Advertisement
E-Paper

বাঙালিয়ানা প্রমাণের দায় বাড়িয়েছে সমাজমাধ্যম! পয়লা বৈশাখ এখন প্রায় দুর্গাপুজো, লিখলেন অভিনেত্রী

শৈশবের পর যৌবন ও প্রাপ্তবয়সে যে বৈশাখ উদ্‌যাপন দেখেছি, তার ধরনেও বদল। কিন্তু এ সবের সঙ্গে বার্ধক্যের পয়লা বৈশাখের কোনও মিল নেই। হঠাৎ করে তা হলে কী এমন হল গত কয়েক দশকে?

Bengali veteran actress Lily Chakraborty pens down her memories of Poila Baishakh

‘আমাদের সময়ে ১ জানুয়ারি নিয়ে মাতামাতি ছিল না, বরং কেবল পয়লা বৈশাখকেই বর্ষবরণ হিসেবে মেনে নিয়েছিল বাঙালি।’ গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

লিলি চক্রবর্তী

লিলি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১০:১০
Share
Save

নতুন পোশাক। তিনের বদলে পাঁচ পদ রান্না। দোকানে দোকানে হালখাতা। ও পার থেকে এ পার বাংলা, এমনকি মধ্যপ্রদেশেও এ ভাবে বৈশাখের প্রথম দিনটি পালন করতে দেখেছি মাকে। ছিমছাম, অথচ ঘটনাবহুল। তার মাঝে গিয়ে পড়তাম আমরা, ছোটরা। হইহুল্লোড়, কোলাকুলি, প্রণামের ঢল পড়ে যেত। কিন্তু যা হত, বাড়ির ওই চার দেওয়ালের মধ্যেই। শৈশবে পয়লা বৈশাখ কাটত এমন করেই। জীবনের শেষবেলায় এসে দেখছি, পয়লা বৈশাখ যেন দুর্গাপুজোরই ছোট রূপ। এত ভিড়, এত ছবি, এত ভিডিয়ো! কই, এ সব ছাড়াও তো আনন্দ কম পড়েনি আমাদের।

শৈশবের পর যৌবন ও প্রাপ্তবয়সে যে বৈশাখ উদ্‌যাপন দেখেছি, তার ধরনে বদল এসেছিল। কিন্তু এ সবের সঙ্গে বার্ধক্যে এসে দেখা পয়লা বৈশাখের কোনও মিল নেই। হঠাৎ তা হলে কী এমন হল?

ইন্টারনেট এল। আর তাতেই সব ওলটপালট হয়ে গেল। সমাজমাধ্যমের দৌরাত্ম্যে বাঙালির বাঙালিয়ানা প্রমাণের দায় বেড়ে গিয়েছে যেন। সময়কে বদলাতে দেখেছি অনেক বার। কিন্তু এই বদলটায় সবচেয়ে বেশি চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছে। এখন পয়লা বৈশাখে অনেক বেশি রং, অনেক বেশি জাঁকজমক। আগে ঘটনা অনেক বেশি ছিল, কিন্তু ঘটা কম ছিল।

মায়ের কাছে শুনেছি, ঢাকায় আমাদের বাড়িতে রীতি-প্রথা পালনের রেওয়াজ ছিল। পরে যখন মধ্যপ্রদেশে গিয়ে কৈশোর জীবন কাটালাম, তখনও মা ছোট করে পালন করার চেষ্টা করতেন। দেশভাগের পর তখন আমাদের প্রবল আর্থিক অনটন। সমস্ত জমিজমা, সোনাদানা রেখে ভিটে ছেড়ে আসি আমরা। মধ্যপ্রদেশে গিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করেও সফল হননি বাবা। গরিবের ঘরে যতটুকু সম্বল, পয়লা বৈশাখে তা দিয়েই মা বাড়িতে সেলাই করে নতুন জামা বানিয়ে দিতেন। রান্নায় ওই একটি দিন হয়তো একটু বেশি ফোড়ন পড়ত। অতিথি এলে একটি মিষ্টির পদ বানিয়ে খেতে দেওয়া হত।

Bengali veteran actress Lily Chakraborty pens down her memories of Poila Baishakh

সে কালের পয়লা বৈশাখ। ছবি: সংগৃহীত।

পরে যখন আমার নিজের সংসার হল, মায়ের অভ্যাস জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। তবে, খুব তাড়াতাড়ি ছবির জগতে পা রেখে ফেলায় পয়লা বৈশাখের দিনে ছুটি পেতাম না। ছুটির দিন ডাবল শো দেখানো হতো। স্টার থিয়েটারে গিয়ে সকলের সঙ্গে দেখা করা, ছবি বিশ্বাস, কমল মিত্র, অনুপ কুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অপর্ণা দেবীর মতো ব্যক্তিত্বদের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়া, হয়তো নতুন একখানি শাড়ি ভাঙা, যৌবনের বৈশাখবরণ এমন ভাবেই কাটত। তখন থিয়েটারের দিনে ওই সব জায়গা মানুষের ভিড়ে গিজগিজ করত। এখন এমন বিশেষ দিনগুলিতে থিয়েটারগুলির পাশ দিয়ে গেলে কান্না পায় আমার। কিছুই আর নেই!

পয়লা বৈশাখ আসলে আমাদের ছবির জগতে খুব শুভ মনে করা হত। ডাবল শো ছাড়াও ছবির শুভ মহরতগুলি ওই দিনেই আয়োজন করা হত। ছোট করে পুজো করে সিনেমার কোনও একখানি দৃশ্য শুট হত বৈশাখের শুরুর দিনে। এখন তো শুভ মহরতের বালাই দেখি না ইন্ডাস্ট্রিতে।

Bengali veteran actress Lily Chakraborty pens down her memories of Poila Baishakh

এ কালের পয়লা বৈশাখ। ছবি: সংগৃহীত।

আমাদের সময়ে ১ জানুয়ারি নিয়ে মাতামাতি ছিল না, বরং কেবল পয়লা বৈশাখকেই বর্ষবরণ হিসেবে মেনে নিয়েছিল বাঙালি। কিন্তু এখন তো দেখি, ১ বৈশাখও যা, ১ জানুয়ারিও তা-ই। তাতেও ক্লান্তি নেই কারও। দু’দিনই একই রকম গুরুত্ব পায়। একই রকম মাতামাতি, একই রকম ভিড় রাস্তায়।

সেই সময়ে কলকাতার রাস্তাঘাট এই পরিমাণে উৎসবের ভার বহন করত না। মনে পড়ে, সেটা ছিল অফিস-দিন, বাবা আমাকে টালিগঞ্জে শুটিংয়ে রেখে খানিক ক্ষণের বাড়ি গিয়েছিলেন একটি কাজে। গাড়ি করে স্টুডিয়োপাড়া থেকে উল্টোডাঙা পৌঁছে গিয়েছিলেন মাত্র ১৫ মিনিটে, আবার ফিরেছিলেন ওই একই সময়ের মধ্যে। এখনকার ছেলেমেয়ের কাছে এই গল্প করলে বিশ্বাসই করতে চায় না। করবেই বা কী ভাবে? এখন তো শহরের রাস্তায় হাঁটারও জায়গা থাকে না। ছুটির দিনে বাড়ি থেকে বেরোনোটাই কেবল উৎসব পালন। আর সবাই জড়ো হন রাস্তায়। উপায়ও তো নেই। সারাটা বছর তো অফিসের চার দেওয়ালে বন্দি থাকতে হয় ছোটদের। তাই নামমাত্র ছুটি পেলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সকলে। রেস্তরাঁ, পার্ক, কফিশপে বসে সময় কাটিয়ে আবারও বন্দিজীবনে ফেরা।

আমাদের পয়লা বৈশাখগুলির কোনও প্রমাণ নেই। কারণ ফ্রেমবন্দি করার কোনও উপায় ছিল না। পয়লা বৈশাখ আসলে আমাদের কাছে ঘরোয়া উৎসব ছিল। আর তাই ‘ঘরের কথা বাইরে বলা’র প্রসঙ্গও উঠত না। সমাজমাধ্যম ছিল না বলে সেটির অবকাশও ছিল না। আনন্দের দিন বটে, কিন্তু বহরটা বড়ই ছিমছাম। এখন আনন্দ কতখানি জানি না, তবে বাঙালিয়ানার প্রকাশ ষোলো আনা।

সংক্ষেপে
  • পয়লা বৈশাখ মানেই বাঙালির বাঙালিত্বের উদ্‌যাপন। সাদা-লাল শাড়ির ফ্যাশন, বাঙালি খাওয়া-দাওয়া, হালখাতা— এই সবই জাগিয়ে তোলে বাঙালির স্মৃতিমেদুরতাকে।
  • বছর ঘুরে আবার আসছে বাংলার নববর্ষ। ১৪৩২ আরও অনেক নতুন কিছু নিয়ে আসবে। নববর্ষকে কী ভাবে স্বাগত জানাবে বাঙালি? তারই হাল হদিস।
Lily Chakraborty Poila Boisakh Lily Chakraborty on Poila Baishakh Bengali actress Lily Chakraborty Poila Baishakh memory

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।