জেনিটাল হার্পিসে সাধারণত কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। অনেক সময়ে রোগী ‘অ্যাসিম্পটোম্যাটিক’ থাকতে পারে। প্রতীকী ছবি।
যৌন সংসর্গের কারণে যে সব সংক্রমণ মানুষের হয়ে থাকে, তার অন্যতম হল জেনিটাল হার্পিস। যৌনাঙ্গে এই হার্পিস হওয়ার কারণে একে ‘জেনিটাল হার্পিস’ বলা হয়। প্রসঙ্গত, হার্পিস হল এক ধরনের ভাইরাল সংক্রমণ, যা অসম্ভব ছোঁয়াচে। যে সময় পুরুষ ও নারী ‘প্রজননক্ষম’ থাকে (সাধারণত ১৪ থেকে ৪৯ বছর), তখন সাধারণত এই সমস্যা হয়ে থাকে অনেকের।
জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর মণ্ডল জানালেন, হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের কারণে গলা, ঘাড়, হাত বা শরীরের অন্য কোনও স্থানে হার্পিস হতে পারে। এর দু’টি ধরন আছে— টাইপ ১ এবং টাইপ ২। এদের মধ্যে টাইপ-২’এর কারণেই জেনিটাল হার্পিস বেশি হয়ে থাকে। যদিও টাইপ-১-এর ফলেও যে তা একেবারেই হতে পারে না, এমনটা কিন্তু নয়।
লক্ষণ
জেনিটাল হার্পিসে সাধারণত কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। অনেক সময়ে রোগী ‘অ্যাসিম্পটোম্যাটিক’ থাকতে পারে। তবে তিন-চার দিনের মধ্যে কিছু লক্ষণ শরীরে দেখা গেলে, তা রোগের উপসর্গ হিসেবে বোঝাই যায়। যেমন, প্রথম প্রথম যৌনাঙ্গে, পিছনে হাল্কা ব্যথা এবং চুলকানি হয়। ডা. মণ্ডল বললেন, জেনিটাল হার্পিসের তিনটি পর্যায় থাকে। প্রথমটা লেটেন্ট ফেজ়। হালকা ব্যথা ও চুলকানি এই পর্যায়ে পড়ে। ঘামাচির মতো জিনিস দেখা যায়। এই সময় ভাইরাসগুলি শরীরে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এর পরে আসে সিভিয়ার ফেজ়। আস্তে আস্তে সংক্রমিত জায়গায় ঘামাচিগুলি বড় বড় চকচকে, লাল, জলভরা ফোস্কার আকার ধারণ করে। চুলকানির কারণে বা কাপড়ে ঘষা খেয়ে এই মুখ ফেটে রস বেরিয়ে অন্য কোথাও লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এবং জায়গাগুলিতে খুব ব্যথা হয়। কোনও একটা জায়গায় নয়, অনেক জায়গায় এই হার্পিস হতে দেখা যায়। এর সঙ্গে অনেকের ফ্লু-র মতো জ্বর, গায়ে হাতে ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদিও থাকতে পারে। খুব তীব্র হলে অনেক সময়ে কুঁচকির লিম্ফ নোডসগুলিও ফুলে যেতে পারে। সঙ্গে জ্বালা এবং ব্যথাও থাকে। শেষে আসে হিলিং ফেজ়। সাত-আট দিন পরে এটিসেরে যায়। কিন্তু ব্যথা ও চুলকানি থেকেই যায়।
ডা. মণ্ডল জানালেন, রোগ শুরুর আগে তো বটেই অনেক সময়ে হিলিং ফেজ়-এর পরেও আর একটি সমস্যা এই রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়— পোস্ট হার্পেটিক নিউরালজিয়া। অর্থাৎ, নার্ভের ব্যথা। এই ক্ষেত্রে বছরখানেক-ও ব্যথা থাকতে পারে। কোনও পেনকিলার বা প্যারাসিটামলে এই ব্যথা সারে না। যে সব জায়গায় সংক্রমণ ছিল সেই সব জায়গাতেই এই ব্যথা হয়ে থাকে। নিউরোপ্যাথির জন্য যে ওষুধ দেওয়া হয়, তা না দিলে এই ব্যথা প্রশমিত হয় না।
পরীক্ষা ও চিকিৎসা
সেই ভাবে কোনও পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখেই এই রোগ নির্ণয় করেন চিকিৎসকরা। তবে ডা. মণ্ডলের মতে, শরীরের প্রাইভেট পার্টসে হওয়ার কারণে অনেক সময়েই মানুষ চিকিৎসকের কাছে এই সমস্যা দেখাতে যেতে চান না। ফলে রোগীকে কষ্ট ভোগ করতে হয়। কিন্তু যখন ব্যথা-জ্বালা অসহ্য হয়ে ওঠে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। কিন্তু তত দিনে রোগের মূল পর্বটি হয়তো পেরিয়ে গিয়েছে।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর যে সব স্থানে বড় বড় ঘামাচির মতো হয়েছে, সেই সব জায়গায় কিছু অ্যান্টি-ভাইরাল মলম লাগাতে দেন তাঁরা। একই সঙ্গে কিছু ওষুধও খেতে হতে পারে ব্যথা কমানোর জন্য। সময়ে সময়ে সংক্রমিত জায়গা, যেখান থেকে ঘন রস বেরোচ্ছে, পরিষ্কার করা উচিত। কষ্ট হলেও সংক্রমিত জায়গায় চুলকানো বা হাত লাগানো উচিত নয়। অসুস্থতার দিনগুলিতে ঢোলা জামাকাপড় পরলে আরাম পাবেন।
শিশুদের বিপদ
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটা প্রাণঘাতী না হলেও সদ্যোজাতদের জন্য এটা প্রাণসংশয় সৃষ্টি করতে পারে। সন্তান জন্মের সময় যদি মায়ের এই সমস্যা থাকে, তা হলে এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে সন্তানের শরীরেও। সংক্রমণ যদি গুরুতর হয়, তা হলে শিশুটির অন্ধত্ব, ব্রেন ড্যামেজ, এমনকি মৃত্যুর-ও সম্ভাবনা থাকে। ফলে কোনও মহিলা বা তাঁর স্বামীর যদি জেনিটাল হার্পিস হয়ে থাকে, তা হলে তিনি যেন সন্তান জন্মের সময়ে তাঁর চিকিৎসককে সে কথা জানিয়ে রাখেন। সে ক্ষেত্রে সন্তান জন্মের আগে চিকিৎসক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন এবং সন্তান জন্মের সময় নর্মাল ডেলিভারির বদলে সিজ়ারিয়ান করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা বহু গুণ কমে যায়। সমস্যা হল, যেহেতু পরবর্তী কালে কোনও লক্ষণ থাকে না তাই, মানুষ এই জরুরি বিষয়টি সাধারণত ভুলে যান। সে ক্ষেত্রে অজানতেই সে রোগটি অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
মনে রাখতে হবে, হার্পিস কিন্তু নির্মূল করা যায় না। এই রোগ কোনও ভাবে এক বার শরীরে ঢুকে পড়লে, কোষের মধ্যে সেটা থেকে যায়। এবং যখন কোষ নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে, তখন ভাইরাসগুলিও তাদের সঙ্গে বাড়ে। কোনও কারণে এর আউটব্রেক হলে চিকিৎসকরা অ্যান্টি ভাইরাল ব্যবহার করেন সেই বৃদ্ধিকে রোধ করার জন্য। তবে, ভবিষ্যতে এই সংক্রমণ যত হবে, তত এর তীব্রতা কমে আসবে। কিন্তু, যাঁদের অটোইমিউন ডিজ়িজ় রয়েছে, ক্যানসারে আক্রান্ত বা ডায়াবেটিক, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাল সংক্রমণের তীব্রতা কম না-ও হতে পারে।
নিরাময়
এই ধরনের ভাইরাস মানুষের থুতু, ‘ভ্যাজ়াইনাল সিক্রিশন’, সিমেন-এ পাওয়া যায়। ফলে সুস্থ জীবনযাপন করলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, এই সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা যায়। আর মনে রাখবেন এ ধরনের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy