একে বিনিয়োগ কম। দ্বিতীয়ত, কয়েক বছর চুটিয়ে ব্যবহারের পর মোটামুটি যে দরে কিনেছেন, তার চেয়ে কিছু কম দামে বিক্রি করে দেওয়া যায়। তাই করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য পুরনো গাড়ি কিনলে আপনার খুব একটা লোকসান হবে না।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন গাড়ির দাম প্রথম তিন থেকে চার বছরে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যায়। তার পর থেকে গাড়ির ‘ডেপ্রিসিয়েশন কস্ট’-এর অঙ্কটা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। নতুন হোক বা পুরনো— গাড়ি কেনার কয়েক বছর পর সেটিকে বিক্রি করতে গেলে আপনি যে কেনার তুলনায় অনেকটাই দাম কম পাবেন, তা বলাই বাহুল্য!
কেনার আগে ঠিক করুন যে, গাড়িটি আপনি কোন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চান। যদি রোজ দূরের সফরে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে আপনি এসএউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল) কিনতে পারেন। এই ধরনের গাড়িতে হাত-পা ছড়িয়ে আরামে সফর করতে পারবেন। পাশাপাশি এই গাড়ি বেশ উঁচু হওয়ায় খারাপ রাস্তায়ও অনায়াসে চলতে পারে। শৌখিন গাড়ি কেনার কথা ভাবলে সেডান হতে পারে সেরা পছন্দ। যদি কলকাতা বা শহরতলিতে রোজের কাজে ব্যবহার করতে চান, তা হলে হ্যাচব্যাক গাড়ি কিনুন। আকারে ছোট হওয়ায় এই গাড়ির পার্কিং পেতে খুব একটা সমস্যা হয় না। এ ছাড়া যাত্রীর পাশাপাশি বিশেষ প্রয়োজনে নানা সামগ্রীও বহন করতে চাইলে আপনাকে এমইউভি (মাল্টি-পারপাস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল) কিনতে হবে।
হোমওয়র্কের পালা
• এমন কোম্পানির গাড়ি কিনুন, যে সংস্থার তৈরি গাড়ির মেনটেন্যান্স খরচ কম। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন, পুরনো গাড়ি কিনলে যন্ত্রটির পিছনে যে আপনার খুচরো ব্যয় হবে, এই সত্যটা মাথায় ঢুকিয়ে নিন। তবে সেই খরচের অঙ্কটা যতটা কম রাখা যায়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
• প্রথমেই দেখে নিন গাড়িটি কোন সালে তৈরি এবং কত কিলোমিটার চলেছে। মোটামুটি ভাবে তিন থেকে চার বছরের পুরনো গাড়ি কেনার কথা আপনি ভাবতে পারেন। কত সালে তৈরি এবং এখনও পর্যন্ত কত কিলোমিটার চলেছে, সেই অঙ্কটা একটু কষলেই গাড়িটি রোজ কত কিলোমিটার চলেছে, সেই জরুরি তথ্যটা পেয়ে যাবেন।
• নতুন গাড়িটি কেনার সময়ে ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়া হয়েছিল কি না এবং আগের মালিক সেই ঋণ মিটিয়েছেন কি না, দেখে নিন। প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়েও কথা বলতে পারেন।
• জেনে নিন, ট্রাফিক আইন ভাঙায় গাড়িটির কোনও পেনাল্টি রয়েছে কি না। অনেক ক্ষেত্রে বিক্রির আগে মালিকরা গাড়ির চেসিস নম্বর দিতে চান না। সেটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। ট্রাফিক পুলিশের ওয়েবসাইটে গিয়ে গাড়ির চেসিস নম্বর দিয়ে দেখুন পেনাল্টি রয়েছে কি না।
• ইনশিয়োরেন্স, ট্যাক্স এবং পলিউশন সার্টিফিকেট কবে পর্যন্ত ‘ভ্যালিড’ জেনে নিন। পাশাপাশি যে বিক্রেতার কাছ থেকে গাড়িটি কিনছেন তিনি মালিকানা বদলের ব্যাপারটা সামলে দেবেন কি না, সেটাও জেনে নিন। মনে রাখবেন, সেখানেও কিন্তু ভালই খরচ রয়েছে। গাড়িতে যে ইনশিয়োরেন্স রয়েছে, সেটা ফার্স্ট পার্টি কিংবা থার্ড পার্টি কিনা— তা-ও জেনে নিন।
মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ
• গাড়ির প্রতিটি অংশের রং খুঁটিয়ে দেখুন। অনেক সময়ে বিক্রির আগে গাড়ির মালিক যন্ত্রটির ধাক্কা খাওয়া অংশ রং করিয়ে নেন। এতে অনভিজ্ঞ ক্রেতারা গাড়ির দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার কথা বুঝতে পারেন না। যার ফল তাঁদের ভুগতে হয় গাড়িটি কেনার পর।
• চাকাগুলি ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে, চাকার গ্রিপগুলির অবস্থা নজর করুন। যদি দেখেন, গ্রিপ প্রায় মসৃণ হয়ে গিয়েছে, বুঝে যাবেন গাড়ি যথেষ্টই চলেছে। প্রসঙ্গত, পুরনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ওডোমিটারের কিলোমিটারের হিসেবে আস্থা না রাখাই শ্রেয়!
• গাড়ির নীচের অংশটা খেয়াল করুন। গাড়ির নীচে তেল বা মোবিল পড়ে রয়েছে কি না দেখে নিন। গাড়ির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ওই নীচের অংশেই থাকে। যদি দেখেন, নীচের অংশে মরচে ধরে গিয়েছে বা কোনও অংশ ফেটে গিয়েছে, তা হলে সে গাড়ি না কেনাই ভাল।
• এ বার গাড়িতে স্টার্ট দিন। চাবি ঘোরানোর পরে স্টার্ট নিতে কতটা সময় লাগছে, সেটা আন্দাজ করার চেষ্টা করুন। যদি স্টার্ট নিতে বেশি সময় লাগে, বুঝে যাবেন গাড়ির ব্যাটারির অবস্থা ভাল নয়। এ বার গাড়িটিকে ‘আইড্ল রান’ করিয়ে দেখুন ইঞ্জিন থেকে শব্দ হচ্ছে কি না।
• বনেটটি খুলে চলন্ত ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনুন। কোথাও কোনও সন্দেহ হলে, বিক্রেতার সঙ্গে আলোচনা করুন। মনে রাখবেন, ইঞ্জিনই গাড়ির ‘হৃদ্যন্ত্র’। তাই এখানে কোনও সমস্যা নজরে এলে, তা অবহেলা করবেন না। এ বার গাড়ির এসি চালু করে ফের ইঞ্জিনের সামনে এসে দাঁড়ান। এসি চালালে ইঞ্জিনের আওয়াজ বাড়ে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ আওয়াজ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে বুঝবেন ইঞ্জিনে চাপ পড়ছে।
• সাধারণত গাড়ির এসির ব্লোয়ারে চারটি স্পিড থাকে। দ্বিতীয় স্পিডে এসি চালিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দেখুন, গাড়ির ভিতরটা কতটা ঠান্ডা হচ্ছে।
• টেস্ট ড্রাইভে বেরিয়ে গিয়ার বদলানোর সময়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না দেখুন। সমস্যা হলে বিক্রেতাকে তা বলুন। তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে, গাড়িটি বাতিল করাই শ্রেয়।
• টেস্ট ড্রাইভের সময়ে ছোটখাটো গর্তের উপর দিয়ে চালান। এতে কোথাও কোনও আওয়াজ হলে বুঝতে পারবেন। এর পর সম্পূর্ণ ফাঁকা রাস্তায় গাড়িতে কিছুটা স্পিড তুলে সতর্কতা বজায় রেখেই স্টিয়ারিং থেকে হাত কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে নিন। নজর রাখুন, গাড়িটি রাস্তার কোনও একটি দিকে সরে যাচ্ছে কি না। যদি যায়, তা হলে বুঝতে হবে চাকার ‘অ্যালাইনমেন্ট’ কিংবা স্টিয়ারিংয়ের অ্যাডজাস্টমেন্টে সমস্যা রয়েছে।
• এর পর বনেট খুলে এবং গাড়ির নীচের অংশের চেসিসে কোনও ‘ওয়েল্ডিং স্পট’ রয়েছে কি না দেখুন। থাকলে বুঝবেন, গাড়িটি গুরুতর দুর্ঘটনায় পড়েছিল। সেটা মেরামত করতেই চেসিসে ওয়েল্ডিং করা হয়েছে।
পুরনো গাড়ি কেনার সময়ে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন। অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নিয়েই পুরনো গাড়ি কেনা ভাল। দামী গাড়ি সস্তায় পাওয়ার আশায় ঝট করে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy