বহু যুগ ধরেই রূপ-রুটিনে নিজের জায়গাটি পাকা করে রেখেছে কোল্ড ক্রিম। মা-ঠাকুমাদের আমলে তো রূপ-যৌবন ধরে রাখতে অ্যান্টিএজিং নাইট ক্রিম হিসেবে কোল্ড ক্রিমের কৌটোর উপরেই ভরসা রাখা হত। প্রায় দু’হাজার বছর আগে রোমের এক চিকিৎসক গলানো মোম আর জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে কোল্ড ক্রিম তৈরি করেন। তার পরে বহু দিন ধরে কেমিস্টরা নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে কোল্ড ক্রিম আরও উন্নত করেন। শোনা যায়, মেরিলিন মনরো পর্যন্ত ত্বকের কোমলতা ও ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করতেন। আধুনিক কোল্ড ক্রিমের মূল উপাদান মোম, জল, ভেষজ তেল। ফলে, এই প্রডাক্ট ত্বকের জলীয় ভাব ধরে রাখতে পারে। তাই শীতপ্রধান দেশে ও ভারতের মতো ক্রান্তীয় আবহাওয়ায় শীতের মরসুমে এর ভীষণ কদর। ত্বকে এর প্রলেপ পড়লেই, জলীয় উপাদানের জন্য আলতো ঠান্ডা ভাব টের পাওয়া যায়, তাই এই ক্রিমের নাম কোল্ড ক্রিম।
রুক্ষ ত্বকে বিশেষ কার্যকর
শীত এলেই ত্বক শুকিয়ে যাবে, যত্ন না করলে ফাটবে। খুব শুষ্ক ত্বকে খোসার মতো ত্বকের পাতলা পরতও উঠে যেতে পারে। কোল্ড ক্রিম এই সব সমস্যার দাওয়াই। এতে জল আর তেল মোটামুটি সমান পরিমাণেই থাকে। ফলে ত্বক জলীয় অংশ শুষে নিয়ে আবার শুষ্ক হয়ে যায় না। বরং উপরের পরত ভেদ করে ভিতরে পৌঁছে যায় সহজেই। এতে ময়শ্চারাইজ়ারের চেয়েও ভাল কাজ হয়।
কোল্ড ক্রিমকে রুক্ষ, শুষ্ক আবহাওয়ার ন্যাচারাল গার্ড বলা হয়। পরিচিত কোল্ড ক্রিমগুলিতে এখন বিশেষ অনুপাতে সূর্যমুখীর তেল ও স্কিন লিপিড মিশিয়ে দেওয়া হয়। এগুলি খসখসে ত্বক মেরামত করে মোলায়েম করে। ত্বকে চকচকে আভাও ফুটে ওঠে।
খুব শুষ্ক, খোসা ওঠা ত্বকের সমস্যাও চটপট সারিয়ে দেয় কোল্ড ক্রিম। কোনও কারণে ত্বকে জ্বলুনি, লালচে ভাব দেখা দিলেও কোল্ড ক্রিম লাগালে উপকার পাবেন। কোল্ড ক্রিম ত্বকের জন্য বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ঠাসা। তাই বয়সের রেখা, চোখের নীচের ভাঁজ দেখা দিলে, প্রাথমিক ভাবে সেগুলি মেরামত করতেও সাহায্য করে বলে প্রস্তুতকর্তাদের দাবি।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন
কোল্ড ক্রিমের মস্ত বড় সুবিধে হল, এগুলি সাধারণত সব ধরনের ত্বকেই কাজ দেয়। তবে, যাঁদের ত্বক খুব বেশি তৈলাক্ত, অ্যাকনের সমস্যা আছে তাঁরা সালফেট ও খনিজ তেল যুক্ত কোল্ড ক্রিম এড়িয়ে চলবেন।
কোনও ভাবেই নাইট ক্রিমের পরিবর্ত হিসেবে কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করবেন না। কোল্ড ক্রিম মেখে বাইরে না বেরোনোই ভাল। কারণ এই ক্রিম ভীষণ বেশি পরিমাণে ধুলোকণা শুষে নেয়। শীত কালের শুষ্ক আবহাওয়ায় আমাদের বারবার ত্বক ময়শ্চারাইজ় করার দরকার পড়ে। অতএব, এক বেলার রূপরুটিনে কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করুন। যেমন বাড়িতে থাকলে বিকেলে মুখ ক্লেনজ়ার দিয়ে পরিষ্কার করে, টোনিংয়ের পর কোল্ড ক্রিম লাগাতে পারেন। আবার বাইরে থেকে ফিরে আসার পর যখন মুখ পরিষ্কার করছেন, তখনও কোল্ড ক্রিম লাগানো যায়।
অনেকেই শীতের রাতের রূপচর্চার রুটিনে এক দিন কোল্ড ক্রিম, পরের দিন রেটিনল সমৃদ্ধ অ্যান্টি এজিং প্রডাক্ট ব্যবহার করেন। তাঁদের কথায় এই কম্বো পরিচর্যায় ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বহু গুণে বাড়ে।
মিনিমালিস্ট লুকে আদর্শ
কোল্ড ক্রিম সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। ছেলেরা তখন যুদ্ধে গিয়েছেন। মেয়েরা ধীরে ধীরে কর্মজগতে প্রবেশ করছেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে দেখা গেল, মেয়েরা ঘরে-বাইরে সামলাচ্ছেন সমান তালে। বাইরের আবহাওয়া, কর্মজগতের ক্লান্তি, চিন্তা... সৌন্দর্যে যাতে রুক্ষতার ছাপ না ফেলে, তার জন্য তাঁরা কোল্ড ক্রিমের যত্নে আস্থা রেখেছিলেন। পরে অবশ্য তাঁদের ভ্যানিটি ব্যাগে, ড্রেসিং টেবলে অন্য নানা ক্রিম, লোশন, প্রসাধনীও জায়গা করে নেয়।
কোল্ড ক্রিমের দাপট কিন্তু আবার ফিরছে। কারণ, এখন মিনিমালিজ়মের যুগ। মেকআপেও অল্প প্রসাধনীর ছোঁয়ায় স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরও বেশি পরিস্ফুট করে তোলাই ট্রেন্ড। তাই ঘরোয়া সান্ধ্য সাজে কোল্ড ক্রিমের ব্যবহার বাড়ছে। নিজের শীতকালীন রূপচর্চা, সাজগোজে কোল্ড ক্রিম অবশ্যই রাখুন, ত্বকে নজরকাড়া ঔজ্জ্বল্য থাকবে। আর আপনি থাকবেন যখন-তখন পার্টি রেডি।
মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
ছবি: জয়দীপ মণ্ডল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy