Advertisement
E-Paper

হালের নন্দিনী-সৌরভ, না সাবেক পারিজাত? ভাইয়ের কপালে ফোঁটার সময়ে মিষ্টিমুখ হবে কী দিয়ে?

ভাইফোঁটার সঙ্গে মিষ্টির যুগলবন্দি টেক্কা দিতে পারে রবিশঙ্কর-আল্লারাখা জুটিকেও। এ বার ভাইবোনের আদর-আপ্যায়নের কোন কোন মিষ্টি চলছে বাজারে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

ভাইফোঁটার দিন সকাল থেকেই শুরু হয় রকমারি মিষ্টি কেনা।

ভাইফোঁটার দিন সকাল থেকেই শুরু হয় রকমারি মিষ্টি কেনা। ছবি: শাটরস্টক

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ১০:২৪
Share
Save

বাঙালির মতো মিষ্টান্নবাদী জাতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে কি না সন্দেহ। ভাইফোঁটার দিন তো আরও স্পষ্ট ভাবে ঠাহর করা যায় সে কথা। মিষ্টির হাঁড়ি ছাড়া যেমন ভাইয়েরা দিদির বাড়ি ঢুকতে পারেন না, তেমনই তৈরি থাকেন বোনেরাও। ডায়াবিটিস যেন ওই দিন ছুটি কাটাতে বিদেশ যায়।

দমদমে নাগেরবাজারের বিশ্বাসবাড়িতে ভাইফোঁটার দিন একসঙ্গে হাজির হন ৪ বোন রমলা, রেবা, রুপা ও রত্না। ভাই মোটে এক জন। তা-ও বয়সে সকলের ছোট। দিদিদের আনা মিষ্টি বোমারু বিমানের গোলার মতো পাতে পড়ে। বলছিলেন ভাই রত্নদীপ বিশ্বাস। ৪ দিদি ৮ রকম মিষ্টি আনেন প্রতি বছর। তা-ও একই মিষ্টি যেন দু’বার না হয়ে যায়, সে দিকেও নজর রাখতে হয়। এ যেন অলিখিত এক প্রথা।

একই রকমের ঘটনার কথা শুনতে পাওয়া যায় বাংলার বিভিন্ন প্রান্তেই। ভাইফোঁটার দিন সকাল থেকেই মিষ্টির দোকানের সামনে ভিড় দেখে মনে হতে পারে যেন রাজনৈতিক দলের মিছিল। এ বছর বাজারে নতুন কী এল, তা নিয়ে যেমন উৎসাহের কমতি নেই, তেমনই কিছু কিছু মিষ্টি জড়িয়ে রয়েছে ভাইবোনেদের ছোটবেলার স্মৃতির সঙ্গেও। তাই মিষ্টির ক্ষেত্রেও নবীন-প্রবীণ দু’রকমই থাকছে বাজারে।

‘‘ভাইফোঁটার দিন অন্তত আশি রকম সন্দেশ থাকবে দোকানে,’’ বলছিলেন শহরের এক অতি পরিচিত মিষ্টি বিপণির কর্তা সন্দীপ সেন। ৭০ ছুঁইছুঁই সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘সব রকম সন্দেশের তো নাম দেওয়া সম্ভব হয় না, তবে পরমা, মনোহরা, মনমাতানো বলে বেশ কিছু সন্দেশ খুবই পছন্দ করেন ক্রেতারা। এ বছর সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘ইন্দ্রাণী’ ও ‘নন্দিনী’ নামের দু’টি নতুন মিষ্টি।’’ আর তাঁদের ভান্ডারে রয়েছে মোক্ষম একটি অস্ত্র, গুড়ের শাঁখ সন্দেশ। ভাইয়ের পাতে সেই সন্দেশ দিতে চাইলে বরাত দিতে হবে আগে থেকে। এক একটি সন্দেশের দাম পড়বে ৮০০ টাকা।

চিরাচরিত স্বাদের বাইরেও ক্রমাগত নজর টানছে নতুন নতুন ফ্লেভারের সন্দেশ।

চিরাচরিত স্বাদের বাইরেও ক্রমাগত নজর টানছে নতুন নতুন ফ্লেভারের সন্দেশ। ছবি: সংগৃহীত

চিরাচরিত স্বাদের বাইরেও ক্রমাগত নজর টানছে নতুন নতুন ফ্লেভারের সন্দেশ। বাটার স্কচ, কফি, ডার্ক চকোলেটের মতো স্বাদের সন্দেশ ভালই বিকোচ্ছে। হেদুয়ায় ৫৬, রামদুলাল সরকার স্ট্রিটে বেথুন কলেজের কাছে রয়েছে উত্তর কলকাতার শতাব্দীপ্রাচীন মিষ্টির ঠিকানা। কর্তা প্রজেশ নন্দী জানান, তাঁরা সন্দেশ ছাড়া আর কিছু রাখেন না, তাই সন্দেশের জোরেই যাতে ভাইয়ের পাত ভরিয়ে দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে থাকছে কাঁচাগোল্লা, গোলাপি প্যাঁড়া, সৌরভ সন্দেশ, লেবু সন্দেশের মতো মিষ্টি। তবে ফ্লেভারে কিন্তু এখনও সবার রাজা গুড়। তাই গুড়ের তৈরি হরেক রকমের সন্দেশ রাখছেন তাঁরা। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি চেখে দেখার প্রবণতা অনেকটাই বেশি বলে জানান তিনি। বললেন, ‘‘এখন কেউ কেউ একসঙ্গেই সাবেকি কাঁচাগোল্লা নিচ্ছেন, আবার বাটারস্কচ সন্দেশও কিনছেন।’’

নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি চেখে দেখার প্রবণতা অনেকটাই বেশি।

নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি চেখে দেখার প্রবণতা অনেকটাই বেশি। ছবি: সংগৃহীত

তবে বাহারি মিষ্টি মারমুখী ব্যাটিং করলেও উইকেটের অন্য প্রান্তে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো পিচ আঁকড়ে ধ্রুপদী কায়দায় অবিচল রয়েছে খাজা, গজা ও ভাইফোঁটা সন্দেশ। প্রতি বছরই এই মিষ্টিগুলি বেশি করে তৈরি করতে হয় ভাইফোঁটার সময়, বলছিলেন ধর্মতলার একটি মিষ্টির দোকানের অপারেশন ম্যানেজার (শপ) অতনু ভট্টাচার্য। একই মত সন্দীপ সেনেরও। আনুষঙ্গিক মিষ্টি যা-ই থাকুক, এক জন ভাই থাকলেও একটি অন্তত খাজা নেবেনই, এমন মানুষও প্রচুর আছেন বলে জানান তিনি।

ডায়াবিটিস থাকলেও যাতে ‘এক দিন খেলে কিছু হবে না’-র ফাঁদে পা দিতে ভাইদের দ্বিধা না থাকে, তাই ডায়াবেটিক সন্দেশ রাখছেন অধিকাংশ মিষ্টি বিক্রেতাই। পাশাপাশি, চিনি ব্যবহারেও লাগাম টানা হয়েছে। প্রজেশ নন্দী বলেন, আমাদের সন্দেশে এমনিতেই মিষ্টি কম দেওয়া হয়। তাই বেশি দিন রেখে সেই মিষ্টি খেতে পারবেন না। দিনেরটা দিনেই খেতে হবে।

কিছু কিছু মিষ্টি জড়িয়ে রয়েছে ভাইবোনেদের ছোটবেলার স্মৃতির সঙ্গেও।

কিছু কিছু মিষ্টি জড়িয়ে রয়েছে ভাইবোনেদের ছোটবেলার স্মৃতির সঙ্গেও। ছবি: সংগৃহীত

তবে অনেকের কাছেই ভাইফোঁটা কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার দিনও বটে। জুড়ে থাকে শৈশবের স্মৃতিও। সেই অতিতচারিতাকে উস্কে দিতেও বিশেষ বিশেষ দোকানের কিছু বিশেষ বিশেষ মিষ্টির জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন দোকানের নিজস্ব এমন কিছু মিষ্টি থাকে, যেগুলি ওই দোকানের সঙ্গে প্রায় সমার্থক। ‘‘অনেক সময়ে দেখা যায় ভাই বলেন, আমি ভিক্টোরিয়া (বা পারিজাত) সন্দেশ খাব, প্যারাডাইস সন্দেশ খাব বা নেহেরু সন্দেশ খাব। কেউ কেউ আবার বলেন, রাম বোঁদে খাব। তাই দিদি কিংবা বোনেরা চেষ্টা করেন আগেভাগেই সে সব মিষ্টি কিনে রাখার’’, বললেন সুপ্রভাত দে। তাঁর দাবি, চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তৈরি থাকেন তাঁরাও।

বউবাজারে ৯ বি, নির্মল চন্দ্র স্ট্রিটের একটি শতাব্দীপ্রাচীন মিষ্টির দোকানের কর্ণধার সুপ্রভাতবাবু জানান, ভাইফোঁটার দিন অন্তত পাঁচশো কেজি সন্দেশ বানাতে হয় তাঁদের। কোভিডের পর এ বছরই পুরোদমে পালন করা সম্ভব হচ্ছে ভাইফোঁটা। তাই বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়া ভাল লক্ষণ। সন্দীপ সেন বা প্রজেশ নন্দী, সকলের মুখে একই কথা। ২০১৯ থেকে কোভিডের কারণে যে ধাক্কা লেগেছিল, এ বছর অনেকটাই বদল হয়েছে সেই পরিস্থিতিতে, জানান দু’জনেই।

শুধু কোভিড পরিস্থিতি নয়, বদল এসেছে ফোঁটা দেওয়ার রীতিতেও। অলিভিয়া, সিলভিয়া দুই বোন। এখন এক জন থাকেন কৃষ্ণনগরে, অন্য জন বারাসতে। দু’জনেই কয়েক বছর আগে সিদ্ধান্ত নেন পরস্পরকে ফোঁটা দেবেন। তাঁদের সাফ কথা, ‘‘ভাই নেই বলে কি ভাইফোঁটার দিন নিরাড়ম্বর ভাবে কাটাব? তাই প্রতি বছর বোনফোঁটার আয়োজন করি আমরা।’’ তবে বোনের পাতে কী মিষ্টি দেবেন, তা জানতে চাইতেই মুখে কুলুপ দুই বোনের। জানান, আগে থেকে বলে দিলে তো চমকই থাকবে না। বিশেষ মিষ্টি প্রতি বারই থাকে অনুষ্ঠানের অনুষঙ্গ হয়ে। আর এমন অনেকের জন্যই প্রতি বার নতুন নতুন বন্দোবস্ত করার পরিকল্পনা করেন মিষ্টি বিক্রেতারা।

Bhai Phonta 2022 Sweets Kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}