝাচ্ছিলেন কমিশন ও শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা। সহানুভূতিশীল নাগরিকের জন্য এমন পরিস্থিতি ধর্মসঙ্কট বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সহজে ভিক্ষা পেতে পেতে ছোটদের অন্য কিছু করার, মাথা উঁচু করে বাঁচার ইচ্ছেটাই মরে যায় বলে মনে করেন সমাজকর্মীরা।
শ্রম দফতর সূত্রের খবর, ‘শিশু-কিশোর শ্রম নিয়ন্ত্রণ ও বিচার আইন’-এর ২০১৬ সালের সংশোধনীতে আরও কড়া পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে। ভিক্ষা ছাড়াও ছোটদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত বিভিন্ন কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বিক্রি করা, লোকের বাড়ি কাজ করাও ধরা হয়। এই দলটির সঙ্গী সমাজকর্মীদের কারও কারও পর্যবেক্ষণ, ফুটপাতের বাচ্চাদের হাতে কাঁচা পয়সা এলে অনেকে মাদক চক্রেরও খপ্পরে পড়ে। মাইকে এ দিন মাদকের বিপদ নিয়েও সচেতন করা হচ্ছিল।
লকডাউন-পর্বে ফুটপাতের শিশু, কিশোরদের অনেকেরই স্কুলে যাওয়া থমকে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের সহযোগী সংস্থা চাইল্ড লাইনের কলকাতার কোঅর্ডিনেটর দিলীপ বসুর বক্তব্য, এমনিতে কলকাতা শহরেই গোটা ৩০ ‘ওপেন শেল্টার’ রয়েছে। সেখানে ছোটরা সারা দিন থেকে পড়াশোনা করতে পারে। তা ছাড়া, সামাজিক সুরক্ষায় ফুটপাতবাসীদের জন্য রয়েছে আরও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পও। তা ঠিক মতো কার্যকর করা গেলে ভিক্ষা বা শিশুশ্রম সহজে বন্ধ হত। দিলীপবাবুর কথায়, “এই ধরনের সচেতনতা অভিযানে কোথায়, কাকে কোন প্রকল্পের আওতায় এনে সহায়তা দেওয়া যায়, সেটাও ঠিক করা হচ্ছে। যেমন, ছোটদের সর্বশিক্ষা মিশনের আবাসিক স্কুলে রাখা যেতে পারে। সন্তান কোলে ভিক্ষারত মায়েদের শহরের গৃহহীন বা ‘আর্বান হোমলেস’দের প্রকল্পে রাখা যায়।’’ ছোটরা এবং তাদের পরিবার সরকারি নৈশাবাসের সুবিধা পাচ্ছে কি না, তা-ও এ দিন দেখা হয় অনন্যাদেবী জানিয়েছেন।
আজ, বৃহস্পতিবার ও কাল, শুক্রবার রবীন্দ্র সরোবর এবং গড়িয়াহাট থানা এলাকায় এই সচেতনতা-অভিযান চলার কথা। কমিশনের চেয়ারপার্সনের মতে, “রাতারাতি জবরদস্তি পুলিশি ধরপাকড়ে ভিক্ষা বা শিশুশ্রমের প্রবণতা বন্ধ হবে না। বোঝানোই রাস্তা। শহরে ছোটদের ভিক্ষা করা রুখতে এটা পাইলট প্রোজেক্ট। তিনটি থানা এলাকায় ভিক্ষা বন্ধে ছোটদের কোন কোন সরকারি পরিষেবা বা প্রকল্পের আওতায় আনা যায়, তা দেখে আমরা সুপারিশ-সহ রিপোর্ট তৈরি করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy