সূর্যের আলোই ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস, এ কথা কমবেশি সকলেই জানেন। কিন্তু গ্রীষ্মের তীব্র তাপে, ভুল সময়ে বাইরে বেরোলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। সানস্ট্রোক থেকে শুরু করে ত্বক পুড়ে যাওয়া, হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে গ্রীষ্মমণ্ডলের দেশে। তাই দিনের কোন সময় বেরোলে অন্য কোনও ক্ষতির চিন্তা থাকবে না, অথচ ভিটামিন ডি-ও শরীরে প্রবেশ করবে? আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আলোচনা করলেন কলকাতা শহরের দুই চিকিৎসক।
ভিটামিন ডি অপরিহার্য কেন?
প্রথমেই জানতে হবে, ভিটামিন ডি স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য কেন। ভিটামিন ডি-র ফলেই শরীর ক্যালশিয়াম শোষণ করে হাড়কে শক্তিশালী করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকি, মনমেজাজ ভাল রাখে। এই ভিটামিনের অভাবে অবসাদের মতো মানসিক রোগও দেখা দেয়। পেশির কার্যকারিতা বাড়িয়ে সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন ডি। কিন্তু অনেকেই নিজের অজান্তে এই ভিটামিনের ঘাটতিতে ভুগছেন।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা সময় কোনটি
দিনের যে সময়টিতে সূর্যের আলো থেকে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি পাওয়া যেতে পারে, তা হল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। সূর্যের রশ্মি ওই সময়ে সবচেয়ে শক্তিশালী থাকে। অর্থাৎ ইউভিবি (অতিবেগনি বি রশ্মির বিকিরণ) সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
অস্থিরোগ চিকিৎসক আরণ্যক সরকার বললেন, ‘‘সেরা সময় সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টো হলেও ভরদুপুরে আমাদের মতো দেশে বাইরে বেরোনো উচিত নয়। চিকিৎসকেরাই গ্রীষ্মের এই সময়ে ঘরের বাইরে বেরোতে নিষেধ করেন। তাই তুলনায় কম ভিটামিন ডি পাওয়া গেলেও সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টার সময়টিই গরমকালের জন্য উপযুক্ত। শরীরকে ভিটামিন ডি-র জোগান দিতে হলে এই সময়ে বাইরে বেরোতে পারেন। শরীরের ১৫ শতাংশ উন্মুক্ত রাখবেন। অর্থাৎ মুখ এবং দুই হাতই যথেষ্ট।’’

গ্রীষ্মের তীব্র তাপে, ভুল সময়ে বাইরে বেরোলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। ছবি: সংগৃহীত।
চর্মরোগ চিকিৎসক ইসমত আরা খানের কথায়, ‘‘কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সপ্তাহে দু’বার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ৫-৩০ মিনিট ধরে সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকলে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তবে চর্মরোগ চিকিৎসক হয়ে আমরা কখনওই এই সময়ে বাইরে বেরোনোর পরামর্শ দিই না। বেরোলেও সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে না থাকাই ভাল। কারণ ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ এবং সাপ্লিমেন্ট হয়। সরাসরি সূর্যালোক ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। যে সব দেশে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে তো সূর্যালোক মোটেও উপকারী নয়। তবে যদি ওষুধে কাজ না হয়, তা হলে অবশ্যই সূর্যালোকের প্রয়োজন।’’
ইসমত আরা খানের পরামর্শ, যেই সময়ে ভিটামিন ডি জোগানের জন্য বাইরে যাচ্ছে মানুষ, তখন কোনও ভাবেই সানস্ক্রিন লাগানো যাবে না। এসিপএফ যদি ৮-ও হয়, তা হলেও অতিবেগনি রশ্মিকে আটকে দেবে। তা হলে আর লাভ হবে না।