গল্প শোনার একটা দিন বধির শিশুদের জন্য। ছবি: সংগৃহীত।
সরকারি স্কুল হোক কিংবা বেসরকারি, সব স্কুলে এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে গরমের ছুটি। তবে গরমের ছুটি মানে খুদেরা যে বাড়িতেই বসে আছে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। দুপুরের দিকে অনেক শিশুই সময় কাটাচ্ছে ‘সামার ক্যাম্পে’।
ইদানীং অনেক বেসরকারি স্কুল, কিছু নির্দিষ্ট সংস্থা ‘সামার ক্যাম্প’-এর আয়োজন করছে। শিশুরা সেখানে গিয়ে নাচ-গান শিখছে, রান্না শিখছে, খেলাধূলো করছে। কতই না মজা করছে তারা! তবে সব আয়োজন শুধুই স্বাভাবিক শিশুদের জন্য?
যারা শারীরিক ভাবে তেমন সক্ষম নয়, কই তাদের কথা তো কেউ ভাবে না। সমাজের মূলস্রোত থেকে তারাই বা সব সময় পিছিয়ে থাকবে কেন বলুন তো?
সম্প্রতি ‘সিসি সাহা লিমিটেড’ নামের একটি সংস্থা বধির শিশুদের জন্য এক অভিনব কান্ড ঘটিয়ে ফেলল। শুধুমাত্র এমন শিশুদের জন্যই তারা আয়োজন করেছিল ঠাকুমার ঝুলির আসর। এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিল তিন থেকে আট বছর বয়সি অনেক শিশু। ছিলেন তাদের পরিজনেরাও।
শিশুদের গল্প পড়ে শোনালেন অভিনেত্রী ডলি বসু। তাঁর গল্প বলার ধরনেও ছিল অভিনয়। ‘হিয়ারিং এড’ পরে শিশুরা মুগ্ধ হয়ে শুনল ঠাকুমার ঝুলির একাধিক গল্প। গল্প শুনতে শুনতে তারা যেন হারিয়ে গিয়েছিল এক অন্য জগতে। এমন অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে এই প্রথম। শিশুদের এই প্রথম এ ভাবে গল্প উপভোগ করতে দেখে খুশি তাদের বাবা-মায়েরাও। সন্তানদের এত খুশি দেখে চোখের জল বাঁধ মানল না অনেকের। এ যেন এক অন্য অভিজ্ঞতা!
বধির শিশুদের নিয়ে আগেও অনেক কাজ করেছেন ডলি বসু। তবে এই ধরনের অভিজ্ঞতা তাঁর কাছেও নতুন। ডলি বলেন, ‘‘গল্পের মাধ্যমেই আমরা ছোটদের সব চেয়ে তাড়াতাড়ি ‘বন্ধু’ হতে পারি। আমিও সেই চেষ্টাই করেছি। গল্প শুনিয়ে ওদের খানিকটা আনন্দ দিতে পেরেছি ভেবেই আমার ভাল লাগছে। ৬ মাস ধরে আমারও শুনতে সমস্যা হচ্ছিল। সেই সূত্রেই সিসি সাহা লিমিটেড-এ আসা। তাদের এই উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
এই প্রসঙ্গে বলা ভাল, তিন বছর বয়স হয়ে গেলেও শিশুরা কথা না বলতে শিখলে কিন্তু বাবা-মায়েদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। জন্ম থেকেই বধির শিশুরা যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পাবে, ততই কিন্তু তাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। জন্মের সময়ই এখন বিভিন্ন হাসপাতাল, শিশু বধির কিনা তা যাচাই করার জন্য নির্দিষ্ট পরীক্ষা করে। খুব সতর্ক থেকে অভিভাবকদের সেই পরীক্ষা আদৌ করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। সময় থাকলেই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়বে। সি সি সাহার ডিরেক্টর বিক্রম সাহা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম বধির শিশুদের একটি সুন্দর দিন উপহার দিতে। একটি দিন তারা নিজেদের মতো করে মজা করেছে। সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে তারাও মিশেছে। তারাও আনন্দ পেয়েছে।’’
তবে শুধু শারীরিক ভাবে ততটা সক্ষম নয়, এমন বাচ্চা বলে নয়, সুস্থ সবল বাচ্চাদের জন্যও এই গল্প বলার প্রক্রিয়াটি বজায় রাখা জরুরি। সারা দিনে বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় এখন অনেক বাবা-মায়ের কাছেই খুদেকে গল্প বলে শোনানোর সময় নেই। তবে দিনের শেষে গল্প শোনানোর অভ্যাস কিন্তু সম্পর্কের বাঁধনকে শক্ত করে। ডলি বসু বলেন, ‘‘আমার চার জন নাতি-নাতনি রয়েছে। ওরা আমার কোনও কথাই শুনত না, বা শোনে না। তবে আমি যখন গল্প পড়ে শোনাই, তখন কিন্তু ওরা মন দিয়ে শোনে। কোথাও যেন গল্পের মধ্যে দিয়েই আমরা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকি। তাই বাবা-মায়েদেরও উচিত, রাতে অন্তত একটি হলেও গল্প তাঁদের শিশুকে পড়ে শোনানো। ওই সময়টা তাদের জন্যই বরাদ্দ করলে ক্ষতি কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy