Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kali Puja

দেহে করোনার প্রবেশ প্রশস্ত করতে পারে বাজির দূষণ

অনেকে আবার করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে ‘চাবি’র সঙ্গে তুলনা করছেন। আর এসিই২ রিসেপ্টরকে ‘তালা’র সঙ্গে।

বিপদ: বাজির দূষণের জেরে আরও বিপজ্জনক হবে কোভিডের রূপ, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ফাইল চিত্র

বিপদ: বাজির দূষণের জেরে আরও বিপজ্জনক হবে কোভিডের রূপ, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৬:০৩
Share: Save:

করোনা-কালে বাজির দূষণের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে বলে বার বার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, বাজি থেকে নির্গত দূষিত পদার্থ যে শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তার উপরে দূষিত বায়ুর সৌজন্যে এমনিতেই ফুসফুসের অবস্থা খারাপ থাকে। ফলে দুর্বল ফুসফুস, বাজির দূষণ ও করোনা সংক্রমণ— এই ত্র্যহস্পর্শের জেরে এ বছর কালীপুজোয় পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, যে ‘পথ’ দিয়ে সার্স-কোভ ২ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে, দীর্ঘদিনের বায়ুদূষণ সেই ‘পথ’-কেই আগে থেকে প্রশস্ত করে রাখে। ফলে করোনাভাইরাসের শরীরে ঢোকাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বাজির দূষণ ‘অনুঘটক’-এর কাজ করবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

কী ভাবে করোনা সংক্রমণ ও বাজির দূষণ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

ব্যাখ্যা করে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ২০০২ সালে যখন সার্স-কোভ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল, তখন সেই ভাইরাস মানবশরীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নাসারন্ধ্র ও ফুসফুসের কোষের উপরিভাগে উপস্থিত ‘অ্যাঞ্জিয়োটেনসিন কনভার্টিং এনজ়াইম-টু’ (এসিই২) নামে একটি ‘রিসেপ্টর’-কে ‘টার্গেট’ করেছিল। এই রিসেপ্টর মূলত শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, দূষিত বায়ুর বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করা-সহ অন্য কাজ করে। সার্স-কোভ ভাইরাস নিজের স্পাইক প্রোটিন দিয়ে এই এসিই২ রিসেপ্টরের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করেছিল। সার্স-কোভ ২ ভাইরাসও সেই একই পথ ধরেছে। তবে তা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর চেহারায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘এসিই২ রিসেপ্টরের মাধ্যমে করোনা শরীরে ঢোকে। বায়ুদূষণ সেই প্রবেশের পথকে আগে থেকেই প্রশস্ত করে রাখে। তার সঙ্গে বাজির দূষণ যোগ হলে তার ফলাফল কী হতে পারে, তা এত দিনের বিপর্যয় দেখার পরে না বোঝার কথা নয়।’’

অনেকে আবার করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে ‘চাবি’র সঙ্গে তুলনা করছেন। আর এসিই২ রিসেপ্টরকে ‘তালা’র সঙ্গে। এই তালা-চাবির ভারসাম্যের উপরেই করোনা সংক্রমণ ও তার প্রাবল্য অনেকটা নির্ভর করে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এখন যে হেতু এসিই২ দূষিত বায়ুর বিষক্রিয়া থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করে, তাই দেখা গিয়েছে যে, দীর্ঘ দিন ধরে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে ফুসফুসকে রক্ষা করার জন্য এসিই২-এর সংখ্যাও বেড়ে যায়। অর্থাৎ, সার্স-কোভ-২-এর শরীরে ঢোকার রাস্তার সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সার্স-কোভ ২ ভাইরাস শরীরে ঢোকার পরে নিজের স্পাইক প্রোটিনকে চাবির মতো ব্যবহার করে এসিই২-কে তালার মতো খুলে ফেলে। তার পরে শরীরের কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ফলে এসিই২-এর সংখ্যা, অর্থাৎ তালার সংখ্যা বেড়ে গেলে ভাইরাসের পক্ষে শরীরে ঢোকা আরও সহজ হয়ে যায়। বিশ্বরূপবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন এসিই২-এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ফুসফুস ও শরীরের অন্য কোষ ক্রমশই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।’’

দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এসিই২-র সংখ্যা বাড়লে বেশি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং দ্রুত ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন রোগের প্রাবল্যও বেড়ে যায়।’’ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স’-এর এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে বাজির দূষিত পদার্থ ধোঁয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই এ বছর কোনও রকম বাজি না পোড়ানোই সবার জন্য ভাল।’’

কিন্তু তা ভাল হলেও কেউ শুনবেন কি, সেই সংশয় থাকছেই!

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puj Firecracker Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy